ইতিহাস পড়লে জানা যায় ভারতবর্ষে বেশির ভাগ সময় শাসন করেছেন মুসলিম শাসকরা। মোটামুটি ১২০৬ সাল থেকে যদি ধরি তাহলে ব্রিটিশ শাসনের আগ পর্যন্ত মুসলিমরা শাসন করেছেন, ভারতবর্ষকে সাজিয়েছেন, স্থাপত্যশৈলীতে তাদের অবদান বেশি। সে সময় ধর্ম নিয়ে দাঙ্গা বা রেশারেশি হয়েছে এমন খবর বিরল। কারন মুঘলরা চাইলে ভারত বর্ষে অন্য কোন ধর্ম থাকতোনা। মুঘল আমলেও অনেক হিন্দু সরকারী দপ্তরে বড় বড় কাজে নিয়োজিত ছিলো। যেহেতু প্রতিটা মুঘল শাসক আউলিয়া ছিলেন। ইসলামের শিক্ষায় অন্য ধর্মের উপর জুলুম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রাসূল পাক বলেছেন, তোমরা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করোনা, একে অপরের উপর ধর্ম চাপিয়ে দিওনা।
পলাশী যুদ্ধ ছিলো ভারতবর্ষের জন্য জঘন্য একটা অধ্যায়। আমরা বিশ্বাস ঘাতক হিসাবে মীর জাফর, ঘষেটি বেগমের নাম ই জানি ইতিহাস আমাদের তাই শেখায় কিন্তু নবাবের রাজকার্য থেকে যারা বিশ্বাস ঘাতকতা করেছিলো, জগতশেট, রায় দুর্লভ, উর্মিচাঁদ তাদের কথা আমরা অনেকেই জানিনা। যেহেতু ব্রিটিশরা মুসলমানদের কাছ থেকে ক্ষমতা নিয়েছিলো তারা চাইতো সব সময় হিন্দু-মুসলমান দের মধ্যে বিবাদ তৈরী করতে কারন তারা জানতো হিন্দু-মুসলিম এক হলে তারা ভারতবর্ষে টিকতে পারবেনা। ব্রিটিশ আমলে সাম্রদায়িক সম্প্রীত নিয়ে কাজী নজরুল ইসলাম অনেক কবিতা গান লিখে গেছেন।
১৯৪৭ সাল আনন্দ আবার বেদনা নিয়ে আসলো। ধর্মের ভিত্তিতে দুদেশ ভাগ হলো যেটা ছিলো চরম ভুল। গান্ধী নেতাজীকে কংগ্রেস আর জিন্নাহ সোহওয়ার্দিকে মুসলিম লীগ থেকে বের করে না দিলে হয়তো উপমহাদেশ ৪৭ এই তিন দেশে ভাগ হতো। এবার মূল কথায় আসি পোস্ট টা বড় হয়ে যাচ্ছে।
স্বাধীনতার পর রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি ছিলো ক) জাতীয়বাদ খ) গনতন্ত্র গ) সমাজতন্ত্র ঘ) ধর্মনিরপেক্ষতা। শ্বৈরশাসক এরশাদ বুঝতে পেরেছিলো বাঙালী কতোটা ধর্মান্ধ জাস্ট ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ১৯৮৮ সালে অষ্টম সংশোধনীতে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম অন্তর্ভুক্ত করেন। যারা এরশাদ বিরোধী তারা আবার এরশাদের এ দিকটা পছন্দ করেন। এরশাদ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ঘোষনা করলে প্রতিটা রাজনৈতিক দল বিরোধিতা করেছিলো এমনকি ইসলামী দল বলে পরিচয় দেওয়া জামাত ও। উপমহাদেশে সব চেয়ে লাভ জনক ব্যাবসা হচ্ছে ধর্ম ব্যাবসা। পৃথিবীতে মাত্র ৪৩ টি দেশে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে মুসলিম দেশ ২৭ টি, বাকি গুলো খ্রিস্টান, বৌদ্ধ আর একটা হচ্ছে ইহুদি। বিশ্বের কোন দেশই হিন্দু ধর্ম রাষ্ট্র ধর্ম হিসাবে স্বীকৃতি দেয়নি।
১৯৭২ সাল থেকে যখন সংবিধান কার্যকর হয় কোথাও রাষ্ট্রধর্মের উল্লেখ ছিলোনা তখন কেউ আন্দোলন করেনি ইসলাম কে যোগ করার জন্য বা এরশাদের আমলেও এটার জন্য আন্দোলন হয়নি। বরং বিরোধীতা করে হরতাল হয়েছিলো।
সে যাই করুক মেজোরিটি পারসেন্ট প্রায় ৮৮% মুসলিম দেশের জনগনের জন্য করেছেন। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হয়ে যদি অন্য ধর্মের উপর বৈষম্য হয়ে থাকে তবে দেশে এমন জনগোষ্টি আছে যাদের মাতৃভাষা বাংলা নয়, তাহলে রাষ্ট্রভাষা বাংলা করলে তাদের প্রতিও কি বৈষম্য করা হয়? ধর্ম নিরপেক্ষ হলে দুর্বলের উপর আঘাত আসবে যেটা ভারতের দিকে লক্ষ করলে বোঝা যাবে।
আমরা আছি রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকবে কি থাকবেনা তা নিয়ে। বিসমিল্লাহ বলে মদ পান করার মতো বিষয়টা। ইসলামী শরীয়া ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালিত না হলে রাষ্ট্রধর্ম কতোটা যৌক্তিক? যে দেশে বাবা মেয়েকে ধর্ষন করে, প্রকাশ্যে খুন হয়ে ও বিচার হয়না, দুর্নিতীতে যে দেশ প্রথম হয় এখন সিরিয়াল টপ টেনের ভিতর, ক্ষমতার লোভ, জমি জমা নিয়ে বিবাদ এদেশের মতো পৃথিবীর কোন দেশে নেই। ক্ষুধার জ্বালায় বাবা মেয়ে আত্মহত্যা করে, ধর্ষনের বিচার হয়না, লোভী জাতী, টাকা পাচারে সুনাম অর্জনকারী, মাদকে স্বয়ংসম্পূর্ণ, হ্যান্ড স্যানিটাইজার মেখে ঘুষ খায়, টাকার জন্য প্রশাসনের লোক সেভেন মাডার করে। সে দেশে রাষ্ট্রধর্ম থেকে লাভ ও কি আর ক্ষতি ও বা কি? আমাদের রাষ্ট্র ধর্মের নাম হচ্ছে দূর্নিতী। অবশেষে কবির ভাষায়, ওরাও উদ্বাস্তু- কেউ উৎখাত ভিটেমাটি থেকে আর কেউ আদর্শ থেকে।
#রাষ্ট্রধর্ম_ইসলাম_বহাল_থাকুক
লেখক-
গাজী মোকলেছুর রহমান।
সম্পাদক : মোঃ কবির নেওয়াজ রাজ, E-mail: mkprotidin@gmail.com, Contact: (+88) 01643-565087, 01922-619387; Mailing Address: House# 4/A, Main Road, Ati Model Town, Ati, Keraniganj, Dhaka-1312
© All rights reserved © MKProtidin.Com