জামালপুরের শেলু আকন্দ, কক্সবাজারের ফরিদ মোস্তফা ও কুমিল্লার শরীফ চৌধুরী। তিনজনই আজ রক্তাক্ত, ক্ষতবিক্ষত পঙ্গু প্রায়। এই তিন সাংবাদিক আজো বিচারের আশায় কেউবা কারাগারে, কেউ হাসপাতালে আবার কেউ জীবনের ভয়ে এলাকা ছাড়া।সারাদেশে এরকম অগনিত সাংবাদিক আজ মামলা-হামলার যাতাকলে বিপর্যস্ত। জীবনযুদ্ধে এরা বুঝি এক পরাজিত কলম সৈনিক! না এরা পরাজিত নয়। এদের রক্তের বিনিময়ে এখন থেকে সাংবাদিকের কলম হবে উম্মুক্ত। কলম হবে সত্য-ন্যায়ের। কলম হবে সকল অপশক্তির বাঁধামুক্ত। সাংবাদিকের কলম আর যেন শেকলবন্দী নয়। সাংবাদিকের কলম কোন শেকলে বন্দী হতে পারেনা, পারবেওনা।
তাইতো, 'ছুটে আয় তোরা আত্মার ঐক্যের বন্ধনে, যেথায় তোর কলম সৈনিক হবে লাঞ্ছিত-নির্যাতিত। ছুটে আয় তোরা সেথায় তোর কলমে রক্ত ঝড়ে। যেথায় তোর সহকর্মী ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত হবে। ছুটে চল সেথায় যেখানে শকুনের দল তোর ভাইকে ক্ষতবিক্ষত করছে। আমরা সেথায় চলে যাই...'।
ও হ্যাঁ। আমরা টেকনাফ থেকে যাত্রা শুরু করেছি। টেকনাফের ফরিদ মোস্তফার ওপর পুলিশি নির্যাতন ইস্যুকে কেন্দ্র করে আমরা প্রতিবাদী যাত্রা শুরু করেছি। যেথায় সাংবাদিক নির্যাতন সেখানেই বিএমএসএফ- সেখানেই সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি। আপনিও ঐক্যবদ্ধ হোন, ঐক্যবব্ধ থাকুন। নিশ্চিত জয় আমাদের হবেই হবে ইনশাল্লাহ।
শেলু আকন্দ যাকে জামালপুরের কিছু কসাই লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে ফেলে যায়। আজ দীর্ঘ ৭-৮ মাস ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে জীবন ভয়ে বাড়ি যেতে সাহস পাচ্ছেন না। অজানা আতংক তাকে এখনো তাড়া করে বেড়ায়। অব্যাহত হুমকি আর সাংবাদিক নির্যাতনের উর্বর ভুমিখ্যাত অনিরাপদ জামালপুরে শেলু আকন্দ এলাকায় যেন আজ অবাঞ্ছিত। স্ত্রী-সন্তান ছেড়ে ঢাকায় তার এক আত্মীয়ের বাসায় জীবন চলে শেলু আকন্দের। নিয়মিত আর লেখনিতে গর্জে ওঠবে কিনা জামালপুর, কেউ তা বলতে পারেনা। কে নিবে শেলুর নিরাপত্তার দায়িত্ব। তাইতো কিছুদিন আগে তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট নিরাপত্তা চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন।
দেশের প্রতিটি সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় হৃদয়ে রক্তক্ষরন হয় প্রতিনিয়ত। তবুও পথ চলছে, কলম ধরছে সকল অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে। রাষ্ট্রের পাশে থেকে কাজ করছে সাংবাদিকরা।
টেকনাফে মাদকের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের কারনে ফরিদ মোস্তফা আজ কারাগারে অন্ধ, ক্ষতবিক্ষত,অসুস্থ। বাঁচতে চায় মোস্তফা। লিখতে চায় আগেরমত প্রদীপদের বিরুদ্ধে।
কুমিল্লার মুরাদনগরের ভোরের কাগজের সাংবাদিক শরীফ চৌধুরী। স্থানীয় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ করায় বাড়ির উঠানে বৃদ্ধ পিতামাতার সামনে এলোপাথারি কুপিয়ে রক্তে ভাসিয়ে দেয়। সেদিন ছাড় দেয়নি শরীফের বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা পিতা-মাতাকেও। গত একমাস ধরে ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে শরীফ চিকিৎসা নিচ্ছে। থাকতে হবে আরো ছ'মাস। তবে শরীফ আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে কলম ধরতে পারবেনা। তার হাতের কব্জি কুপিয়ে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। প্রতিদিন প্রচুর পরিমান অর্থব্যয়ে চিকিৎসা নেয়া হচ্ছে। কোন ধরনের সহায়তা কিংবা আন্তরিকতার দেখা মিলছেনা হাসপাতালে। কিন্তু তার মামলার কোন অগ্রগতি নেই।
তবুও চাই সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধে যুগোপযোগী আইন। এ আইনটি প্রণীত হলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় অব্যাহত দূর্ণীতি-অনিয়ম, সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা স্বোচ্চার সাহসী ভুমিকা রাখতে পারবে। ফলে দেশ এগিয়ে যাবে, মুক্ত হবে রাষ্ট্রীয় চোর ডাকাত।
শর্ট নোট: সাংবাদিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে আইন প্রণয়নের দাবিতে সকলকে এখনি ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সকল নির্যাতনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদে সক্রিয় হতে হবে। নির্যাতন-মামলা-হামলার শিকার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে কোনক্রমেই অবস্থান নেয়া নীতি নৈতিকতা বিরোধী। সাংবাদিকদের বিপদে পাশে দাড়িয়ে পেশার মর্যাদা, দাবি ও অধিকার আদায়ে সজাগ থাকুন।
লেখক: আহমেদ আবু জাফর, সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম ও প্রধান সমন্বয়কারী সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি, প্রয়োজনে: ০১৭১২৩০৬৫০১ আগষ্ট ১৯, ২০২০।
সম্পাদক : মোঃ কবির নেওয়াজ রাজ, E-mail: mkprotidin@gmail.com, Contact: (+88) 01643-565087, 01922-619387; Mailing Address: House# 4/A, Main Road, Ati Model Town, Ati, Keraniganj, Dhaka-1312
© All rights reserved © MKProtidin.Com