সংবাদপত্র হচ্ছে সমাজের চতুর্থ স্তম্ভ। এই চতুর্থ স্তম্ভ (সাংবাদিকরা) যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে, তাহলে রাষ্ট্রের বাকি তিন স্তম্ভ (আইন সভা, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগ) সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে থাকে। আবার যদি এই উল্লেখিত তিন স্তম্ভের (আইন সভা, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগ) ভালো কাজ, ভুল-ত্রুটি সংবাদমাধ্যম তুলে ধরে বা তুলে ধরতে বাধাপ্রাপ্ত হয় তাহলে রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়।
মূলত বলতে গেলে, একই সঙ্গে ব্যাপক সংখ্যক জনগণের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যম কে গণমাধ্যম বলা যায় বা গণমাধ্যমকে জনসংযোগের উপায় হিসেবে ও বিবেচনা করা হয়। বর্তমান বিশ্বে প্রচারিত গণমাধ্যমের মধ্যে জনপ্রিয় অনলাইন মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া গণমাধ্যম হিসেবে ভূমিকা রাখছে। এসব গণমাধ্যমের ফলেই খুব সহজেই এবং অল্প সময়ের মধ্যে সারাবিশ্বে সংবাদ আদান প্রদানে করা যায়। তাছাড়াও গণমাধ্যম শিক্ষা ও শুদ্ধ ভাষা শিক্ষার ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে।
আমি মনে করি- গণতন্ত্র, সুশাসন ও উন্নয়নের সাথে গণমাধ্যমের নিবিড়তম সম্পর্ক রয়েছে। সঙ্গত কারণেই আধুনিক গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। মূলত সংবাদপত্র আর সংবাদকর্মীর মাধ্যমে জনগণের আশা-আকাঙ্খা, চাহিদা, জনমত সৃষ্টি ও সমাজের ভালোমন্দের প্রতিফলন ঘটে। তাই আধুনিককালে গণযোগাযোগ এবং সাংবাদিকতাকে উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রতিনিধিও বলা হতো। আমার দেখা চোখে গণমাধ্যম বর্তমানে শিক্ষা, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, রাজনীতি, চিকিৎসা, প্রযুক্তি, আইসিটি, চাষাবাদ, ক্রয়-বিক্রয় থেকে শুরু করে নাগরিক জীবনের প্রয়োজনীয় সব চাহিদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় অগ্রদূতের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। সাংবাদিকতা না থাকলে সমাজে ভারসাম্য থাকতো না।
কিন্তু নেতিবাচক ও গন্তব্যহীন কিছু অসৎ লোকের কারণেই আমাদের দেশে রাষ্ট্রের এই অতি গুরুত্বপূর্ণ পথচলার বিঘ্ন ঘটায়। প্রতিটি জাতি রাষ্ট্রেই সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অগ্রগতি মূল্যায়নের মানদন্ড হলো উন্নয়ন। তবে এ ক্ষেত্রে নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক অর্জনের পেছনে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে এবং এখনো রাখছে বলে আমি মনে করি।
নানা বাধা-প্রতিবন্ধকতা ও সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও দেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক অর্জনের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। মূলত গণমাধ্যম জাতীয় উন্নয়ন, গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সুশাসনের জন্য শক্তিশালী ও সহায়ক অনুষঙ্গ। তাই শৃঙ্খলিত গণমাধ্যম নয় বরং স্বাধীন গণমাধ্যমই পারে আমাদের দেশ ও জাতিকে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কার্যকর ও উপযোগী করে গড়ে তুলতে। গণমাধ্যম জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, ঘুষ-দুর্নীতি, অনিয়ম, ব্যাংক ডাকাতি, শেয়ারবাজার লুট, নারীর প্রতি সহিংসতা, ধর্ষণ, যৌননিপীড়ন, শিশু নির্যাতন, পাপাচার, ব্যভিচার, জুলুম নির্যাতন রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে চিত্র তুলে ধরছে।
গণমাধ্যম হলো রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। রাষ্ট্রের অন্য তিনটি স্তম্ভ যদি দুর্বল হয়ে যায় সেক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যম সেগুলোকে প্রভাবিত করে এবং সুষ্ঠুভাবে চলতে পথ প্রদর্শন করে। তাই রাষ্ট্র সঠিকভাবে পরিচালিত হবার জন্য সংবাদমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একজন সংবাদকর্মী সমাজ, দেশ ও জাতির সেবা করে থাকে। একটি সংবাদ প্রকাশে দেশ ও জাতির যেমন কল্যাণ হতে পারে ঠিক তেমনি একটি সংবাদই পারে দেশ ও জাতিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে। তাই সাংবাদিকদের প্রচুর অধ্যয়ন করতে হবে। একজন মানুষ মেধাবী হতে পারে, তবে পড়াশোনা একজন মানুষের মনুষ্যত্বকে জাগ্রত করে। তাই সংবাদকর্মীকে বেশী বেশী অধ্যয়ন করতে হবে এবং প্রত্যেক সংবাদকর্মীকে আমি মনে করি শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক পাস হওয়া উচিত।
গণমাধ্যমের কাজের জায়গাটি বরাবর কঠিন। গণমাধ্যমের সঙ্গে সব সময় ক্ষমতার একটা দ্বন্দ থাকে। কখনো একটু বেশি, কখনো একটু কম, এটাই তফাত। তাই গণমাধ্যমকে সব সময় ঝুঁকি নিয়েই কাজ করে যেতে হবে, ঝুঁকির কথা নিয়ে ভাবলে চলবে না। সাংবাদিকতা একটা মহান পেশা। এ পেশার লোকদের দায়িত্ব হলো দেশ এবং জাতির কল্যাণের জন্য কাজ করা। যারা ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় জীবন বাজি রেখে মানুষের সেবায় নিয়োজিত আছেন যেমন ডাক্তার, নার্স, পুলিশ, সেনাবাহিনী, ব্যাংকার তাদের বিশেষ ভাতা দেয়া হবে এটাও স্বাভাবিক। কারণ তারা দেশের জন্য, মানুষের সেবায় কাজ করছেন।
আমাদের দেশে গণমাধ্যমগুলোতে কর্মরত সাংবাদিকরা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলেও তারা কোন ভাতা বা প্রণোদনা পান না। সংবাদপত্রকে দেশের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়। অর্থাৎ দেশের আইন সভা (সংসদ) প্রথম স্তম্ভ, নির্বাহী বিভাগ (জনপ্রশাসন, পুলিশ, মিলিটারি) দ্বিতীয় স্তম্ভ, বিচার বিভাগ (জজ কোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট) তৃতীয় স্তম্ভ এবং সংবাদপত্র বা সংবাদিকতা হচ্ছে চতুর্থ স্তম্ভ। বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা গণমাধ্যম বান্ধব একজন মানুষ। সাংবাদিকদের প্রয়োজনে তিনি সবসময় উদার। সত্যিকারের পেশাদার সাংবাদিকদের কল্যাণে এখনও যে কোন বিষয়ে তিনি এগিয়ে আসবেন বলে আমার বিশ্বাস।
মহামারি করোনা ভাইরাসে মোকাবিলায় সরকার প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একে একে নিয়েছেন প্রশংসনীয় উদ্যোগ। কিন্তু সে উদ্যোগ সম্পূূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে না অসৎ কিছু মানুষদের কারণে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের সেই সাড়ে সাত কোটি মানুষের কম্বল থেকে নিজের জন্য কম্বল না থাকার আক্ষেপটা মনে পড়ে গেল। ‘লোকে পায় সোনার খনি, আর আমরা পাই চোরের খনি।’ যা করোনা প্রাদুর্ভাব সরকারের গৃহিত পদক্ষেপের চাল-ডাল-তেল চুরির ঘটনা। মহামারিভাবে ছড়িয়ে পড়া করোনা প্রাদুর্ভাবকে মোকাবেলা করতে সরকার ইতিমধ্যে সবাইকে প্রণোদনা প্রদান করেছেন। কারণ, যাতে কেউ দুর্ভোগে পড়ে ভেঙ্গে না পড়ে, পরিবার নিয়ে দূশ্চিন্তা না করে, না খেয়ে থাকে, কর্মচাঞ্চল্য থাকে। কৃষক যাতে এই দুর্যোগের মধ্যে ফসল ফলাতে পারে, সেজন্য ৫ হাজার কোটি ভুতুর্কি প্রণোদনা করেছেন। ঘরবন্দি মানুষদের জন্য খাবার পৌছে দিচ্ছেন।
সবারই যখন হলো, তখন এ প্রণোদনা থেকে বাদ পড়লো গণমাধ্যম/সংবাদমাধ্যম কর্মীরা। মানবতার জননী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা পেশাদার সাংবাদিকদের কল্যাণে এগিয়ে আসবেন এটা সাংবাদিকদের আত্মবিশ্বাস।
মোঃ কবির নেওয়াজ রাজ
সম্পাদক,
মানুষের কল্যাণে প্রতিদিন
সম্পাদক : মোঃ কবির নেওয়াজ রাজ, E-mail: mkprotidin@gmail.com, Contact: (+88) 01643-565087, 01922-619387; Mailing Address: House# 4/A, Main Road, Ati Model Town, Ati, Keraniganj, Dhaka-1312
© All rights reserved © MKProtidin.Com