☆ স্বামীর একাধিক পরকিয়ায় অন্ত:সত্ত্বা গৃহবধূ ও শিশু সন্তানের জীবন বলি
☆ মশিয়াহাটিতে পাঁচ শতাধিক মানুষের মানববন্ধন
☆ সন্দেহের তীর ভাড়াটিয়া পুলিশ কর্মকর্তার দিকেও
জেমস আব্দুর রহিম রানা: যশোরের মণিরামপুরে স্বামীর একাধিক পরকীয়ায় জীবন বলি দেয়া অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ পিয়া মন্ডল (২৩) ও তিন বছরের কন্যা সন্তান কথা মন্ডলের জীবন দেয়ার ঘটনার প্রতিবাদে এবার তিন উপজেলার মানুষ একাট্টা হয়েছেন। তারা প্রভাষক স্বামী কণার মন্ডলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে আবারও রাস্তায় নেমে মানববন্ধন করেছেন। মানববন্ধন থেকে প্রভাষক কণার মন্ডলকে লম্পট দাবি করে তার ‘ফাঁসি চাই’ স্লোগানে প্রকম্পিত হয়েছে এলাকা। এসময় তারা নেহালপুর পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা কণার মন্ডলের প্রতিবেশি ভাড়াটিয়া এসআই গৌতমের দিকেও সন্দেহের তীর ছুঁড়েছেন।
শুক্রবার (১৩ আগস্ট) যশোর জেলার অভয়নগর ও মণিরামপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী মশিয়াহাটি কলেজের সামনে মশিয়াহাটি বাজারে এলাকাবাসীর আয়োজনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে যশোরের অভয়নগর ও মণিরামপুর উপজেলা এবং খুলনার ফুলতলা উপজেলার জামিরা ও দত্তগাতী অঞ্চলের নারী-শিশু ও বৃদ্ধসহ পাঁচ শতাধিক মানুষ অংশ গ্রহন করে।
মানবন্ধন থেকে বক্তারা অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ ও তার শিশুর কন্যার মৃত্যুকে আত্মহত্যা নয় পরিকল্পিত হত্যা বলে দাবি করেন। এবং প্রভাষক কণার মন্ডলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তোলেন। এসময় শত কন্ঠে ‘ কণার মন্ডলের ফাঁসি চায়’ স্লোগানে প্রকম্পিত হয় এলাকা।
বক্তারা অভিযোগ করেন, লম্পট প্রভাষক কণার মন্ডলের পরকিয়ার প্রতিবাদ করায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর উপর প্রায়ই নির্যাতন করতো। একাধিকবার নির্মমভাবে মারপিট করে টয়লেটে আটকে রাখার পর স্থানীয়রা যেয়ে উদ্ধার করেছে। বেশ কয়েকবার বাবার বাড়ি চলে গেলেও নানাভাবে অসহায় পরিবারটিকে হুমকি ধামকি ও ভয় দেখিয়ে পূণরায় ফিরে আসতে বাধ্য করেছে
তাদের অভিযোগ, কণার মন্ডল প্রায়ই হুমকি দিতো মামলা করলে তার কিছু হবেনা। পুলিশ তার পকেটে থাকে এমন হুংকার ছেড়ে।
বক্তারা মণিরামপুর উপজেলার নেহালপুর পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক কর্মকর্তা (বর্তমানে যশোরের পিবিআইতে কর্মরত) কণার মন্ডলের প্রতিবেশি ভাড়াটিয়া এস আই গৌতমের দিকেও সন্দেহের তীর ছোঁড়েন। তারা অভিযোগ করেন, কণার মন্ডলের সাথে এসআই গৌতমের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব। বন্ধুত্বের সুবাদে কণার মন্ডলের সমস্ত অপকর্মের সহায়তা করতেন এসআই গৌতম।
বক্তারা আরও অভিযোগ করেন, ঘটনার দিন কণার মন্ডলের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও তিন মাস বয়সী শিশুর লাশ ঘরে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকলেও স্ত্রী মেঝেতে অনেকটা বসা অবস্থায় ছিলেন। থানা পুলিশকে খবর দেয়ার আগেই এসআই গৌতম বন্ধুকে রক্ষার জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে রশি কেটে লাশ দু’টিকে নামিয়ে ফেলেন।
তারা মামলাটির সুষ্টু তদন্তের জন্য পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থার (ডিবি) কাছে তদন্তভার স্থানান্তরের দাবি জানান।
এসময় কণার মন্ডলসহ এসআই গৌতমেরও শাস্তির দাবি তোলেন বক্তারা।
জানাগেছে, যশোরের মণিরামপুর উপজেলার কুলটিয়া ইউনিয়নের সুজাতপুর গ্রামের ননি মন্ডলের ছেলে মশিয়াহাটি ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক কনার মন্ডলের সাথে পাঁচ বছর আগে বিয়ে হয় অভয়নগর উপজেলার দত্তগাতী গ্রামের ভগিরত মন্ডলের মেয়ে পিয়া মন্ডলের। বিয়ের পর কনার মন্ডল স্ত্রীকে নিয়ে কুলটিয়া বাজারের পাশে দোতলায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে তারা সুখে সংসার করছিল। এরই মধ্যে পিয়ার কোলজুড়ে আসে একমাত্র সন্তান কথা মন্ডল। কথা মন্ডলের বর্তমান বয়স তিন বছর। অভিযোগ ওঠে সূদর্শন ও বাকপটু কনার মন্ডল একাধিক মেয়ের সাথে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি জানাজানি হলে কনার এবং পিয়ার মধ্যে প্রায় ঝগড়া হতো। পরকীয়ার প্রতিবাদ করায় কনার মন্ডল প্রায়ই পিয়াকে মারপিট করতো।
ঘটনার দিন (৭ আগস্ট) শনিবার সকালে কনারের সাথে স্ত্রীর বাকবিতন্ডা হয়। ওই দিন বিকালে মণিরামপুর উপজেলার নেহালপুর ফাঁড়ি পুলিশ কণার মন্ডলের ভাড়া বাড়ির নিজ ঘর থেকে স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা পিয়া মন্ডল (২৩) ও তিন বছরের শিশু কন্যার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে।
খবর পেয়ে রাতেই পিয়ার দাদু কমলেশ মন্ডলসহ তার অভিভাবকরা ঘটনাস্থলে এসে ঘটনাটিতে পরিকল্পিত হত্যাকান্ড দাবি করে। এসময় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী কনার মন্ডলকে লাঞ্ছিত করে। পুলিশ বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর হাত থেকে কনার মন্ডলকে উদ্ধারের পর তাকে আটক করে।
সম্পাদক : মোঃ কবির নেওয়াজ রাজ, E-mail: mkprotidin@gmail.com, Contact: (+88) 01643-565087, 01922-619387; Mailing Address: House# 4/A, Main Road, Ati Model Town, Ati, Keraniganj, Dhaka-1312
© All rights reserved © MKProtidin.Com