স্বাধীনতার পর, বিজয় অর্জনের পর গত ৪৮ বছরে রাজনৈতিক চরম অন্যায় যেমন নির্মিত হয়েছে, তেমনি নির্মিত হয়েছে অন্যায়ও। আর এই অন্যায়ের অন্যতম প্রধান হলো- নেশা। ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ থেকে এযাবৎ এক গবেষণায় উঠে এসেছে-১৯৭৫ পর্যন্ত নেশা বলতে কেবল বিদেশী- দেশী মদ, গাজা, জর্দা আর সিগেরেট-এর চলন ছিলো বাংলাদেশে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যার পর থেকে ক্রমশ সেই নেশাচক্র এগিয়ে যেতে থাকে হেরোইন, পপি, মরফিন, প্যাথোডিন থেকে বিভিন্ন ধরনের নেশার দিকে। চলতে চলতে এই ভয়াবহ নেশা চলে আসে ইয়াবা পর্যন্ত। যার পেছনে নায়ক হিসেবে যারা রয়েছে, তাদের অনেকেই যখন যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে, তখন সেই সরকারের রাজনীতিকদের সাথে আঁতাতত করে এগিয়ে গেছে অন্ধকারের দিকে। তাদেরই একজনের ইচ্ছে ছিলো নিজেকে ‘আন্ডারওয়ার্ল্ড’ ডন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে। অঢেল অর্থের মালিক হয়ে দুবাই গিয়ে বিলাসবহুল জীবন-যাপন করবে। আর সেখান থেকেই নিয়ন্ত্রণ করবে আন্ডারওয়ার্ল্ড। সেই লক্ষ্যে ইয়াবা ব্যবসা শুরু করে যশোরের ঝিকরগাছার তানভীর হাসান। কক্সবাজার থেকে নিজেই ইয়াবা সংগ্রহ করত। সড়ক পথে নিয়ে আসত ঢাকায়। ইয়াবার একটি অংশ পাচার করত ভারতে। বিনিময়ে পেত আগ্নেয়াস্ত্র। শুধু এখানেই শেষ নয়; আমাদের রাজনীতির অন্ধকারের বাসিন্দা যারা, তারা টাকার বিনিময়ে তানভীরের মত অবিরত অন্যায় করে চলা লোকটিকে সর্বোচ্চ চেষ্টায় অবিরাম মাদক ব্যবসায় সহযোগিতা করতে থাকে। সেই মাদক ব্যবসার রাস্তায় অগ্রসর হতে হতে তানভীর এখন শুধু মাদকই নয়; অস্ত্রেরও বড় ব্যবসাযী। তার এ অস্ত্র সে বিক্রি করত সন্ত্রাসী গ্রুপের কাছে। প্রায় ৫০ টি অস্ত্র বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপের কাছে বিক্রি করেছে এই ভয়ংকর লোকটি। ঢাকাসহ আশপাশের চারটি জেলায় ইয়াবা ব্যবসার নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে দিয়েছে সে। এই ব্যবসা নির্বিঘ্ন করতে সে ঢাকাকে উত্তর-দক্ষিণে দু’ভাগে ভাগ করেছিল। ঢাকা উত্তরের ইয়াবা ব্যবসা মনিটরিং করত নিজে। দক্ষিণের দায়িত্বে ছিল তার একান্ত সহযোগী ইসহাক আলী তপন। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য দিয়েছেন তানভীর হাসান ও তার সহযোগী ইসহাক আলী। ১৪ জুন মোহাম্মদপুর থেকে একটি বিদেশি পিস্তল এবং এক হাজার ৪০০ পিস ইয়াবাসহ তানভীরকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
একজন তানভীর হাসান কেন গ্রেফতার হয়? প্রশ্ন করলে উত্তর পাওয়া যাবে যে, জঘন্য এই পেশায় অনেকগুলো সহযোগি প্রয়োজন হয়। তাঁর মধ্যে পুলিশ অন্যতম প্রধান। পুলিশের টাকা দিতে দেরি হলে বা একটু কম দিলেই আটক করা হয়; আর উপস্থাপন করা হয় মিডিয়ার সামনে। কিন্তু কখনোই মিডিয়ার সামনে সেই আসামীকে প্রাণ খুলে কথা বলার অবস্থায় হাজীর করা হয় না। একটিবারের জন্যও যদি আটককৃত তানভীর হাসানকে বা অতিতে আটক কাউকে নিয়ে আসা হয় অভয়ের সাথে যে, সত্য বললে কোন ক্ষতি হবে না। তাহলে অন্তত ৯৮ ভাগ ঘটনায় পুলিশের হাত রয়েছে বলে প্রমাণিত হবে। তু বাংলাদেশক নিয়ে স্বপ্ন দেখি, আর স্বপ্ন দেখি বলেই চাই পুলিশ শুধরে যাক, শুধরে যাক আমাদের আইনী ব্যাক্তিগণ, রাজনীতিকগণ। তা না হলে সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে পড়ার রাজনৈতিক বর্তমান কাঠামো, প্রশাসনিক কাঠামো সহ আমাদের এই বাংলাদেশ। যা কোনভাবেই প্রত্যাশা করি না। আর তাই লিখে যাই বলে যাই সমাধানের কথা। সেই সূত্রে বলছি- পুলিশ বলছে, তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মোহাম্মদপুর থেকেই ৩০০ পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয় ইসহাক আলীকে। একসময়ের গণমাধ্যমকর্মী, বর্তমানের রাজনীতিক হিসেবে বাংলাদেশের টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া আমার রাজনৈতিকধারা, রাজনৈতিক স্বপ্ন নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবির যশোর শাখার তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং অনলাইন প্রেস ইউনিটি যশোর-এর সহ-সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান-এর মাধ্যমে জানতে পারি যে, যশোরের ঝিকরগাছার পায়রাডাঙ্গার আব্দুল ওয়াদুদের ছেলে। পাঁচ বছর ধরে ঢাকায় কসমেটিকসের ব্যবসা কর। চোরাই পথে আসা কসমেটিকস সীমান্ত এলাকা থেকে সংগ্রহ করে ঢাকায় এনে বিক্রি করত সে। সীমান্ত এলাকায় বাড়ি হওয়ার কারণে আগে থেকেই পাচারকারী চক্রের সঙ্গে তানভীরের যোগাযোগ ছিল। দুই বছর ধরে সে পুরোপুরি ইয়াবা এবং অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়। পাশাপাশি খুবই আশ্চর্যের বিষয় হলো- কলকাতার ‘দাদাভাই’ নামে এক চোরকারবারির সঙ্গে তানভীরের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। তানভীরের মাধ্যমে সে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ইয়াবা নিয়ে যায়। এর বিনিময়ে তানভীরকে কোনো অর্থ পরিশোধ করেন না। পাঠিয়ে দেন অত্যাধুনিক মডেলের আগ্নেয়াস্ত্র। চোরাই পথে আসা কসমেটিকসের ব্যবসা করতে গিয়েই ওই দাদাভাইয়ের সঙ্গে তানভীরের পরিচয় হয়। মূলত চোরা কারবারিদের পরামর্শেই তানভীর ইয়াবা ব্যবসার প্রতি আগ্রহী হয়। দৈনিক একটি পত্রিকা অবশ্য বলছে যে, সে নিজে কক্সবাজারের টেকনাফে গিয়ে ইয়াবা কারবারিদের সঙ্গে যোগাযোগ করত। আলমাস নামে টেকনাফের এক ইয়াবা ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করত তানভীর। এরপর সড়ক পথে যাত্রীবাহী বাসে করে ঢাকায় ইয়াবা নিয়ে আসত। তানভীর জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, দুই বছর ধরে তানভীর ভারতে ইয়াবা পাচার করছে। এর বিনিময়ে অন্তত ২৫টি আগ্নেয়াস্ত্র চোরাকারবারিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছে। এরমধ্যে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপের কাছে ২০টির মতো আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রি করেছে। একটি তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। অবশ্য সেই সাথে তানভীর নিজে দাবি করেছে, অপরিচিত বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপের কাছে সে অস্ত্র বিক্রি করেছে। তাদের মধ্যে একটি গ্রুপকে সে চেনে। এই গ্রুপের নেতৃত্ব দেয় পেদা শামীম। গ্রুপটি মোহাম্মদপুর, ধানম-ি, আদাবর এবং শেরেবাংলা নগর এলাকার মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন কন্ট্রাক্ট কিলিংয়ের সঙ্গে যুক্ত। বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্যানুযায়ী- ইসহাক চকবাজারে চকলেট বিক্রি করত। সেখানেই তাদের পরিচয় হয়। ইসহাকের বাড়িও ঝিকরগাছায়। তানভীর ইয়াবা ব্যবসা শুরুর কিছুদিন পর ইসহাককে বিষয়টি জানায়। ইয়াবা ব্যবসায় রাতারাতি অঢেল সম্পদের মালিক হওয়া যায় এমন আশ্বাসে ইসহাকও ওই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। আমি যেটি মনে করছি, সেটি হলো- টাকা পয়সা ভাগাভাগির সূত্রতায় আটককৃত তানভীরকে ফাঁসিয়ে দেয়ার জন্য নির্মম মিথ্যের আশ্রয় নিয়ে পুলিশ বলছে- ধারণা করা হচ্ছে- নেতৃত্বে ইয়াবার একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে। চক্রটি শুধু দেশের অভ্যন্তরেই নয়, ভারতেও ইয়াবা পাচার করছে।
একদিকে তানভীরের মত চুনোপুটিরা পুলিশের সপ্তাহ, স্থানিয় নেতাদের লাইন চার্জ সহ বিভিন্ন চাহিদা মেটাতে না পারায় আটক হয়, অন্যদিকে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যায় রাঘব বোয়ালরা। এই রাঘব বোয়ালদের হাত দিয়েই দেশে স্বাধীনতার পর বিভিন্ন মাদকদ্রব্য এসেছে, অস্ত্র এসেছে, দুর্নীতি হয়েছে। এখন আবার উপরুন্তু আসছে এনপিএস বা নিউ সাইকোট্রফিক সাবসটেনসেস। এক সময় গাঁজাই ছিল দেশীয় মাদক। প্রচলিত ওই মাদকের বাইরে আসা শুরু হয় হেরোইন। এরপর ভারত সীমান্ত দিয়ে আসে ফেন্সিডিল। হেরোইন, ফেন্সিডিল বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যখন ব্যস্ত তখন সীমান্ত দিয়ে আসা শুরু হয় ইয়াবা। আর ইয়াবার থাবা বন্ধে যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ অভিযান চলছে ঠিক সেই মুহূর্তে সন্ধান মিলেছে নতুন এই মাদকের। নাম এনপিএস (নিউ সাইকোট্রফিক সাবসটেনসেস) দেশে শুরু করে দিয়েছে তাঁর নতুন মাদকবাজার। আর এর বাজারজাত করণের সর্বোচ্চ প্রক্রিয়ায় ড. কামাল হোসেনের মত কোন বৃদ্ধ না থাকলেও আছে চিরমাদকাশক্ত ছাত্রলীগ নেতা ‘ত’ অদ্যাক্ষের ভয়াবহ মানুষটি। যার কাছে একমাত্র টাকই হলো সত্য, বাকি সব মিথ্যে-বানোয়াট। আর তারই হাত ধরে, আরো কিছু লোভি রাজনীতিকের হাত ধরে গ্রিন টি (সবুজ চা) প্যাকেটের আড়ালে আকাশপথে আসছে এ মাদক। এ মাদকের মোট সাড়ে আটশ কেজি জব্দ ও নাজিম নামে একজনকে আটকের পর এ তথ্য গণমাধ্যমকে জানিয়েছে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। সরকারি একটি গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একটি টিম দুপুরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অভিযান চালিয়ে চারশ কেজি এনপিএস জব্দ করে। যা চায়ের প্যাকেটের আড়ালে আনা হয়েছিল কয়েক দিন আগে। সবচেয়ে ভয়ংকর অবস্থা হলো- এনপিএস চালানটি কয়েক দিন আগে ইথিওপিয়া থেকে আনা হয়। ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবার জিয়াদ মোহাম্মাদ ইউসুফ এনপিএসের চালানটি পাঠিয়েছেন। ইথিওপিয়া থেকে ক্রমশ এনপিএস আসতেই থাকবে, যদি না আমরা সচেতন হই। যদি না সরকারীভাবে বাস্তবিক পদক্ষেপ নেয়া হয়। আর তাই চাই শুরুতেই সমাধান। ইয়াবার ব্যাপারে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যাগ্য উত্তরসূরী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত ‘জিরো টলারেন্স’ যেভাবে ছিলো, সেভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। বরং নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য পুলিশ-প্রশাসন, রাজনৈতিক মহল লোভাতুর রাস্তায় অগ্রসর হয়েছে বহুপথ। আমি মনে করি রাজনীতিকদের পাশাপাশি সত্যিকার্থেই যদি পুশিশ-প্রশাসন যথাযথ ভূমিকা পালন করে, তাহলে এই দেশ রক্ষা সম্ভব। তা না হলে খেই হারাবে বাংলাদেশ, ক্ষতিগ্রস্থ হবে বাংলাদেশ। যে ক্ষতির দায়এড়ানোর কোন সুযোগ থাকবে না বাংলাদেশ পুলিশ বা র্যাব থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট মহলের কারোই। অতএব, সময় থাকতে ভালো হন, আলো দিবে জনগন, সেই আলোতে তৈরি হবে বিশ্ব, থাকবে না আর মাদক- নেশার দৃশ্য...
মোমিন মেহেদী : চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ-এনডিবি
Email: mominmahadi@gmail.com
১৭১২৭৪০০১৫
সম্পাদক : মোঃ কবির নেওয়াজ রাজ, E-mail: mkprotidin@gmail.com, Contact: (+88) 01643-565087, 01922-619387; Mailing Address: House# 4/A, Main Road, Ati Model Town, Ati, Keraniganj, Dhaka-1312
© All rights reserved © MKProtidin.Com