রোববার বিকাল ৩ টা থেকে ৫টা পর্যন্ত রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে করোনা সংক্রান্ত জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব সিদ্ধান্তের বিষয় জানান করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ ও মোকাবিলা কমিটির (সিটি কর্পোরেশন পর্যায়) সভাপতি ও সিটি মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন।
রাসিক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, অতীতের চেয়ে রাজশাহী ও চঁাপাইনবাবগঞ্জে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বেড়েছে। এবারের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট অত্যান্ত শক্তিশালী। যখন কাউকে আক্রান্ত করছে, তখন ফুসফুস অকার্যকর করে দিতে বেশি সময় নিচ্ছে না। এসব কিছু বিবেচনা করে নতুন কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে রাজশাহীতে বিধি-নিষেধের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। পূর্বের সন্ধ্যা ৭টার পরিবর্ততে বিকেল ৫টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শপিংমল, মার্কেট, দোকান সহ সব কিছু বন্ধ থাকবে। সন্ধ্যা ৬ টা থেকে থ্রি-হুইলার সার্ভিস বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এবারে ৫টা মানে ৫টায়, ৬টা মানে ৬টায়, এক্ষেত্রে উদাসহীনতা বা গাফিলতি বরদাশ করা হবে না। জীবিকার জন্য দোকান-পাঠ খোলা রাখতে হচ্ছে, কিন্তু মানুষের জীবনটাও বঁাচাতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আজ সকাল থেকে নগরীর ৫টি পয়েন্টে করোনার রেনডম টেস্ট শুরু হয়েছে। কাল থেকে এটি আরো বাড়ানো হবে। বিভিন্ন মোড়ে জমায়েত হওয়া লোকদের কাছ থেকে সেম্পল নিয়ে যদি করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়, তাদের চিহ্নিত করে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা যাবে। তাহলে সে আর বাইরে করোনা বিস্তার করতে পারবে না
মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কমিউনিটি পুলিশিং কমিটি এবং তরুণদের একটিভ করে জনসাধারণকে মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহারে আরো বেশি উদ্বুদ্ধ করা হবে। জনসচেতনতাবৃদ্ধিতে প্রচার-প্রচারণা বাড়ানো হবে। যারা মাস্ক ব্যবহার করবেন না, যুক্তি সংগত কারণ ছাড়া বিধিনিষেধ অমান্য করবেন, তাদেরকে জরিমানা করা হবে। বিধি-নিষেধ অমান্যকারীদের মধ্যে কাউকে কাউকে দিয়ে করোনা সংক্রান্ত ব্যাপারে সচেতনতামূলক কাজে লাগনো হবে।
তিনি আরো বলেন, আগামীকাল থেকে রাজশাহীর পাশ্ববর্তী গোদাগাড়ী, তানোর ও মোহনপুর থানা এলাকার ভেতর দিয়ে শহরে মানুষ না প্রবেশ করতে পারে, সে জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আগামী ৩ থেকে ৫ দিন প্রতিদিনই করোনা পরিস্থিতি মনিটরিং করা হবে। যদি করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বাড়তে থাকে তাহলে ১৪ দিনের জন্য কঠোর থেকে কঠোরমত লকডাউন ঘোষণা করা হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জীবন ও জীবকা দুটিই চলাতে হবে। এই মুহুর্তে যদি কঠোর লকডাউন দেওয়া হয়, তাহলে ২ থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকার আমের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্থ হবে, দ্রব্যমূল্যের দামও বৃদ্ধি পাবে। অসংখ্য গরীব ও অসহায় মানুষদের জন্য কষ্টের হবে। আমরা লকডাউনের বিরোধী নই, আগামী ৩ থেকে ৫ দিন করোনা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। এরপর পরবর্তী সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসায় হাসপাতাল সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে সদর হাসপাতাল চালুর ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাথে বিভাগীয় কমিশনার মহোদয় কথা বলেছেন, তিনি সম্মত হয়েছেন। সদর হাসপাতালকে যত শিগগিরই সম্ভব করোনা রোগীদের চিকিৎসা প্রদানের উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে। মিশন হাসপাতালটিও আরেকবার নেওয়া যায় কিনা, সেটিও আলোচনা চলছে। করোনার প্রতিরোধের এই লড়াইয়ে আমাদের সবাইকে একসাথে লড়তে হবে, এর বিকল্প কিছু নেই।
সভায় উপস্থিত ছিলেন করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ ও মোকাবিলা কমিটির (বিভাগীয় পর্যায়) সভাপতি ও বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. হুমায়ূন কবীর, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ ও মোকাবিলা কমিটির (জেলা পর্যায়) সভাপতি ও জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মো. আব্দুল বাতেন, আরএমপি পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক, রাজশাহী পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বিপিএম (বার), সিভিল সার্জন ডা. কাইয়ুম তালুকদার, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ডাবলু সরকার, রাজশাহী চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মোঃ মনিরুজ্জামান প্রমুখ।