ব্রাক্ষনবাড়িয়ার নবীনগরের সাংবাদিক গৌরঙ্গ দেবনাথ অপু কালেরকন্ঠের চাকরি হারিয়ে আজ ৪ জুলাই সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির কাছে যা বললেন তা হুবহু তুলে ধরা হলো...
প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা,
সশ্রদ্ধ সালাম নিবেন।
যুগান্তরের নওগা প্রতিনিধিকে যেভাবে কর্তৃপক্ষ অব্যাহতি দিয়েছে, সেটি খুবই নিন্দনীয় ও উদ্বেগজনক।
এর আগে আমার সাথে যা করা হলো, সেটি আরও বেশী ভয়ানক। কিন্তু কার কাছে বিচার চাইবো? সাংবাদিকদের স্বাধীনতা যে কতটুকু এখন আছে, সেটি কমবেশী আমরা সকলেই জানি।
সবচেয়ে দু:খের বিষয় হলো, বেশীরভাগ সাংবাদিকই এখন স্রোতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কেবল সাংবাদিকতার নাম ভাঙ্গিয়ে ব্যক্তিস্বার্থে তারা শুধুমাত্র নামধারী সাংবাদিকতা করে যাচ্ছেন।
যার কারণে আমাদের মতো প্রকৃত মাঠের সৎ ও মেধাবী সাংবাদিকেরা আজ চরমভাবে কোনঠাসা।।
বন্ধুগণ,
সম্প্রতি একমাসের মধ্যে দুই দুইবার আমার ওপর হামলা হলো। আমি মামলাও করলাম। কিন্তু সেরকম কাংখিত কোন রেজাল্ট গত দুইমাসেও পাচ্ছি না।
হামলাকারীরা বরং প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই হলো প্রকৃত বাস্তব অবস্থা। আমার গোটা পরিবার নিরাপত্তাহীন থাকলেও, তাতে কারও কিচ্ছু যায় আসে না ? তবে যে কোন সময় আবার হামলা, মামলা হতে পারে!
কারণ, স্থানীয় এমপির বিপক্ষে সত্য ও ন্যায়নিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করার কারণে আমি যেই কথিত প্রভাবশালী দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকায় কাজ করতাম, সেই পত্রিকার কর্তৃপক্ষ আমাকে সোজা সাপ্টা বলে দিয়েছিল, স্থানীয় এমপি এবাদুল করিম বুলবুলের সাথে আমি যেন সুসম্পর্ক বজায় রেখে রিপোর্টিং করি। অন্যথায় কালের কণ্ঠে আমার চাকরি থাকবেনা।
প্রথম আলোতে ১৬ বছর সহ দুই যুগের বেশী সময ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার পর যেটুকুই শিখেছি, সেই সততা, দেশপ্রেম আর আদর্শিক নীতি নৈতিকতার সুশিক্ষা পাওয়ার পর কালের কণ্ঠের এ ধরণের অনৈতিক নির্দেশনাটি আমার কাছে ভীষণ আপত্তিকর মনে হয়েছে। শুধু তাই নয়, নির্দেশনাটি আমার আত্মসম্মানেও মারাত্মকভাবে লেগেছে।
তাই কালের কণ্ঠ কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক কারও সঙ্গে আপোষ করিনি, এমপির সঙ্গে সুসম্পর্কও তৈরী করতে পারিনি।
কারণ, একজন মাঠের সত্যনিষ্ঠ, ন্যায়নিষ্ঠ সংবাদকর্মী হিসেবে এটি আমার দ্বারা কোনভাবেই বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলে, সেটি আমার দ্বারা সম্ভবও হয়নি।
এমপির সঙ্গে আমি সমঝোতা করতে পারিনি বলে এখন শুনছি, কালের কণ্ঠে আমার নাকি চাকরি নেই। কোন ধরণের নোটিশ ছাড়াই আমার চাকরিটা চলে গেল!!
হায়রে সাংবাদিকতা....!!!!
শুনেছি, সম্প্রতি আমার স্থলে অন্য একটি ছেলেকে নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে কালের কণ্ঠ কর্তৃপক্ষ, যা এখন ফেসবুকে আমার প্রতিপক্ষ সাংবাদিকেরা ভাইরাল করে আমাকে সমাজে হেয় করছেন।
অথচ আমার ওপর দুই বারের হামলা নিয়ে নবীনগরের সকল সাংবাদিকেরা সম্পূর্ণ নীরব ভূমিকা পালন করলো। বরং উল্টো এমপির লোকেরা আমাকে হেনস্তা করতে আমার বিরুদ্ধে মহিলা দিয়ে শহরে ঝাড়ু মিছিল করালো, সংবাদ সম্মেলনে আমার পরিবারের বিরুদ্ধে নানা অসত্য গিবত গাইলো, সেগুলো নিয়ে স্থানীয় সাংবাদিকেরা ঠিকই রিপোর্ট করলো। এই হলো নবীনগরের সাংবাদিকতা..???
বন্ধুগণ,
গত দুই মাস ধরে আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া যাবতীয় এসব ঘটনার সবকিছু আমি ফেসবুকসহ আমার অভিভাবকতুল্য সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের অনেককেই লিখে জানিয়েছি।
কিন্তু শ্রদ্ধেয় সকলেই আমাকে কিছুটা সময় ধৈর্য ধরতে বলেছেন।
সকলের পরামর্শে এখনও চরম ধৈর্য ধরেই বসে আছি।
কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, বাংলাদেশে টাকা আর ক্ষমতাই এখন সবকিছুর হর্তাকর্তা বিধাতা!!!
আমাদের মতো সৎ, দেশপ্রেমিক, সত্যনিষ্ঠদের ন্যুনতম মূল্য আছে বলে আর মনে হচ্ছে না!!!
এরপরও যখন আপনাদের মতো সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিকদের দেখি, নিয়মিত অসহায়দের পক্ষে কলম ধরেন, তখন প্রতিকারের আশায় সব দু:খ মুহূর্তেই ভুলে যাই।
তবে যেকোন সময় হয়তো একদিন আমিও আমার শক্তিশালী প্রতিপক্ষের ইশারায় "নিখোঁজ" কিংবা "গুম" হয়ে যেতে পারি ?
তখন আমার অসহায় পরিবারটির দিকে আপনারা সবাই একটু সদয় সুদৃষ্টি রাখবেন, প্লিজ।।
ভালো থাকবেন সবাই। অনেক ধন্যবাদ আপনাদেরকে।
বিনীত-
গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু
গণমাধ্যমকর্মী
০১৭১১-৪৪৫৭৯১
k.kanthoapu@gmail.com
সম্পাদক : মোঃ কবির নেওয়াজ রাজ, E-mail: mkprotidin@gmail.com, Contact: (+88) 01643-565087, 01922-619387; Mailing Address: House# 4/A, Main Road, Ati Model Town, Ati, Keraniganj, Dhaka-1312
© All rights reserved © MKProtidin.Com