একজন নোবেলজয়ীর অধীনে রাজনৈতিক পটভূমি বদলের বিশেষ আন্তজাির্তক খবর থেকে মিয়ানমার এখন হতাশার বিপজ্জনক উপাখ্যান হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি)। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে বাধ্য হয়ে রাখাইন রাজ্য থেকে সাত লাখ রোহিঙ্গার পালিয়ে বাংলাদেশে যাওয়ার ঘটনায় শুরু থেকেই ‘নিষ্ক্রিয় ভূমিকা’ রাখায় অং সান সু চির সরকারকে ব্যর্থ বলছে ব্রাসেলসভিত্তিক সংগঠনটি। সু চির সমালোচনা করে আইসিজি মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে বলছে, ‘স্টেট কাউন্সিলর (মিয়ানমারের) প্রায়ই নিজেকে নিরাসক্ত ও বিচ্ছিন্নভাবে উপস্থাপন করে থাকেন।’
২০১৫ সালে আধা-বেসামরিক সরকারের অধীনে নিবার্চনে অধর্শতকের সেনা কতৃত্বের অবসান ঘটিয়ে সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় আছে।
১৯৯০ সালে সু চির নেতৃত্বাধীন দল মিয়ানমারের জাতীয় নিবার্চনে জয়লাভ করলেও সেনাবাহিনী তাকে ক্ষমতায় যেতে দেয়নি। শান্তিতে নোবেলজয়ী মিয়ানমারের গণতন্ত্রের নেতা ৭৩ বছর বয়সী সু চি গত দুই দশকের প্রায় পুরোটা সময় গৃহবন্দি ছিলেন।
বন্দি হওয়ার ওই বছর নিজের বাসভবন প্রাঙ্গণে দেশবাসীর উদ্দেশে সু চির অনুপ্রেরণামূলক বক্তৃতার কথা মনে করিয়ে দিয়ে ক্রাইসিস গ্রুপের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে তিনি ভীষণ রকম নীরব হয়ে পড়েছেন। জাতির উদ্দেশে প্রতি মাসে রেডিওতে প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন ভাষণ দিতেন, সেই চচার্ও বন্ধ করে দিয়েছেন সু চি। প্রায় কোনো মিডিয়াতেই তিনি সাক্ষাৎকার দেন না এবং খুব কমই দেশের ভেতরে ভ্রমণ করেন। যদিও শুরুতে তিনি প্রায়ই বিদেশে রাষ্ট্রীয় সফরে যেতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন, রোহিঙ্গা সংকটের পর থেকে বিশ্ব আর আগের মতো বন্ধুত্বপূর্ণ নয় তার জন্য। তিনি এখন নিয়মিতই আন্তজাির্তক ভ্রমণ এড়িয়ে চলেছেন।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘গত ২১ আগস্ট তিনি সিঙ্গাপুরে আন্তজাির্তক নীতি নিয়ে বিরল একটি বক্তৃতা দিয়েছেন, তবে এই বক্তৃতা শুধু আঞ্চলিক পরিসরের মানুষের জন্যই, আন্তজাির্তক উদ্বেগ প্রসঙ্গে এখানে সামান্যই ছিল। এটা আশ্চযর্জনক নয় এই কারণেই যে, এই নড়বড়ে সরকার রোহিঙ্গাবিরোধী জনমত এবং সেনাবাহিনীর আগ্রাসী অবস্থানের মতো সংকটের একটি যথাযথ প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারেনি।’
১২ মাসের কম সময়ের মধ্যে দেশটি তার ভাবমূতির্ হারিয়েছে উল্লেখ করে ক্রাইসিস গ্রুপ বলছে, ‘রোহিঙ্গা গ্রামবাসীদের ওপর নিষ্ঠুর আক্রমণ এবং তাদের বাস্তুহারা করার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ার এই ব্যথর্তা রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবকে নিদের্শ করে। এটি মিয়ানমার, এর সরকার ও ব্যক্তিগতভাবে সু চির ভাবমূেিতর্ক এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে যে, তা পুনরুদ্ধার করা যাবে না।’
গণতন্ত্রের সংগ্রামের জন্য নন্দিত নেত্রী সু চি রোহিঙ্গা সংকটের পর নিন্দাই কুড়াচ্ছেন বেশি। এরই মধ্যে তিনি অনেক সম্মাননা ও পুরষ্কার হারিয়েছেন। রোহিঙ্গা সংকটের বিস্তৃতির জন্য মিয়ানমার সরকারের সক্রিয়তার অভাবকে চিহ্নিত করে ক্রাইসিস গ্রুপ বলছে, নিকট ভবিষ্যতে এর পরিবতর্ন হওয়ার তেমন সম্ভাবনা তারা দেখছে না। তারা বলছে, ‘সরকারের ওপর মিয়ানমারের জনগণের সমথর্ন রয়েছে। পরিস্থিতির সমাধানে অথর্বহ পদক্ষেপ নিতে আন্তজাির্তক পযের্বক্ষণ ও চাপ গড়ে তুলতে জাতিসংঘের বিশেষ দূতসহ শক্তিশালী কূটনৈতিক উদ্যোগের প্রয়োজন পড়বে।’ যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে শান্তির পক্ষে কাজ করে যাওয়া স্বাধীন সংগঠনটির মতে, আন্তজাির্তক অপরাধসমূহের জবাবদিহিতার প্রশ্নে জাতিসংঘের সহায়তায় একটি স্বাধীন প্রক্রিয়াই হতে পারে সম্ভাব্য পদ্ধতি। সংবাদসূত্র : রয়টাসর্ অনলাইন
সম্পাদক : মোঃ কবির নেওয়াজ রাজ, E-mail: mkprotidin@gmail.com, Contact: (+88) 01643-565087, 01922-619387; Mailing Address: House# 4/A, Main Road, Ati Model Town, Ati, Keraniganj, Dhaka-1312
© All rights reserved © MKProtidin.Com