মেজর সিনহা হত্যাকান্ডের নেপথ্য কাহিনী যখন প্রকাশ করেছিলাম, তখনও বিরুদ্ধাচারণকারী বহু দালাল সাংবাদিক দেখেছিলাম। তারা বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপসহ অপরাধী পুলিশ কর্মকর্তাদের পক্ষে নগ্ন দালালিতে মেতে উঠেছিলেন। দালালচক্র রিপোর্টিংয়ের নামে সে সময় সিনহা হত্যাকান্ডের নেপথ্য কাহিনী ভিন্নখাতে প্রবাহের প্রাণপন অপচেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু চার মাস পর কী দেখা গেল? আমি যা প্রকাশ করেছিলাম তা অবিকল র্যাবের তদন্ত প্রতিবেদনেও উঠে আসে। একই সময়ে পল্লবী থানার অভ্যন্তরে সংঘটিত বোমা বিস্ফোরণসহ জঙ্গি নাটক সাজানোর নেপথ্য কাহিনীও আমার লেখনিতে ফাঁস হয়েছিল। তখনও একদল দালালকে দেখা গেছে অপরাধী পুলিশদের পোষ্য গোলামের মতো পদলেহন করতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গোয়েন্দা প্রতিবেদনেই আমার প্রতিবেদনটি হুবুহু প্রমানিত হয়েছে।
এবার শাহআলী থানাস্থ বোটানিক্যাল গার্ডেনে এক ব্যক্তির ব্যাগ তল্লাশি করে পাওয়া ২৭ লাখ ২৯ হাজার টাকা ওই গার্ডেনের রেঞ্জ অফিসারসহ বনকর্মিরা এবং থানা পুলিশ মিলেমিশে রেখে দিয়েছে। শূণ্য হাতে সুজন নামের লোকটিকে তার এক বোনের জিম্মায় পাঠিয়েছে। জলজ্যান্ত একজন মানুষকে যার হেফাজতে ছেড়ে দিতে পারলো পুলিশ অথচ তার টাকাগুলো কেন রেখে দিলো? এ ব্যাপারেই প্রশ্ন তুলে স্থানীয় কয়েকজন সংবাদকর্মির ছুটোছুটি শুরু করায় ক্ষিপ্ত হয়েছে পুলিশ, তাই বিভাগীয় পর্যায়ের একজন পুলিশ কর্মকর্তার মদদে ৩০০ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে ১১ জন সংবাদকর্মির বিরুদ্ধে মামলা পর্যন্ত রুজু হয়েছে শাহআলী থানায়। কোনো কোনো সংবাদকর্মিকে নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে কিন্তু ২৭ লাখ টাকা গায়েব করে দেয়ার ঘটনা অনুসন্ধান চালানোটা কি দোষের? আলোচিত এ ঘটনাতেও কিছু কিছু দালাল সাংবাদিকের চেহারা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। তারা ঘটনার আদ্যপ্রান্ত, সত্য মিথ্যা কিছু জানতে রাজি নন, চোখ বন্ধ করে দালালির কাজটা চালিয়ে যেতে চান। অভিযোগ চলমান অবস্থাতেই তারা কেউ কেউ পুলিশের পক্ষে রিপোর্ট ছাপিয়ে প্রচার করে কী বুঝাতে চান? তারা ধোঁয়া তুলশী পাতা? ২৭ লাখে কেন, কোনো অপরাধেই তারা জড়িত নন? যারা সত্যি সত্যি বোটানিক্যাল গার্ডেনে চাঁদাবাজির কাজটি করে তাদের রক্ষা করা কারো উদ্দেশ্য হতে পারে না। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে বোটানিক্যাল গার্ডেনে যে সুজনকে আটক করে ২৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা ধামাচাপা দিতেই যে সাংবাদিকদের নামে মামলা করেছে সে তথ্যটুকু জানিয়ে দেয়া। কিন্তু একশ্রেণীর অতিবোদ্ধা সংবাদকর্মি (যারা পরস্পর বিরোধে জড়িত, সেই বিরোধের আক্রোশ মেটাতে) বোটানিক্যাল গার্ডেনে সাংবাদিকরা চাঁদাবাজি ছিনতাই করছে সেটা প্রমান করতে যেন উঠেপড়ে লেগেছেন। সহকর্মি বন্ধুরা পুলিশের প্রচার করা একটা মাত্র ঘটনাকে এতো কাভারেজ দিয়ে কী বুঝাতে চান? সাংবাদিকরা চাঁদাবাজি আর ছিনতাইয়ে নেমে গেছে? মানুষ কী আসল আর ভূয়া সাংবাদিকের বিভাজন করে কথা বলবে? সরাসরি বলবে সাংবাদিকরা এখন ছিনতাই করে। এটা নিজের পেশার জন্য খুব কী ইতিবাচক? এতে আপনাদের কিচ্ছু যায় আসে না। কারণ ব্যবসা বাণিজ্যের পাশাপাশি অপশনাল সাবজেক্টের মতো সাংবাদিকতা করেন হয়তো এজন্যই কিছু যায় আসে না। হ্যা. ঠিক আপনাদের মতো মিরপুরের ডিসিও কিন্তু ৩০০ টাকার চাঁদাবাজকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তাকে তিন ঘন্টা ধরে তার কক্ষে বসিয়ে রেখেছিলেন, তিনশ’ টাকা চাঁদাবাজের গুরুত্ব কী বুঝলেন?
সাংবাদিক বন্ধুদেরকেই বলছি: বোটানিক্যাল গার্ডেনের কথিত চাঁদাবাজির পেছনের খবরটা জানতে আর জানাতে এতো লজ্জা কেন? ওই সংবাদকর্মি থানা থেকে সরাসরি বোটানিক্যাল গার্ডেনের পরিচালকের কক্ষে গিয়ে তার সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন, জানতে চেয়েছিলেন সেদিন সুজনের কাছ থেকে মোট কত টাকা আপনারা উদ্ধার করেছিলেন। ঠিক তখনই শাহআলী থানার ওসি সেখানে পৌঁছে ওই দুই সংবাদকর্মিকে বের করে দিলেন কেন? টাকার পরিমাণটা চাপা দিতে ? চাঁদাবাজির নতুন অভিযোগ উত্থাপনের সুযোগ তৈরি করতে?
সাঈদুর রহমান রিমন
প্রধান অনুসন্ধানী প্রতিবেদক
বাংলাদেশ প্রতিদিন।
সম্পাদক : মোঃ কবির নেওয়াজ রাজ, E-mail: mkprotidin@gmail.com, Contact: (+88) 01643-565087, 01922-619387; Mailing Address: House# 4/A, Main Road, Ati Model Town, Ati, Keraniganj, Dhaka-1312
© All rights reserved © MKProtidin.Com