মুনসুর আহমেদ ইং১৯৪৮ সালে ১৯ শে অক্টোবর দেবহাটা উপজেলার ২নং পারুলিয়া ইউনিয়নের মাঝ পারুলিয়া গ্রামে এক সম্ভান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি জন্মগ্রহণ করার কয়েক মাস পর পিতাকে হারিয়ে এতিম হন। পিতা হামিজ উদ্দীন গাজী, মাতা দেলজান বিবি। তিন ভাই চার বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সকলের ছোট,ভাই বোনদের তিনি ছিলেন অত্যন্ত আদরের। স্নেহের প্রতিশব্দে আদর করে ডাকতেন খোকা বলে।ছোট বেলা থেকে তিনি ছিলেন দূরান্ত ডানপিটে ও সাহসী। ক্রীড়া অংগনে ভাল ফুটবল খেলতেন।
শিশু ছাত্রখোকা প্রথমে শিক্ষা লাভ করেন গ্রামের পাঠশালা সুলতান মাষ্টারের কাছ থেকে। মুনসুর আহমেদের বড় ভাই আব্বাস আলী গাজী ছিলেন তার অভিভাবক, তিনি তাকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলার সকল চেষ্টা করেছেন।শৈশব, কৈশোরে পড়াশোনা করেছেন নলতায় পরবর্তীতে সাতক্ষীরা পি,এন হাইস্কুলে। বি,কম পাশ করেন খুলনা আজম খান কলেজ থেকে।উচ্চতর শিক্ষা গ্রহন করার জন্য ঢাকাতে অবস্থান কালে ১৯৬৬সালে পূর্বপাকিস্তান ছাত্রলীগে যোগ দিয়ে রাজনৈতিক পথচলাশুরু করেন।অধ্যায়নকালে ছাত্র সংগঠনকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৬ দফা ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা বাস্তবায়নে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন।১৯৬৯ গনঅভ্যুত্থানের পর সাথীদের সঙ্গে নিয়ে ঢাকা থেকে গ্রামে ফিরে সাধারণ জনগনকে ঐক্যবদ্ধ করে ১৯৭১ সালে দেশ মাতৃকাকে স্বাধীন করারজন্য মুক্তিযুদ্ধে ৯ নং সেক্টরে সক্রিয় অংশ গ্রহন করেন। যুদ্ধ করেন দেশ স্বাধীনের জন্য।
বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে তারুণ্যের উদ্দীপনা কে কাজে লাগাবার জন্য ২নং পারুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের রিলিফ কমিটির চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেন তাকে,তিনি ঐ দায়িত্ব দক্ষতার সাথে পালন করে অত্র এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেন, তিনি সকলের কাছে সুপরিচিত হয়ে উঠেন আহন্মাদ ভাই হিসাবে। মুনসুর আহমেদ ২৩ বৎসর বয়সে ১৯৭৩ সালে বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করেন। চারবার পারুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব সৎ ও নিষ্ঠার সাথে পালন করেন।১৯৭৪ সালে পারুলিয়া গোলজার আলী সরদারের মেয়ে নূরজাহান বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবংদুই সন্তানের জনক রাজীব আহমেদ ব্যাংকার ও ডাঃ মাগফুরা পারভীন নুপুর।
১৯৭৫ সালে জাতির জনককে নৃশংসভাবে হত্যা করার পর তৎকালীন দক্ষিণ খুলনা অঞ্চলে রাজপথে আন্দোলন করেন,খুনি জিয়া মোস্তাক চক্র যৌথ বাহিনী দিয়ে মুনসুর আহমেদ কে গ্রেফতার করান।মিথ্যা মামলা, অমানবিক, নিষ্ঠুর নির্যাতন চালানো হয় তার শরীরে, ঝালমরিচ পানিতে গুলে গরম পানি ঢালা হয় তার নাকে মুখে।তদন্তের নামে রিমান্ডে নিয়ে মানসিক টর্চার করাহয় তার প্রিয় সংগঠন আওয়ামী লীগ ত্যাগ করার জন্য।২২ মাস জেলে থাকার পর জেলখানা থেকে আবার নির্বাচীত হন পারুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে।জেলখানা থেকে মুক্তহয়ে অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে গোপনে ও প্রকাশ্যে সংগঠন কে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মনোবল ও সাহসী করে গড়েতোলেন।১৯৮০থেকে১৯৯৮ সাল ১৮ বছর সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
২০১৫ সালে ৭ ফেব্রুয়ারী জননেত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সন্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে দায়িত্ব দেন,পূর্বের ন্যায় ২০১৯ সালের সন্মেলনে আবারও তাকে সভাপতির জায়গায় সন্মানিত করেন।
১৯৮৬ সালেএ্যাডঃ মুনসুর আলী (প্রঃমন্ত্রী)কে পরাজিত করে মুনসুর আহমেদ জাতীয় সংসদের সাংসদ নির্বাচীত হন।৫ম সংসদ নির্বাচনে ১৯৯১ সালে আবারও সংসদ সদস্য পদে জয়লাভ করেন।
বঙ্গবন্ধুর সৈনিক মুনসুর আহমেদ নিজেকে রাষ্ট্রক্ষমতা,লোভ লালসা বিত্তবাসনার উর্ধে উঠে এসে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের পাশে থেকে সংগঠন করেছেন।মানুষকে ভালবাসা ও সদালাপী এ দুইয়ের সংমিশ্রণে যে শক্তি তৈরি হয়েছিলো তার কারণে সবাই তার মুখাপেক্ষী হতো।
গত ২৭ ডিসেম্বর করনায় আক্রান্ত হয়ে সাতক্ষীরা সি,বি হাসপাতালে ভর্তি হন।উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় বি এস,এইচ, হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।সেখান থেকে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। নির্ভীক, কিংবদন্তি বর্ষিয়ান জননেতা গনমানুষের অত্যন্ত কাছাকাছি থাকা রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব মুনসুর আহমেদের বিদায়ে কাঁদছে সাতক্ষীরার জনপদ। সদা-হাস্যউজ্বল মিষ্টি মধুর আচরণের মানুষটি কে হারিয়ে বিস্তীর্ণ জনপদের মানুষ চোখের পানিতে স্মৃতিচারণ করছেন। আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কে তিনি সার্বক্ষণিক তার চিকিৎসার খোঁজ খবর রাখাতে, মৃত্যুর পর তারএতিম সন্তানদের মুঠোফোনে সান্তনা, সমবেদনা ও শোক প্রকাশ করাতে।জোলা প্রশাসনের দায়িত্বশীলদের প্রতি ও আমাদের কৃতজ্ঞতা।শুভাকাঙ্ক্ষীদের আজীবন মনে রাখবো এবং তাদের পাশে থাকবো ইনশাল্লাহ।
আমরা বুঝতে পারিনি তিনি এত তাড়াতাড়ি সবাই কে ছেড়ে চলে যাবেন।নিরঅহন্কার, নির্লোভ,অত্যন্ত মানবিক মুনসুর আহমেদের শূন্যতা কোন ভাবে পূরণ হবার নয়।আমরা ছিলাম তার আলোয় আলোকিত,আলো নিভেগেছে,হৃদয়ে রক্তক্ষরণ জানিনা কবে বন্ধ হবে।আমাদের শোক সাগরে ভাসিয়ে চলে গেলেও মহান আল্লাহ তাআলা তাকে যেন বেহেশতের উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত করেন এটাই প্রার্থনা করি,আমিন।
সম্পাদক : মোঃ কবির নেওয়াজ রাজ, E-mail: mkprotidin@gmail.com, Contact: (+88) 01643-565087, 01922-619387; Mailing Address: House# 4/A, Main Road, Ati Model Town, Ati, Keraniganj, Dhaka-1312
© All rights reserved © MKProtidin.Com