এ শহরের সবার বাড়িতেই বিমান আছে। গ্যারেজে মোটর কারের পরিবর্তে পার্ক করা আছে ছোট্ট বিমান। আর তাতে চড়ে কেও যাচ্ছেন কাজে, কেউবা মনকে হালকা করতে বেরিয়ে পড়ছেন বিমান নিয়ে। এ এমন এক শহর যেখানে অলিগলি, ছোট-বড় রাস্তা বলে কিছুই নেই,একটাই পথ- তার পুরোটাই রানওয়ে…
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত এই শহরটির নাম ক্যামেরন পার্ক। ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত এই এলাকা আসলে মার্কিন সরকারের নথিভুক্ত কোনো শহর হয়। সবাই একে ফ্লাই-ইন রেসিডেন্সিয়াল কমিউনিটি হিসেবেই চিনে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে দেখা যায়, শহরকে দুইভাগে ভাগ করে একটি রানওয়ে। বিমান অনায়াসে সেখানে ওঠানামা করতে পারে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের বহু বিমানপোত অকেজো হয়ে পড়েছিল। একইসঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত পাইলটের সংখ্যাও ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছিলো। পাইলটের সংখ্যা ১৯৩৯ সালে ৩৪ হাজার থেকে বেড়ে ১৯৪৬-এ ৪ লাখে গিয়ে পৌঁছে।
যুদ্ধে অংশ নেওয়া অবসরপ্রাপ্ত পাইলটদের অবসর দিতেই ফ্লাই-ইন রেসিডেন্সিয়াল কমিউনিটি গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয় মার্কিন কর্তৃপক্ষ। চেনা পরিবেশে থাকতে পাইলটদের ভালো লাগবে, এই ধারণা থেকেই এমন সিদ্ধান্ত
১৯৬৩ সালে সেই ভাবনা থেকেই তৈরি করা হয় পার্কটি। একসময় নাম ছিলো ক্যামেরন পার্ক এয়ারপোর্ট। পরে সেটা বদলে নাম রাখা হয় ক্যামেরন পার্ক এয়ারপার্ক। শহরের প্রতিটি পরিবারেরই কোনও না কোনও সদস্য একসময় বিমানচালক ছিলেন।
জানা যায়, বিশ্বে এমন ফ্লাই-ইন কমিউনিটি রয়েছে ৬৪০টি। তার মধ্যে ৬১০টিই যুক্তরাষ্ট্রে।
ক্যামেরন পার্ক এয়ারপার্কে হাতে গোনা ১২৪টি বাড়ি রয়েছে। তার মধ্যে ২০টি বাড়ি ফাঁকা পড়ে রয়েছে।
সেই সব বাড়ি সস্তায় বেঁচেও দিচ্ছেন অনেকে। চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে এমন একটি বাড়ির বিজ্ঞাপন প্রকাশ্যে আসে। ইন্টারনেটে দেওয়া সেই বিজ্ঞাপনে প্লেনের হ্যাঙ্গারসহ বাড়িটির দাম চাওয়া হয়েছিল ৬ লাখ ৮৫ হাজার ডলার মাত্র!!!
তবে ক্যামেরন পার্কের অধিকাংশ বাসিন্দা আরামেই আছেন। ছোট্ট শহর এ সুবিধার কমতি নেই। স্কুল, বাজার, হাসপাতাল, এমনকি শপিংমলও রয়েছে। আর যদি কিছু না পাওয়া যায় তা হলেই বা চিন্তা কীসের। প্লেনে কাছের শহরে যাওয়া তো কয়েক মিনিটের ব্যাপার মাত্র!
লেখকঃ বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির আইন প্রশিক্ষক হাসান হাফিজুর রহমান।।