নাছরুল্লাহ আল কাফীঃ অসহায় প্রতিবন্ধী ফজলুল হক হাওলাদার ওরফে (ফজলু)। বয়স তার ৫৫ পেরিয়ে ষাটের কাছাকাছি। পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার কলারন গ্রামের এসবিআই ইট ভাটা সংলগ্ন পানগুছি নদীর পাড়ে একটি ঝুপড়ি ঘরে বসবাস তার। স্ত্রী, ৫ মেয়ে আর দুই ছেলে নিয়েই ফজলু মিয়ার জীবন সংসার। একে একে মেয়েদের সবার বিয়ে হয়ে গেছে। আর দুই ছেলে তাদের স্ত্রী সন্তান নিয়ে আলাদা থাকছেন। তারা দুজনেই পেশায় জেলে। সংসারের টানাপড়েনের কারনে পিতা মাতার ভরন পোষন করাতে পারছেননা তারা। এজন্য জীবীকার টানে নিজের পুরোনো বাড়ি ছেড়ে স্ত্রী আলেয়া বেগম (৪০)কে নিয়েই বছর তিনেক আগে নদীর পাড়ে কোনমতে বসতি গড়েছেন ফজলুল হক।
তবে ষোল বছর আগে গ্যাংগিন রোগে বাঁ পায়ে পচন ধরে এই ফজলু হাওলাদারের। আর্থিক অভাব অনটনের কারনে সে সময় নিজের ভাল চিকিৎসা করাতে পারেননি তিনি। যার কারনে এক সময় কেটে ফেলতে হয় তার এ পা-টি। সেই থেকেই এক পা হারানো এ মানুষটিকে চলতে হচ্ছে ক্রাচে ভর করে। আর এ অবস্থায় একে একে কেটে গেছে তার প্রায় ষোলটি বছর। তার দুই ছেলে আলমগীর (২৫) এবং এমদাদুল হক (২৩) নদীতে মাছ ধরে কোনমতে জীবন চালাচ্ছেন। স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে তার দুই ছেলে থাকছেন পুরোনো বাড়িতে।
এদিকে নিজের ভরণ পোষন নিয়ে হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ায় কোন উপায় না পেয়ে সংসার চালাতে তিন বছর আগে ফজলু মিয়া নিজেই বেছে নেন নদীতে মাছ ধরার পেশা। তাই কচা আর পানগুছি নদীর মোহনায় প্রতিদিন জাল ফেলে জীবীকা নির্বাহ করে চলে আসছে তার এ সংসার। রোদ আর ঝড়-বৃস্টিতে ভিজে জীবনের ঝূঁকি নিয়ে নদীতে মাছ ধরেন তিনি। নৌকা আর জালই তার জীবীকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন। নদীতে সবসময় মাছ না পাওয়ায় খেয়ে না খেয়ে চলে স্ত্রী আলেয়া বেগম (৪০) আর তার নিজের পেট।
তার বসতির আশপাশে আধা কিলোমিটারের মধ্যে নেই কোন বাড়িঘর। তাই স্বাভাবিক ভাবে কোন জনপ্রতিনিধি, বেসরকারি কোন সংস্থা কারোরিই নজর পড়েনি এ অসহায় পরিবারটির দিকে। জীবীকার প্রয়োজনে জনবিচ্ছিন্ন এলাকায় বসতি গড়ায় সরকারি-বেসরকারি সাহায্য সহযোগীতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এ মানুষটি। দীর্ঘ ষোল বছর আগে পা হারিয়ে তার কপালে এখন পর্যন্ত জোটেনি প্রতিবন্ধী ভাতা।
নিজের অসহায় জীবনের কথা তুলে ধরে সাংবাদিকদের তিনি জানান, মোর একটা পাও নাই। এই অবস্থায়ই নদীতে মাছ ধইররা জীবন চালাতে আছি। হের উপর একটা ভাঙ্গাচোরা ঝুপড়ি ঘরে থাহি। মাইয়া পোলাগো সোংসারেও টানাটানি। হেরাও ঠিকমত খাইতে পারেনা। সরকার মোরে প্রতিবন্ধী ভাতা আর থাহার পিন্নে যদি একটা ঘর এবং চলাফেরা করার পিন্নে একটা হুইল চেয়ার দেতে হেইলে মুই খুব খুশি হইতাম।
প্রতিবন্ধী ফজলুল হকের স্ত্রী আলেয়া বেগম বলেন, ঘরের চালে তালপাতা আর পলিথিন দিয়া কোনমতে থাহি মোরা। দেওই আইলে ঘরের মধ্যে পানি পড়ে। হ্যাছাড়া গাঙ্গে নাই মাছ। যমমের অসবিধার মধ্যে আছি ভাই।
স্থানীয় খোকন নামে এক যুবক জানান, এই ফজলু চাচায় খুব অসহায় অবস্থায় জীবন কাটাইতে আছে। এই জায়গায় সচারাচার কেউ আয়না। তাই তেমন কোন সাহায্য সহযোগীতা পাইতে আছেনা হে।
ঐ ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল হাই জোমাদ্দার জানান, প্রতিবন্ধী ঐ অসহায় জেলে একটি বিচ্ছিন্ন এলাকায় বসবাস করেন। তার নামে শুধু জেলে কার্ড রয়েছে। এছাড়া তাকে তালিকা ভুক্ত করে প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়ার বিষয়টি বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন আছে। কিন্তু সম্প্রতি সরকারি ভাবে ঘর দেয়ার যে তালিকা করা হয়েছে তাতে সম্ভবত তার নাম নেই । তবে শুপারিশ করে তার নাম তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করার জন্য চেস্টা করা হবে বলে তিনি সংবাদকর্মীকে জানান।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন মোহাম্মাদ আল মুজাহিদ জানান, অসহায় ঐ জেলে আবেদন করলে তাকে প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া অসহায় ব্যক্তিদের সরকারি ভাবে ঘর দেয়ার যে তালিকা করা হচ্ছে তাতে তার নাম না থাকলে সংশ্লিস্ট এলাকায় খোঁজ খবর নিয়ে বিষয়টি তিনি দেখবেন বলে জানান।