লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ
পাটগ্রাম ইউএনও কামরুন নাহারকে আলটিমেটাম দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ৭ দিনের মধ্যে ইউএনও’কে চলে যেতে বলা হয়েছে। নয়তো আরও কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবেন পাটগ্রামের ঠিকাদার সমাজ।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে পাটগ্রাম উপজেলা চত্বরে মানববন্ধন শেষে এক প্রতিবাদ সমাবেশে পৌর যুবলীগ সভাপতি ঠিকাদার বিজয় কুমার শূর শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন।তারই সঞ্চালনা সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ঠিকাদার রাশেদুল ইসলাম সুইট,উপজেলা আ’লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আবু তালেব,শ্রীরামপুর ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি ঠিকাদার রফিকুল ইসলাম,উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ঠিকাদার আবু নাঈম জাহাঙ্গীর রুবেল,পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ঠিকাদার হুসাইন আহমেদ রুমি, অটো চালক শ্রমিক নেতা সাবনুর,রংমিস্ত্রী নেতা রাজু,রাজমিস্ত্রি নেতা হাফিজার রহমান প্রমুখ।
এ সময় বক্তারা তাদের নিজ নিজ বক্তব্যে বলেন,পাটগ্রাম ইউএনও কামরুন নাহার ঠিকাদারিকাজে অনৈতিকভাবে অন্য একজনের মাধ্যমে কমিশন দাবী করেন।মাসের পর মাস ফাইল ফেলে রেখে ঠিকাদারদেরকে হয়রানী করেন। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বালু পরিবহনের দায়ে ট্রাক্টর চালকদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করেছেন।এভাবে তিনি শ্রমিকদের হয়রানী করে আসছেন।নদীতে বালু উত্তোলনে বাঁধা দিচ্ছেন অথচ তিনিই আবার মুজিববর্ষের ঘর নির্মাণে( সরকারিকাজে) নদী’র বালু ব্যবহার করছেন।
ঠিকাদার নেতৃবৃন্দ আরও বলেন,একদেশে দু’ধরনের আইন থাকতে পারে না।কোন এক ব্যক্তিকে ইংগিত করে যুবলীগ সভাপতি বলেন,একজনের সাথে গুদুরগুদুর ফুদুর ফুদুর করেন।আপনি যাকে বাঘ মনে করেন আসলে তিনি বাঘ নন,বিড়াল।আপনি শিয়াল হয়ে বাঘের খাচাঁয় মাথা ঢুকিয়েছেন। কৃষি প্রনোদনা অনুষ্ঠানে পদাধিকার বলে সভাপতি হয়েও আপনি কোন কারণ ছাড়াই অনুপস্থিত ছিলেন।সেই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জননেতা মাননীয় এমপি জেলা আ’লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতাহার হোসেন।সমাবেশে হুশিয়ারী উচ্চারণ করে যুবলীগের সভাপতি ঠিকাদার রাশেদুল ইসলাম সুইট বলেন,আগামী ৭ দিনের মধ্যে নিজে নিজে চলে যাবেন।নয়তো আমরা আপনাকে বিদায় দিতে বাধ্য হবো।আর একটা ট্রলিতে জরিমানা করলে রাস্তা অবরোধ করা হবে,সামলাতে পারবেন না আপনি।
বুড়িমারী থেকে যেসব ট্রাকে বালু যায় সেগুলো বৈধ না অবৈধ তা তো দেখেন না এমন প্রশ্ন ছুড়ে দেন নেতারা।
সর্বোপরি পাটগ্রাম ইউএনও মোবাইল ফোন রিসিপ করেন না বলে এমন অভিযোগ তুলেন ঠিকাদাররা।
পাটগ্রাম ইউএনও কামরুন নাহারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।সেই সাথে তিনি দাবী করেন সরকারি আইনের বাহিরে কোন কাজ করেছেন এমন অভিযোগ তার জানা নেই।প্রায় আধ ঘন্টার কথোপকথনে ঠিকাদারদের বিভিন্ন অভিযোগ প্রসঙ্গে অস্বীকার করে তিনি বলেন,কৃষি প্রনোদনা যারা পাবেন তাদের তালিকা নিয়মানুযায়ী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও উপজেলা পরিষদের কমিটিতে অনুমোদন হওয়ার কথা।একজন ইউএনও হিসেবে তিনি সেই প্রনোদনা তালিকা অনুমোদন করেননি বলেই দায়ভার পরতে পারে এ কারণে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না।
তিনি দাবী করেন কয়েকজন বিশেষ ব্যক্তি তালিকা করে সেই তালিকা অনুমোদন নেয়া হয় না।তিনি বলেন,অবাধ তথ্য আদান প্রদানের সুবিধা পাচ্ছেন জনগণ। ট্রিফল নাইন বা ট্রিফল থ্রীসহ বিভিন্ন নম্বরে কল করে অনেকে সেবা পাচ্ছেন।ব্যস্ততার কারণে সবার ফোন ধরতে পারেন না।এ কারণে মোবাইলে টেক্সট করতে বলা হয়।মেসেজ পেয়ে সেই কল ব্যাক করে কথা বলেন এমন দাবী তাঁর।
তিনি বলেন,ধরলা নদী থেকে বালু উত্তোলনের কারণে পৌরসভার সোহাগপুর ধরলা ব্রীজ এলাকায় দুইটি ট্রলি আটক করেন পুলিশ।এরপর পাটগ্রাম থানা ওসি সুমন কুমার মহন্ত ইউএনও কামরুন নাহারকে সেলফোনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য অনুরোধ করেন।গত ২০ ডিসেম্বর বিকেল অনুমান ৫ টার আগে ইউএনও ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কামরুন নাহার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন।নদী’র বালু সরকারি সম্পত্তি রক্ষার্থে বালু ও মাটি রক্ষণাবেক্ষণ আইনে দু’জন ট্রলি চালককে ৫০ হাজার করে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়।
এরপর সপ্তাহখানেক আগে পাটগ্রাম ইউএনও’র সাথে উপজেলা পৌর আ’লীগ নেতৃবৃন্দসহ জনপ্রতিনিধিদের কয়েকজন মিলে একটি বৈঠক হয়।সেখানে বালু উত্তোলন করে ঠিকাদারিকাজ পরিচালনার জন্য আলোচনা হয়।সেই বৈঠকে পাটগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বাবুল,পৌর মেয়র শমসের আলী,উপজেলা আ’লীগ সভাপতি বাবু পূর্ণ চন্দ্র রায়,ভাইসচেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন লিপুসহ ঠিকাদাররা উপস্থিত ছিলেন।পাটগ্রাম ইউএনও কামরুন নাহার বলেন,স্থানীয় নেতৃবৃন্দের দাবীর প্রেক্ষিতে দুইটি জায়গা নির্ধারণ করে বালু মহালের জন্য অনুমোদনের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।সম্মানের সাথে একটু সময় চাওয়ার পরও কেন যে ঠিকাদারবৃন্দ আন্দোলনে গেলেন তা তার বোধগম্য নয়।তিনি আশা করেন,সরকারিদলের নেতৃবৃন্দ সরকারি সব ধরনের কাজে সহায়তা করবেন।বিধি মোতাবেক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে।নিয়মের বাহিরে আজ পর্যন্ত কোন কাজ করেননি।পাটগ্রামে যোগদানের চারমাস হয়েছে। তিনি বলেন,ঠিকাদারদের বিলে বিধি মোতাবেক কাজ যাচাই বাছাই করে স্বাক্ষর করা হয়।পাটগ্রাম ইউএনও’র কাজে কামে কোথায় ঘাটতি,সমন্বয়ের অভাব কেন এসব প্রশ্নের জবাব প্রসঙ্গে পাটগ্রাম উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি বাবু পূর্ণ চন্দ্র রায় বলেন,মাননীয় এমপি মোতাহার হোসেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।এ জেলার উন্নয়নের কান্ডারী। তাকে মানে না এমন লোক খোঁজে পাওয়া যাবেনা।ইউএনও কামরুন নাহার যোগদানের পর বলেছেন তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান।তার পরিবারে ৭ জন মুক্তিযোদ্ধা আছেন।তবে কেন তিনি মাননীয় এমপি’র কৃষি প্রনোদনা অনুষ্ঠানে ছিলেন না।মাননীয় এমপি’র সাথে দেখা করে ইউএনও বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ করতে পারেন।প্রশাসন চালাতে একজন ইউএনও এমপিকে উপদেষ্টা মানবেন এটাই নিয়ম।
এ প্রসঙ্গে পাটগ্রাম মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ উপজেলা আ’লীগের সাবেক ত্রান সম্পাদক মিজানুর রহমান নিলু বলেন,সম্প্রতি মাননীয় এমপি সেচ্ছাধীন তহবিল থেকে ৪০০ জনকে ৪ লাখ টাকা বিতরণ করেন।সেদিনও ইউএনও তাঁর কার্যালয়ে ছিলেন কিন্তু শহীদ আফজাল মিলনায়তনে এমপি’র দেখা করেননি কিংবা অনুষ্ঠানে যোগ দেননি।
সম্পাদক : মোঃ কবির নেওয়াজ রাজ, E-mail: mkprotidin@gmail.com, Contact: (+88) 01643-565087, 01922-619387; Mailing Address: House# 4/A, Main Road, Ati Model Town, Ati, Keraniganj, Dhaka-1312
© All rights reserved © MKProtidin.Com