আজ ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিশ্ব হার্ট দিবস। এই দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদা ও সম্মানের সাথে উদযাপনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ হার্ট রিসার্চ এসোসিয়েশন এর উদ্যোগে ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ শুক্রবার সকাল ৯.৩০ ঘটিকায় বিজয়নগর ফারস ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অডিটোরিয়াম’এ কার্ডিয়াক হার্ট সার্জারীর উপর এক আলোচনা সভা ও বৈজ্ঞানিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রখ্যাত কার্ডিয়াক সার্জন ডা. প্রফেসর এস আর খান এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাইভেট মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শেখ কবীর হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিশু হসপিটালের সাবেক পরিচালক প্রফেসর ডা. মঞ্জুর হোসেন, প্রখ্যাত কার্ডিওলজীস্ট প্রফেসর ডা. সিরাজুল হক, প্রফেসর ডা. নাসির উদ্দিন, সাবেক চীফ কার্ডিয়াক সার্জন, এনআইসিভিডি, প্রফেসর ডা. জাহিদ হোসেন, বিএসএমএমইউ, প্রফেসর ডা. লোকমান হোসেন, প্রফেসর ডা. এম এ মজিদ, সাবেক উপাচার্য, বিএসএমএমইউ, অধ্যাপক ডা. নুরুন্নাহার ফাতেমা, সিএমএইচ প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিয়াক সার্জারী বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা: অসিত বরণ অধিকারী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ কবীর হোসেন বলেন, ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর পরই দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করে।
আওয়ামী লীগ সরকার গঠন ১৯৯৬-২০০১ ও ২০০৯-২০১৮ এই তিন মেয়াদে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করার সময়ে দেশের সার্বিক স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। শেখ হাসিনার সরকারের গণমুখি স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন এর সুফল এদেশের আপামর জনগণ ভোগ করছেন। সারাদেশে নতুন নতুন সাধারণ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা বৃদ্ধি ও সরকারি, বেসরকারি পর্যায়ে পর্যাপ্ত ডাক্তার ও নার্স নিয়োগদান ও তাদের উচ্চতর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছে বর্তমান সরকার। ১৮ হাজার ৩৭টি কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। চিকিৎসা সেবাকে সবার জন্য নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে বেসরকারি পর্যায়ে সুযোগ দেয়া হয়েছে। আমাদের দেশের ঔষধশিল্প দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশের বাজারে অবস্থান করে নিয়েছে।’
প্রফেসর ডা. সিরাজুল হক বলেন, ‘বিজ্ঞানের অসাধারণ সাফল্য চিকিৎসা সেবা উন্নত হলেও পৃথিবীতে এখনও প্রাণঘাতী অসুখে বহু জীবন অকালে মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছে। এই রোগগুলির অন্যতম হলো হৃদরোগ। বাংলাদেশেও হৃদরোগের আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আমাদের সরকার ও চিকিৎসকদের এই ব্যাপারে ভাবিয়ে তুলেছে। আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশে মানুষের জন্য হৃদরোগের চিকিৎসা অত্যন্ত কঠিন ও দুরূহ ব্যাপার। কারণ হৃদরোগ চিকিৎসার পরীক্ষা-নীরিক্ষা, অপারেশন, ঔষধপত্র সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা কার্যক্রম দীর্ঘদিন পরিচালনা করা একেবারেই অসম্ভব। উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয় ও অধিকাংশই মৃত্যুমুখে পতিত হয়। উচ্চরক্তচাপ, দেহের ওজন বৃদ্ধি, শারিরীক পরিশ্রম ও নিয়মিত ব্যায়াম না করা, ধূমপান করা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস, স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে অজ্ঞানতা, খাদ্যভ্যাস সম্পর্কে অসচেতনতা, নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ না নেওয়া, রক্তের কোলষ্টেরল ও ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণ না করা এবং জন্মগতভাবেও মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারে।’
প্রফেসর ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘হৃদরোগের কারণ ও তার প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহণ ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে এই মারাত্মক জীবনব্যাধি থেকে আমরা জনগণের মূল্যবান জীবনকে রক্ষা করতে পারি। আশার বিষয় হলো, বর্তমান সরকারের দূরদর্শী ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে বাংলাদেশে এখন বিশ্বমানের আধুনিক হৃদরোগের সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। যা আমাদের জন্য মর্যাদার ও গৌরবের। জনগণের সুস্বাস্থ্য ও উন্নত জীবনের অধিকারী হওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করতে আমাদের সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’
প্রফেসর ডা. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘বিশেষজ্ঞ ও নবীন চিকিৎসকগণ তাদের অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে হৃদরোগসহ দেশের সামগ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নে অবদান রাখবেন।
বাংলাদেশ হার্ট রিসার্চ এসোসিয়েশন একটি সেবাধর্মী ও জনকল্যাণমুখী সংগঠন। আমি এই সংগঠনের কর্মপরিধি ও সেবামূলক কর্মকান্ডের বিবরণ জেনে আনন্দিত ও তাদের অভিনন্দন জানাই। দিন দিন আর্তপীড়িত ও অসহায় মানুষের সেবায় সংগঠনটি আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন সেই প্রত্যাশা করি।
আমি বিশ্ব হার্ট দিবসের সফলতা কামনা করি।’
প্রফেসর ডা. নুরুন্নাহার ফাতেমা বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রতিহাজারে ১৫% জন্মগত শিশু হৃদরোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। নবজাতক রোগীর চিকিৎসা অত্যন্ত জটিল ও কঠিন। কারণ তারা কিছু বলতে ও বুঝতে পারে না। পরীক্ষা-নীরিক্ষার মাধ্যমে শিশুদের সঠিক রোগ নির্ণয় করা হয়। সময়মতো ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা শিশুর চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু থেকে করলে হার্ট অ্যাটাক থেকে শিশুকে বাঁচানো সম্ভব। যেহেতু, হৃদরোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল তাই শিশুহৃদরোগ চিকিৎসা বিনামূল্যে করা উচিত। ভারতে শিশুদের হৃদরোগের চিকিৎসা বিনামূল্যে করা হয়ে থাকে।’
প্রফেসর ডা. মঞ্জুর হোসেন বলেন, ‘হৃদরোগের চিকিৎসা বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে সফলতা লাভ করেছে। এখন বাংলাদেশে বিশ্বমানের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আরও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা যদি রোগীর আস্থা অর্জন করতে পারি তাহলে আমাদের দেশে রোগীরা চিকিৎসার জন্য বিদেশ গমণ করবে না।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. এস আর খান বলেন, এক সময় ৮০% রোগী বিদেশে চিকিৎসার জন্য চলে যেত। এখন এর পরিবর্তন ঘটেছে। দারিদ্রতা হ্রাস ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি সাধিত হওয়ায় মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। দেশের দক্ষ ও অভিজ্ঞ কার্ডিয়াক সার্জন তৈরী হচ্ছে। বিশ্বমানের কার্ডিয়াক হাসপাতাল দেশের প্রায়ই অঞ্চলেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমান সরকার স্বাস্থ্যখাতের ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করছেন। এর সুফল এ দেশের সাধারণ জনগণ ভোগ করছেন। সরকারের স্বাস্থ্যনীতি পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হলে সবার জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা সম্ভব হবে।’ তিনি বিশ্ব হার্ট দিবসের সফলতা কামনা করেন। অনুষ্ঠানে কার্ডিয়াক সার্জারীর ওপর বৈজ্ঞানিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। দেশ-বিদেশের শতাধিক তরুণ চিকিৎসক এই সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন।
সম্পাদক : মোঃ কবির নেওয়াজ রাজ, E-mail: mkprotidin@gmail.com, Contact: (+88) 01643-565087, 01922-619387; Mailing Address: House# 4/A, Main Road, Ati Model Town, Ati, Keraniganj, Dhaka-1312
© All rights reserved © MKProtidin.Com