পথের সঙ্গী হিসাবে ওরা যেমন চমৎকার,,স্বামী হিসাবেও তেমনই। দিনভর বউ বাচ্চা নিয়ে মন দিয়ে ঘরসংসার, গল্পগুজব, দেশ দেশান্তরের গল্প করা, গান গাওয়া, ভক্তির গান, ভালবাসার গান,আনন্দের গান সবই থাকে ওদের জীবনে।
এসব দেখে প্রতিবেশীদেরও বোঝার উপার নেই, ওরা আসলে কী?
গাঁয়ের এক কোণে ছোট্ট কুটিরে বসবাস, অনেক সুখের সে নীড়। সারা বছর আন্ডা বাচ্চা নিয়ে সুখেই সংসার করে ওরা। ঘরের কাজ, মাঠের কাজ, গঞ্জে বাজার সদাই সবই চলে নিয়ম মাফিক। এমনকি জমিদারের খাজনা দেয়া থেকে শুরু করে দুয়ারে ভিখারি এলে ভিক্ষা দেয়া কোন কিছুতেই থাকে না কোন অনিয়ম। উৎসব পার্বনে ওরা আনন্দ করে ,,শোকের সময় কান্নায় বুক ভাসায়।
বছরভর ওরা ভালো স্বামী, ভালো পিতা, ভালো মানুষ,, এক কথায় ভালো প্রজা। বর্ষার আগে ঘরের চাল মেরামত, ঘরকন্নার কোন দায়িত্বই বাদ পড়ে না। বর্ষা শেষে শরৎ নামলেই ওরা পথে পা বাড়ায়,, আর হয়ে যায় সম্পূর্ণ ভিন্ন মানুষ। তখন হাসি কান্নার অর্থটাই বদলে যায়। ওরা তখন অচেনা পথিক...
প্রতিবেশীরা না বুঝলেও বউদের দৃষ্টি এড়াতো না। তাই বউরা যতটা সম্ভব প্রতিবেশীদের এড়িয়ে চলত,, কেউ বেশী আগ্রহ দেখালে বলতো স্বামী ভীনদেশে গেছে কাজের ধান্দায়। বাচ্চারাও তাই জানতো। অপেক্ষায় থাকতো, একদিন বাবা ঘরে ফিরবে, সাথে আনবে নতুন জামা খেলনা।
যতদিন কর্তা না ফিরবে, সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব ঠগী বউয়ের। সে নিরবে সংসার আগলে রাখে। শীত শেষে বাড়ির কর্তা ঘরে ফিরলে সঙ্গে আনা জিনিসপত্র দেখে স্বামীর পেশাটা অনুমান করতে অসুবিধে হতো না। আসলে, সেও তো কোন ঠগী ঘরেরই মেয়ে!
তবে, সব ঠগী বউ যে বছরভর ঘরই সামলাতো এমন নয়, অনেক "বউ সোহাগী/ বউ পাগলা" ঠগীও ছিলো, যারা বউ সাথে নিয়েই পথে নামতো। তদন্তে জানা যায় "বারুনী" নামের এক ঠগী বউ নাকি স্বামীর সাথেই চলতো, স্বামীর কাজে সাহায্য করতো, " "ঝিরনী"( খুন করা) দেবার সময় শিকারকে চেপে ধরতো। আবার এক মেয়ের কথাও জানা যায়, যে নিজেই একটা দল চালাতো। তবে, দল চালাতে শুধু জমাদার বা দলপতির মেয়ে হলেই হতো না, দল চালানোর মতো নেতৃত্বের গুণাবলী সহ পুরো দলের দুমাসের অগ্রিম খোরপোষ দেবার অার্থিক ক্ষমতাও থাকতে হতো।
এমনই একজন "রুক্সিনী", ধরা পড়ার পর জানা গেল, ছ'সাত বছর আগে ওর বাবা-মা পথে খুন হয়েছে। ছোট ভাইবোন'দের বেচে দেয়া হয়েছে। জমাদার রুপলাল বলেছিলো, তোর বাপমা তোকে আশি টাকায় বেচে গেছে। সেই থেকে রুক্সিনী জমাদার পত্নী। রুপলাল যখন বাপমায়ের গলায় ফাঁস দেয় রুক্সিনী তখন তাদের বাচ্চাগুলোকে যত্নে রাখে!
রুক্সিনীর একজন সতীনও ধরা পড়েছিলো, তার বউ হবার কাহিনীও একই রকম।
তুমি কি তোমার বাবা-মাকে খুন হতে দেখেছ? জানতে চাইলেন ইংরেজ পুলিশ কর্তা।
না সাহেব, রাতের বেলা আমি ও আমার ছোট ভাই দুটি দলের মেয়েদের হেফাজতে ছিলাম, বাপ-মার সাথে আর দেখা হয় নি।
তারপর?
তার কিছুদিন পর, আমাদের বেদে দলের কাছে বেচতে নিয়ে গেলো। ভাই দুটোকে দু'শ টাকায় বেচে দিলো,, আর আমার ন্যায্য দাম না পেয়ে জমাদার নিজের কাছেই রেখে দিলো।
তখন থেকে কি তার সাথেই থাকো?
তিন চার বার সাথে নিয়েছে। বাঁকী সময় সংসারে ছিলাম।
তোমার স্বামী কয়েক মাস আগে এক গরীব ফকিরানীকে খুন করেছে। তুমি তা জানতে। সে তোমার বাবা-মা কে খুন করেছে, ভাইদের বেচে দিয়েছে। কত বাবা-মা খুন করেছে! তার সাথে ঘুরে বেড়াতে তুমি, খুন করতে দেখতে, বাপ মায়ের কোল থেকে সন্তান কেড়ে নিতে কষ্ট হয় না তোমার? তার সাথে থাকতে ঘৃণা হয় না তোমার?
রাধার ছোট্ট করে উত্তর, "কি করবো সাহেব, হাজার হোক, সে তো আমার সোয়ামী"..!!!
লেখকঃ বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমীর আইন প্রশিক্ষক ✍হাসান হাফিজুর রহমান। ।
সম্পাদক : মোঃ কবির নেওয়াজ রাজ, E-mail: mkprotidin@gmail.com, Contact: (+88) 01643-565087, 01922-619387; Mailing Address: House# 4/A, Main Road, Ati Model Town, Ati, Keraniganj, Dhaka-1312
© All rights reserved © MKProtidin.Com