এ সময় জনমনে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। মহিলা ও শিশুরা আতঙ্কিত হয়ে দ্বিকবিদিক ছুটাছুটি করে। আওয়ামীলীগের কিছু দলীয় নেতকর্মী ও স্বার্থন্বেষী মহলের ছত্রছায়ায় রূপগঞ্জ উপজেলার মুড়াপাড়া ইউনিয়নের মাহমুদাবাদ গ্রামের ছালাউদ্দিনের ছেলে রাজিব হোসেনের নেতৃত্বে প্রায়ই অবৈধ অস্ত্রের এ মহড়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
গত ১৫ দিনে এমন কয়েকটি অস্ত্রের মহড়ায় এলাকায় চরম আতংক বিরাজ করছে। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় এসব সন্ত্রাসীরা দিন দিন আরো বেপরোয় হয়ে উঠছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই নেতাদের শেল্টারেই এলাকায় মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, আধিপত্ব বিস্তারে অস্ত্রধারীদের আনাগোনা বাড়ছে। প্রায় প্রতিদিনই সন্ত্রাসীরা অস্ত্র উঁচিয়ে মহড়া দিচ্ছে। সন্ত্রাসী রাজিব হোসেন এতই দুর্ধর্ষ যে তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ কিংবা অভিযোগ করার সাহস পাচ্ছে না। তার নির্যাতন নিরবে সহ্য করে যাচ্ছে ভুক্তভোগিরা। মামলা তো দুরের কথা অভিযোগ করলেই তাদের হামলার শিকার হতে হচ্ছে।
গণপিটুণিতে নিহত রূপগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী সোলায়মানের (৩৭) ভাই সন্ত্রাসী রাজীব। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সোলায়মান রূপগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী ছিলো। এমন কোনো অপরাধ নেই যা রূপগঞ্জে তারা দুই ভাই করে নাই। হত্যা, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও ধর্ষণসহ বহু মামলার আসামী সোলায়মান (৩৭)। সোলায়মানের নামে থানায় মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে হত্যা মামলা রূপগঞ্জ এফআইআর নং ৪২ তারিখ ২৩/০৩/২০১৭ । এফআইআর নং- ২৪। তারিখ- ১২/০৪/২০১৬ হত্যা মামলা। এফআইআর নং- ০৬ তারিখ- ০৪/০২/১৪ মাদক দ্রব্য। এফআইআর নং ৪৫ তারিখ- ২৩/০৮/২০১৩ মাদক দ্রব্য। এফআইআর নং-৩৯ তারিখ ১২/০৫/১৯ নারী ও শিশু। এফআইআর নং -৭৮ তারিখ ২৪/০৪/১৯ । এফআইআর নং ২০ নারী ও শিশু নির্যাতন । এফআইআর নং ৫২ মাদকদ্রব্য। এফআইআর নং- ০৬ মাদকদ্রব্য। এফআইআর নং- ৪৫ তারিখ ২৩/০৮। সোলায়মানের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে পরিচিত রাজিব। তার ভাইয়ের মৃত্যু পর রাজীব এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছে। বর্তমানে সে রূপগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। তার একাধিক সহযোগীর সন্ধ্যান জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মুড়াপাড়া ইউনিয়নের মাহমুদাবাদ, মাছিমপুর, বাড়ৈপার, বংশীনগর, মিরকুটিরছেও, হাওলিপাড়া, টঙ্গিরঘাট, পারাইন, নারসিংগল ও কইতরবাড়িসহ আশপাশের এলাকায় মহড়া দিয়ে আতংক সৃষ্টি করছে সন্ত্রাসীরা। তারা অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে চলাচল, বহন ও প্রদর্শনের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। আগ্নেয়াস্ত্র, রাম দা, ছুরি, লোহার রড, এসএস পাইপ নিয়ে রাজিব হোসেনের সহযোগী মাছিমপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলী, রিয়াজ হোসেন, পরদেশী শফিক সহ ২৫/৩০ জনের একটি দল একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র হাতে বোচারবাগ এলাকায় মহড়া দেয়। ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে। বিষয়টি রূপগঞ্জ থানা পুলিশকে জানালেও অস্ত্র জব্দ করা হচ্ছে না। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। এ সকল সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি থাকলেও পুলিশের খাতায় তারা পলাতক। আর দিনদুপুরে অস্ত্র উঁচিয়ে মহড়া দিচ্ছে। কিন্তু পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না। মুড়াপাড়া এলাকায় যত হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে সে সকল ঘটনায় ব্যবহৃত দুই একটি ছাড়া কোন অস্ত্রই পুলিশ উদ্ধার করতে পারেনি। মহড়ায় ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করা না হলে মুড়াপাড়ায় আবারো হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটতে পারে বলে এলাকাবাসী মনে করছেন।
মুড়াপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব তোফায়েল আহমেদ আলমাছ গত ১ জুন মাছিমপুর দেওয়ানবাড়ি গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে মোহাম্মদ আলী (৩২) ও রিয়াজ (২০), মাহমুদাবাদ গ্রামের ছালাউদ্দিনের ছেলে রাজিব হোসেন (৩০) সহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেছেন। মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ আধিপত্য বিস্তার, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও অস্ত্রের মহড়া দিয়ে ফাঁকা গুলিবর্ষণের ঘটনায় তিনি এ অভিযোগ করেন। কিন্তু কোন ফল হয়নি। তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই গ্রেফতারী পরোয়ানা থাকলেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না।
এলাকাবাসী জানায়, দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে পরিচয়দানকারী রাজিব হোসেন সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, মৎস খামার দখল, জমি দখল, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। রাজিব হোসেন ও তার অপর সহযোগী অস্ত্রহাতে মহড়া দেওয়ার ঘটনা পেশিশক্তির নগ্নতা প্রকাশ হিসেবে মনে করছে তারা। মাহমুদাবাদ ও মাছিমপুর এলাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র সহ নানা ধরণের দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তার সহ চাঁদাবাজি করাই অস্ত্রধারীদের মূল লক্ষ্য।
অস্ত্রের মহড়ার প্রত্যক্ষদর্শী রূপসী গ্রামের আবু সালেহ আহমেদ বলেন, গতকাল ২০ জুন বেলা সোয়া এগারোটায় তিনি তারাবো পৌরসভার বোচারবাগ হয়ে কর্ণগোপ যাচ্ছিলেন। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা অস্ত্রের মহড়া নিয়ে ফাঁকা গুলিবর্ষণ করতে করতে একদল যুবক গন্ধর্বপুরের দিকে যাচ্ছিলেন। এই মিছিল থেকে দুই যুবক অস্ত্র উঁচিয়ে তিনটি ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে। তাতে পথচারী ও এলাকাবাসী আতংকিত হয়ে পড়ে।
বোচারবাগ গ্রামের আব্দুল আউয়াল বলেন, অবিলম্বে এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা উচিৎ। অস্ত্র প্রদর্শন করা কিংবা ভীতি সঞ্চার করা আইনসিদ্ধ হতে পারে না। পুলিশের দায়সারা দায়িত্ব এলাকাবাসীকে স্তম্ভিত করেছে। এ অস্ত্র মহড়ার কুশীলবরা ছাড়া পেয়ে গেলে এ ধরণের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে। অন্যরা উৎসাহিত হবে।
২০১৬ সালের ২৯ নভেম্বর মুড়াপাড়ার হাউলিপাড়া গ্রামের রহিমাকে জবাই করে হত্যা করে। এ ঘটনায় রাজিব হোসেন আসামি। রূপগঞ্জ থানার মামলা নং ৬০(১১)২০১৬। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে রাজিব হোসেন ও তার সহযোগীরা ২০১৮ সালের ২৮ জুন মাছিমপুর গ্রামের আলম মিয়ার ছেলে শাওন মিয়াকে হত্যার চেষ্টা করে নগদ টাকা, মোবাইল সেট ও মোটরসাইকেল লুট করে। রূপগঞ্জ থানায় মামলা নং ৯১(৬)২০১৮। দাবিকৃত চাঁদার টাকা না পেয়ে ২০১৯ সালের ২২ এপ্রিল মুড়াপাড়া ইউপি সদস্য ও মেসার্স আশিক এন্টাপ্রাইজের ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্কের মালিক রেহেনা আক্তারের উপর হামলা চালিয়ে ব্যবসার আর্থিক ক্ষতি সাধন করে। এ ব্যাপরে রাজিব হোসেন ও তার সহযোগীদের আসামি করে রূপগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নং ৭৮(৪)২০১৯।
রূপগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি কামরুল হাসান তুহিন বলেন, মাহমুদাবাদ গ্রামের রাজিব হোসেন যুবলীগের কোন কর্মী, সমর্থক কিংবা নেতাও নন। রূপগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান শাহীন বলেন, কোন সন্ত্রাসীরই যুবলীগে স্থান নেই। সন্ত্রাসীরা যে দলেরই হোক তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় সমাজে অরাজকতার সৃষ্টি হবে।
রূপগঞ্জ থানার ওসি এ এফ এম সায়েদ বলেন, সন্ত্রাসীরা যে দলেরই হোক কোন ছাড় দেওয়া হবে না। সুষ্ঠু তদন্ত করে সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ্ নুসরাত জাহান বলেন, লাইসেন্স বিহীন অস্ত্র যদি কেউ ব্যবহার করে এবং লাইসেন্সের শর্তের বাইরে যদি কেউ লাইসেন্সধারী অস্ত্রের মহড়া দেয় সেটাও অপরাধ। অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।