লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন করোনা রোগীর পিছনে মাত্র ১০ দিনে ব্যয় ১ লক্ষ ৬৯ হাজার টাকা দেখিয়ে বিভিন্ন বিল ভাউচারে সরকারি বরাদ্দকৃত ৩ লক্ষ টাকা উত্তোলনপূর্বক লোপাটের অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে আরও বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বেরিয়ে আসছে।
হাসপাতালের প্রধানসহকারী কাম হিসাবরক্ষক সায়েমা নুর খালেদা আক্তার রিনা ও কোষাধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান স্বীকার করেন, বরাদ্দকৃত ৩ লাখ টাকা খরচ করার পর করোনাকালে সংকট মোকাবেলায় আরও বরাদ্দ চেয়ে সিভিলসার্জনও স্বাস্থ্যবিভাগ বরাবর আবেদনসহ তথ্য পাঠানো হয়েছে।
করোনাকালে পাটগ্রামে একজন রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।একজন রোগী নিজ বাড়ীতে মারা গেছেন।৫৯০ টি সেম্পলের মধ্যে ৫৮১ টির ফলাফলে ১১৯ জন করোনা পজেটিভ বলে জানা গেছে।এদের মধ্যে পুরুষ ৮৮ জন এবং নারী ৩১ জন রোগীর মধ্যে ২ জন বাদে সবাই নিজ বাড়ীতে থেকে মোবাইলে চিকিৎসা নেন বলে ডাঃতানজির আলম স্বীকার করেন।
রোগ নিয়ন্ত্রণ ডাক্তার কে এম তানজির আলম জানান,
পাটগ্রামে করোনা সেম্পল টেস্ট পজেটিভ ধরা পরে এপ্রিল মাসের শেষ দিকে।এরই মধ্যে ঢাকা থেকে শাহীন আলম নামে একজন উপজেলার ধবলসতী রহমানপুর মেছিরপাড় নিজ বাড়ীতে আসেন।গত ২ মে তার করোনা পজেটিভ ধরা পরে।এরপর দেখা দেয় আতংক।
স্বাস্থ্যবিভাগ ও প্রশাসন পরে যান চিন্তায়।প্রথম রোগী হাসপাতালে আইসোলেশনে রাখা হবে না'কি নিজ বাড়ীতে লক ডাউনে হোম কোয়ারেন্টাইন এ রাখা হবে এমন দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও অরাজকতায় চলে যায় ৪ দিন।
অবশেষে জনগণের চাপে একপর্যায়ে হাসপাতালে নিতে বাধ্য হোন স্বাস্থ্যবিভাগ।
গত ৬ মে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মশিউর রহমান ও ডাক্তার কে এম তানজির আলম পিপিই পরিধান করে অবশেষে সরকারি এম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে আনার পর
৫০ শয্যা হাসপাতালের নতুন ১৯ শয্যা ভবনের পুরোটাই করোনা রোগী আইসোলেশন বিভাগ ঘোষনা দিয়ে সেখানে রাখা হয় শাহীন আলম নামে সেই রোগীকে।
এরপর দুইজন ওয়ার্ডবয়, দুইজন নার্স,দুইজন ডাক্তারসহ মোট ছয়জনকে দায়িত্ব দেয়া হয়। ১০ দিনে দু'টি গ্রুপে ৩ জন করে ভাগ হয়ে অজানা এক ভয় আর আতংক নিয়ে চলে চিকিৎসা।
করোনা রোগী শাহীনের সাথে কথা বলে জানা যায়,হাসপাতালের ১০ দিনের মধ্যে ৬ দিন নার্স ও ৪ দিন ডাক্তার কমপক্ষে ১০/১২ ফিট দূর থেকে তার খোঁজখবর নিয়েছেন।
সকালের নাস্তায় তাকে দুটি কলা, দুটি ডিম ও একপিচ পাউরুটি হিসেবে পথ্য দেয়া হয়।
অন্যদিকে,দুপুর ও রাতের খাবারে যেদিন যেমন পথ্য তালিকা ওই হিসেবে মাছ কিংবা মুরগীর গোস্ত ডাল সবজি দিয়ে খাবার দেয়া হত। দায়িত্বরত ওয়ার্ডবয় আইসোলেশন বিভাগের দরজায় খাবার রেখে দিয়ে নক করেন এবং সেখান থেকে রোগী শাহীন নিজে তার বেডে নিয়ে গিয়ে একাএকা বসে খেতেন।পুরো ওয়ার্ডে একা থাকারও একটা ভয় কাজ করত মনে।
শাহীন আলম কথা প্রসঙ্গে আরও বলেন,করোনা পজেটিভ হলে একটা ভয় ও আতংক বাসা বাঁধে।আশপাশে কেউ ছিল না।
হাসপাতালে ঢুকার সময় একবারে যা ঔষধ দিয়েছে, সেগুলো খেয়েই আল্লাহর রহমতে সুস্থ্য হয়েছি।এছাড়া অতিরিক্ত তেমন কোন কিছু আমাকে দেয়া হয়নি।
অবসর সময় খারাপ যাতে না লাগে সে কারণে মিথুন নামে এক সংবাদকর্মী একটি জায়নামাজ,টিপট,টিপ্যাক,সাবান,গামছা,তোয়ালেসহ বিভিন্ন ব্যবহারিক জিনিসপত্র শাহীনকে মোবাইলে বলে দরজায় দিয়ে যান।
এদিকে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সরকারি এম্বুলেন্সে শাহীন আলমের বাড়ী থেকে হাসপাতাল মাত্র দুই আড়াই কিলো বাবদ পরিবহন খরচ দেখিয়েছেন প্রায় ২০ হাজার টাকা।
একজন করোনা রোগীর বিদায় বেলায় ১৫ মে দুটি ফলজবৃক্ষ চারা ও কিছু ফলমূল উপহার বাবদ খরচ ধরেছেন হাজার টাকা।এছাড়াও চিকিৎসা,খাওয়াসহ বিভিন্ন খাতে একজন করোনা রোগীর পিছনে ব্যয় দেখানো হয়েছে ১ লাখ ৬৯ হাজার টাকাসহ সেম্পল সংগ্রহ ও আইসোলেশনে থাকা,হোম কোয়ারেন্টাইন রোগীদের খোঁজখবর বাবদ প্রায় দেড় লক্ষ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে।
গত এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসের ১০ দিন পর্যন্ত করোনাখাতে কত ব্যয় তা জানতে সেলফোনে কথা হয়।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডাঃঅরুপ পাল বলেন,করোনাকালে সংকট মোকাবেলার জন্য ৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। সেই টাকা ডাক্তার নার্স ও রোগীর পিছনে ব্যয় হয়ে গেছে।আরও বরাদ্দ পাবেন কি'না চাইবেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন,বরাদ্দ চেয়ে হাসপাতালের প্রধানসহকারীকে চাহিদা পাঠাতে বলা হয়েছে।রোগীর সেম্পল সংগ্রহে উপজেলার ৮ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভার মধ্যে আরও বরাদ্দ পাওয়া যাবে বলে আশা করেন তিনি।
সম্পাদক : মোঃ কবির নেওয়াজ রাজ, E-mail: mkprotidin@gmail.com, Contact: (+88) 01643-565087, 01922-619387; Mailing Address: House# 4/A, Main Road, Ati Model Town, Ati, Keraniganj, Dhaka-1312
© All rights reserved © MKProtidin.Com