ঠাকুরগাঁওয়ে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে একের পর এক ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে’ মামলা করে সারাদেশে মামলাবাজ ডাক্তার হিসেবে আলোচিত হয়ে উঠেছেন নাদিরুল আজিজ চপল (৫৪)। তিনি ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের দাপুটে তত্ত্বাবধায়ক। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে অস্থায়ী নিয়োগের এক নারী ক্লিনার ও ডাঃ নাদিরুলকে ঘিরে বেশ কিছুদিন ধরে নানা মুখরোচক কথাবার্তা ছড়িয়ে রয়েছে শহরময়। নানা কেলেংকারী, নোংরা সমালোচনা আর বিতর্ক যেন দুর্ভাগ্যের নিয়তির মতো আঁকড়ে আছে তাকে। এতেও মিলছে না রেহাই। এখন করোনা মহামারী ও হাসপাতাল কেন্দ্রীক অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাটসহ বিভিন্ন অপরাধ অপকর্মে ডাঃ নাদিরুলের সম্পৃক্ত থাকার নানা তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। অজ্ঞাত দাপটের এ হাসপাতাল কর্মকর্তার বিরুদ্ধে খোদ প্রধানমন্ত্রীর সহানুভূতিকে পুঁজি করে প্রতারণার ভয়ঙ্কর অভিযোগও উঠেছে।
ঠাকুরগাঁও’র সিভিল সার্জন কার্যালয় ও সদর হাসপাতালের ‘বঞ্চিত’ কর্মিদের বরাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রনালয়ের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের বরাবর পাঠানো লিখিত অভিযোগে এ প্রতারণার অভিযোগ তোলা হয়। সেখানকার ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা, কর্মচারী পরিচয়ের অন্তত ১৯ জনের সাক্ষরিত এ অভিযোগে বলা হয়, গত বছরের জুলাই-আগষ্টে ঠাকুরগাঁও জেলায় কেবলই করোনার ঢেউ লাগতে শুরু করে। ঠিক তখনই হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ নাদিরুল আজিজ চপল হঠাত করেই হাসপাতালে হাজির হওয়া থেকে বিরত থাকেন এবং সহযোগিদের মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে দেন যে, তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। অজ্ঞাত স্থানে থাকাবস্থায়ই ডাঃ নাদিরুল নিজের এবং অপরাপর ছয় জন ডাক্তার কর্মকর্তা ‘করোনায় আক্রান্ত’ হয়েছেন মর্মে যাবতীয় কাগজপত্রদিও প্রস্তুত করিয়ে নেন।
সরাসরি উপস্থিত না হয়েও যাদের নামে ‘করোনা পজেটিভ’ সংক্রান্ত কাগজপত্র তৈরি করিয়ে নেয়া হয় তারা হলেন- ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা.নাদিরুল আজিজ চপল, শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. শাহজাহান নেওয়াজ, চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. আশরাফুল ইসলাম, গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. রোকেয়া সাত্তার, কার্ডিওলজিস্ট ডা. রেজাউল করিম শিপলু, মেডিকেল অফিসার ডা. জিপি সাহা ও রানীশংকৈল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. মিজানুর রহমান। প্রায় একই সময়ে ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা নজরুল ইসলামসহ ৭ জন নার্স ও কর্মচারীও করোনায় আক্রান্ত হন বলে জানানো হয়। কিন্তু সিভিল সার্জন কার্যালয়ের করোনাক্রান্ত সাত জনই হোম কোয়ারেন্টাইন শেষে ১৪ আগস্টের মধ্যে স্ব স্ব দাপ্তরিক কাজে যোগদান করলেও তত্বাবধায়ক ডা. নাদিরুলসহ কয়েকজন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির কথা জানিয়ে কর্মস্থলে গড় হাজির থাকেন।
পরবর্তীতে ১৬ আগষ্ট পার করে তারা কর্মস্থলে ফিরেই ‘করোনায় আক্রান্ত ডাক্তার, কর্মকর্তা’ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত মোটা অঙ্কের সহায়তার টাকা তোলার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠেন। এ বিল আদায়ের কাগজপত্র প্রস্তুতিতে ডাঃ নাদিরুলের দৌড়ঝাঁপ ছোটাছুটি আর তড়িঘড়ি করা দেখেই অভিযোগকারীদের মধ্যে প্রাথমিকভাবে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে তারা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, করোনায় আক্রান্ত অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার কথা বলা হলেও তিনি মূলত ঠাকুরগাঁওয়ের সরকারি বাসভবনেই আত্মগোপনে ছিলেন। প্রমাণ হিসেবে অভিযোগকারীরা উল্লেখ করেন যে, ১২ আগস্ট তারিখে ডাঃ নাদিরুল ও তার কয়েকজন সঙ্গিকে ঠাকুরগাঁও সদর থানায় সাংবাদিক বিশাল রহমানের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের ও তাকে গ্রেফতার করাতে শহরময় ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে। সদর থানায় ডাঃ নাদিরুল আজিজ চপল নিজে হাজির ছিলেন এবং বাদী হিসেবে তিনি মামলার এজাহারে স্বাক্ষরও করেছেন। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডাঃ নাদিরুল আজিজের দায়েরকৃত সব মামলার তদন্তকারী অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তারই পছন্দের সাব ইন্সপেক্টর ডালিম কুমার রায়। সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তাও স্বীকার করে জানান, ১২ আগষ্ট মামলা রুজুর দিন বাদী ডাঃ নাদিরুল আজিজ নিজেই থানায় আসেন এবং দীর্ঘসময় অবস্থান করেন।
এসব কারণেই অভিযোগকারীরা প্রশ্ন তুলেছেন, প্রায় শত কিলোমিটার দূরের রংপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনার রোগী রিলিজ হওয়ার আগেই ঠাকুরগাঁও থানায় এসে মামলা করলেন কিভাবে? কেবলই প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত করোনা সহায়তার লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার প্রতারণাই কী তার উদ্দেশ্য ছিল? ্সব বিষয় গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তদন্তপূর্বক কঠোর ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি জানানো হয়েছে।
# সাঈদুর রহমান রিমন, ইনভেস্টিগেশন সেল ইনচার্জ "বাংলাদেশ প্রতিদিন।
সম্পাদক : মোঃ কবির নেওয়াজ রাজ, E-mail: mkprotidin@gmail.com, Contact: (+88) 01643-565087, 01922-619387; Mailing Address: House# 4/A, Main Road, Ati Model Town, Ati, Keraniganj, Dhaka-1312
© All rights reserved © MKProtidin.Com