বাংলাদেশ ভারত সম্পর্কের শীতলতা বা অস্বস্তি নিয়ে নানা জল্পনা কল্পনার মাঝে ঢাকায় দেশ দু'টির পররাষ্ট্র সচিবদের এক বৈঠক থেকে বলা হয়েছে, এ ধরণের আলোচনা ঠিক নয়।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, নানা আলোচনার বিপরীতে দুই দেশের ''ভাল সম্পর্কের'' বিষয়টিকে মূলধারার সংবাদমাধ্যমে নিয়মিত তুলে ধরার ব্যাপারে তারা একমত হয়েছেন।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, দুই দেশের মধ্যে এখন যে কোন সময়ের তুলনায় ভাল সম্পর্ক রয়েছে। তিনি এটাকে ''সোনালি অধ্যায়'' হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে ঢাকায় দুই দিনের আকস্মিক সফরে এসে মি: শ্রিংলা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথেও দেখা করে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বার্তা দিয়েছেন বলে বলা হচ্ছে। কিন্তু সে বার্তার ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি।
যদিও দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিবরা এখন ''ভাল সম্পর্ক'' ও ''সোনালি অধ্যায়ের'' কথা বলেছেন, কিন্তু বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে দুই দেশের সম্পর্কের শীতলতা কাটাতে মি. শ্রিংলার এই সফর কার্যকর হবে কিনা-সেই সন্দেহ রয়েছে বিশ্লেষকদের।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক রওনক জাহান মনে করেন, বড় দেশ হিসাবে ভারত প্রতিবেশি ছোট দেশগুলোর সমর্থন তাদের পেছনে আছে বলে এরকম ধরেই নিয়েছে। কিন্তু "বাংলাদেশের জনগণ গত কয়েক বছরে ভারতের বিভিন্ন নীতির কারণে অনেক ক্ষুব্ধ হয়েছে।"
তিনি বলেন তিস্তা চুক্তি, রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক ভাবে বাংলাদেশ কাঙ্ক্ষিত সমর্থন ভারতের কাছে পায়নি। তিনি বলেন তবে তারপরেও প্রতিবেশিদের মধ্যে ভারতের সবচেয়ে ভাল বন্ধু যদি কেউ থাকে সেটা হল বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ কখনই আগ বাড়িয়ে কোন পদক্ষেপ নেবে না যেখানে ভারতের সাথে তাদের সম্পর্ক খারাপ হয়।
রওনক জাহান বলেন, কিন্তু তার মানে এই নয় যে বাংলাদেশ যদি নিজের স্বার্থে কখনও মনে করে যে চীনের সাথে তাদের সম্পর্ক উন্নয়ন করতে হবে, সেটা বাংলাদেশকে করতে হবে।
ভারতের আচরণের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে চীন একটা জায়গা করে নিচ্ছে। এই অঞ্চলে নেপাল -শ্রীলংকাও চীনের দিকে ঝুঁকে পড়ছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
রওনক জাহান বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, প্রতিবেশি দেশগুলোর সাথে সম্পর্কের ঘাটতির বিষয়টা হয়তো ভারত এখন অনুধাবন করছে। সেজন্য ভারত বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের শীতলতা হয়তো কাটানোর চেষ্টা করছে।
কিন্তু ভারত আচরণ পরিবর্তন না করলে শুধু আলোচনা করে বা ভাল ভাল কিছু কথা বলেই সম্পর্কের ক্ষেত্রে অস্বস্তি দূর করা যাবে না বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।
যখন দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে ভিন্ন এক প্রেক্ষাপট আলোচনায় এসেছে। মহামারি পরিস্থিতি সামাল দেয়া এবং ভ্যাকসিন ইস্যুতে বাংলাদেশ এবং চীনের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হওয়ার বিষয়টি অনেক ক্ষেত্রে দৃশ্যমান হয়েছে।
এছাড়া পাকিস্তানের সাথেও বাংলাদেশের সাম্প্রতিক যোগাযোগ ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে যেমন নানা জল্পনা কল্পনা চলছে, একইসাথে সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের গণমাধ্যমেও দেশটির রাজনৈতিক মহলের অস্বস্তির বিষয় শিরোনাম হয়েছে।
করোনাভাইরাস দুর্যোগের পাঁচ মাস পর ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এই প্রথম কোন দেশে অর্থাৎ বাংলাদেশে উড়ে এসেছেন।
আর এমন পটভূমিতেই দুই দেশের সম্পর্কের বিষয়ই আলোচনায় অগ্রাধিকার পেয়েছে ঢাকায় দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিবের বৈঠকে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
সম্পাদক : মোঃ কবির নেওয়াজ রাজ, E-mail: mkprotidin@gmail.com, Contact: (+88) 01643-565087, 01922-619387; Mailing Address: House# 4/A, Main Road, Ati Model Town, Ati, Keraniganj, Dhaka-1312
© All rights reserved © MKProtidin.Com