মাজহারুল রাসেল : বন্যায় মাছ ভেসে যাওয়ায় সোনারগাঁ উপজেলার ছোট-বড় প্রায় ২ শতাধিক মৎস্যচাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এতে আনুমানিক ৪০ থেকে ৫০ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া অবকাঠামোগতও বেশ ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জিয়াসমিন আক্তার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
ক্ষতিগ্রস্ত অধিকাংশ মাছচাষিরা বিভিন্ন ব্যাংক, এনজিও, সমিতি ও স্থানীয় সুদ কারবারিদের কাছ থেকে ধার-দেনা করে টাকা এনে মাছ চাষ করেছেন। বন্যায় মাছ ভেসে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষীরা সর্বস্ব হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। অনেকে আবারো বড়ধরনের ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়বেন। ক্ষতিগ্রস্তরা সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতার দাবি করেন।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ ঘের-পুকুরের পাড় পানিতে তলিয়ে মাছ ভেসে গেছে। কোনো কোনো পুকুরের পাড়ের ওপর দিয়ে ২ থেকে ৩ ফুট পানি হয়েছে। অনেকে পুকুরের চারপাশে জাল ও বাঁশের বানা দিয়ে আটকে রাখার চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা হয়নি। তলিয়ে যাওয়া পুকুরগুলো একেবারে মাছশূন্য অবস্থায় পড়ে আছে।
উপজেলার বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের হাড়িয়া গ্রামের মাছচাষি মো. রমজান বলেন, আমার দুটি পুকুরে (ঘেরে) রুই, কাতলা, তেলাপিয়া, পাংগাস, পুঁটিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করেছিলাম। বন্যায় পুকুর তলিয়ে সম্পূর্ণ মাছ ভেসে গেছে। জাল দিয়ে আটকাতেও সুযোগ পায়নি। এতে আমার প্রায় ৫ থেকে ৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এবং উপজেলার বিভিন্ন মৎস্য চাষী করোনার জন্য বিপাকে পড়েছেন। কারণ হিসেবে বলেন করোনার জন্য দেশে সর্বাত্মক লকডাউন ছিল। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা না আসায় লক্ষ লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়েছে এখানকার মৎস্য চাষিদের।
মাছ চাষি গোলজার মিয়া জানান, ৭ থেকে ৮ বছর আগে মৎস্য চাষিরা মোটামুটি লাভবান ছিল। কাঁচামালের উপর সরকার কর বাড়ানোসহ বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ফিড মিলের মালিকরা খাদ্যের দাম দ্বিগুণ নির্ধারণ করেছে। ৮ থেকে ১০ বছর আগে বিদেশে মাছ রপ্তানি হতো নিয়মিত। বিশেষ করে কইমাছ তখন আমরা পুকুর থেকে বিক্রি করতে পারতাম ২৫০-৩০০ টাকা কেজি পর্যন্ত।
আরেক মৎস্য চাষি বিদ্যুৎ শেখ বলেন, করোনা আসার আগ পর্যন্তও কইমাছ ১৩০-১৪০ টাকা কেজি। পাঙাস ছিল সাইজ বেধে ৮০-১০০ টাকা কেজি। তেলাপিয়া ছিল ১২০-১৫০ টাকা কেজি। পাবদা মাছ ৫০০-৬০০ টাকা কেজি। গুলশা ৬০০-৭০০ টাকা। শিং ৪০০-৫০০ টাকা কেজি। আগে বিদেশে মাছ রপ্তানি হতো, বর্তমানে তাও বন্ধ।
প্রতি কেজি মাছ উৎপাদন খরচের চেয়ে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কমে বিক্রি করতে হয়। আমাদের এই অঞ্চলের মাছ ঢাকা মুখী হওয়ার কারণে বাজার মূল্য কম। কারণ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা ও পরিবহন সেক্টর বেশির ভাগ এতোদিন বন্ধই ছিল। যার কারণে মাছ পরিবহনের ব্যবস্থাও এখন আর তেমন নেই। রপ্তানি বন্ধ হওয়ার পর থেকে এই পর্যন্ত প্রায় কয়েক লক্ষ টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। আমার ব্যাংক ঋণ ৩০ লক্ষ টাকা প্রায়।
উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা জিয়াসমিন আক্তার জানান,এ উপজেলায় প্রচুর পরিমাণে মৎস্য খামার রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মাছচাষিদের তালিকা করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে এবং চাষিদের সংকট নিরসনে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হবে।