নাছরুল্লাহ আল কাফি: সুদের তিনগুণ টাকা ও বসতি জমি লিখে নিয়েও ক্ষান্ত হয়নি সুদের কারবারি ও ঐ এলাকার প্রভাবশালী কায়েশ তালুকদার। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কায়েশের মামা জসিম সর্বহারা পার্টির নেতা। ঐ সুত্রে কায়েশ তালুকদার পটুয়াখালী জেলা সদরের অদূরে জৈনকাঠি ইউনিয়নের ঠেংগাই এলাকাসহ আসপাশের এলাকায় গড়ে তোলেন ত্রাসের রাজত্ব।
ভুক্তভোগী রাখাল ভদ্রকে নির্যাতনের পর গ্রামছাড়া করে সুদের সূত্র ধরে গভীর রাতে হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে রাখালের স্ত্রী পূর্ণিমার ওপর, ঝাপিয়ে পড়া হায়নাদের নির্যাতনের শিকার হয়ে দুই শিশুসন্তানের সামনে সম্ভ্রম হারিয়ে প্রাণ দিতে হয়েছে ওই গৃহবধূকে।
ঘটনা আড়াল করতে নিহতের ছেলে আকাশকে দেয়া হয়েছে প্রাণনাশের হুমকি। এরই ধারাবাহিকতায় ভিকটিম পরিবারের মোটা দাগের জমিতে সীমানা প্রাচীর দিয়ে দখলের প্রস্তুতিও নিয়েছে। এত কিছুর পরও রহস্য উদঘাটনে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। বরং একটি ইউডি মামলা অন্তর্ভুক্ত করেছে পুলিশ।
নিহতের দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে আকাশ ভদ্র (১৫) ও পরিবার এমন রোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। ঘটনার পর জড়িতরা গা-ঢাকা দিলেও এখন প্রকাশ্যে দম্ভোক্তি ছুড়ছেন। পাশাপাশি ঘটনা আড়াল করতে কৌশল চালাচ্ছে জড়িতরা। গত ৯ এপ্রিল জেলা সদরের অদূরে জৈনকাঠি ইউনিয়নের ভাগিরাবাদ গ্রামে এমন ঘটনা ঘটে।
পূর্ণিমার স্বামী রাখাল ভদ্র সাংবাদিকদের জানান, আর্থিক সংকটে ২০১৬ সালের প্রথম দিকে স্থানীয় দুলাল তালুকদারের ছেলে কায়েশ তালুকদারের কাছ থেকে দুই লাখ ৩৫ হাজার টাকা সুদে নেন তিনি। জামানত বাবদ কায়েশকে দেয়া হয় একটি অলিখিত স্ট্যাম্প ও ব্যাংক চেক। প্রতি মাসে ৮% হারে টানা চার বছর সুদের ঘানি টেনে সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করেন রাখাল।
রাখাল ভদ্র আরও জানান, আসামি কায়েশ তালুকদারসহ অন্য অন্য আসামিগন বাড়িঘরসহ সম্পুর্ন জমি জোর পূর্বক লিখে নিয়ে যায় এবং আমার বিক্রি করা জমি আমাকে মারধর করিয়া আবারও বিক্রি করায় আমার ভাগিনা রন্ধন মাস্টার এর কাছে। শেখান থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা নিয়ে যায় ১ নং আসামি কায়েশ তালুকদার।
টাকা পরিশোধের পর চেক-স্ট্যাম্প ফেরত চাওয়া হলে টালবাহানা শুরু করে কায়েশ। টালবাহানার একপর্যায়ে রাখালের বাড়ি ও জমি লিখে নিতে প্রভাবিত করে কায়েশ। এতে রাখাল আপত্তি জানালে সেহাকাঠি বাজারে প্রকাশ্যে মারধর করে নীরব থাকার হুশিয়ারি দেয়। রাখালকে নানা হুমকির মুখে ফেলে খালাতো ভাই আব্দুল বাসেদের নামে ২৪ শতাংশ, বোন জামাতা রবের নামে ২১ শতাংশ এবং নিজের নামে ৬ শতাংশসহ মোট ৫১ শতাংশ জমি লিখে নেয় কায়েশ।
লিখে নেয়া ওই জমি দখল নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে কায়েশ গং। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে জৈনকাঠি ইউনিয়ন পরিষদের পেছনে নিয়ে রাখালকে মারধর করে গ্রাম ছাড়তে বলেন। নির্যাতনের তিন দিনের মাথায় বাড়ি ছাড়েন রাখাল। তার অবর্তমানে কায়েশ তার স্ত্রীকে নানাভাবে হয়রানি করে।
সুদের টাকার সূত্র ধরে কায়েশ গং তার স্ত্রীকে নির্যাতন করে হত্যা করেছে। পরিবারের দেয়া খবরে তিনি পিরোজপুর থেকে রওনা দিয়ে আসতে দেরি হয়। পটুয়াখালী পৌঁছে সদর থানাকে অবহিত করেন বিষয়টি। থানার এসআই শামীম বাড়ি থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠান।
রাখালের বোন শোভা রানী সাংবাদিকদের বলেন, স্বামীর অবর্তমানে পূর্ণিমাকে উত্ত্যক্ত শুরু করে কায়েশ বাহিনী। যখন-তখন লোকজন নিয়ে বাড়িতে হাজির হয়ে হুমকি-ধমকি দিত। মোবাইল ফোনে শুরু করে যৌন নিপীড়ন প্রস্তাবসহ নানা অশ্লীল কথাবার্তা বলত। গভীর রাতে ঘরের চালায় ঢিল ছুড়ে দরজায় ধাক্কা দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করত। উত্ত্যক্ত থেকে রেহাই পেতে প্রতিরাতে পূর্ণিমা আশ্রয় নিতেন বাড়ির অন্য ঘরে। স্ত্রী হত্যার বিষয় রাখাল ভদ্রর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পটুয়াখালী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তিনি আসামিদের কাছথেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে আসামিদের গ্রেফতার করছেনা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে আসামিরা। এবং আসামিরা রাখাল ভদ্র কে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিয়ে বলে, তোর স্ত্রী কে হত্যা করেছি এবার তোর পালা তোকেও হত্যা করবো রাখাল ভদ্র নিজের প্রাণ বাচাতে ১৫ বছরের ছেলে ও ২ বছরের শিশু কন্যা কে নিয়ে নিজের গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে মানবতার জীবন যাপন করছে। রাখাল ভদ্রের দাবি তার অবুঝ শিশু সন্তান দের মা হারা করেছে তাদের ফাঁশি হয় এমনটাই দাবি জানিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আইজির কাছে। এবং তার সন্তানরা যেন মা হত্যার বিচার পায়।
নিহত পূর্নিমা রানীর ছেলে আকাশ প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, আমার মা নাই এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি আমাদের মা। আপনার কাছে আমার মায়ের হত্যা কারি দের বিচার চাই আপনি মানবতার মা। অসহায় এতিম দের পাশে থাকেন, আমাদের পাশেও থাকবেন।
এ বিষয়ে পটুয়াখালী সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আক্তার মোর্শেদ মুঠোফোনে জানায়, এ মামলাটি চলমান রয়েছে। হত্যার মেডিকেল রিপোর্ট এখনও আসেনি। আসলে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
সম্পাদক : মোঃ কবির নেওয়াজ রাজ, E-mail: mkprotidin@gmail.com, Contact: (+88) 01643-565087, 01922-619387; Mailing Address: House# 4/A, Main Road, Ati Model Town, Ati, Keraniganj, Dhaka-1312
© All rights reserved © MKProtidin.Com