তাহলো আমাদের দেশে বহুল ব্যবহৃত পলিথিন।
এটা আমাদের বাংলাদেশে শুধু না বিশ্বের অন্যান্য দেশে এর উপর প্রভাব কম নয় । ফাস্টফুড বলেন , শপিং বলেন, চলার পথে সবসময়ই খুবই প্রয়োজনীয় একটি ব্যবহারযোগ্য বস্তু।
পলিথিনের ক্ষতিকারক দিকগুলো মধ্যে অন্যতম একটি দিক হচ্ছে মাটিতে চাপা পড়ে গেলে, মাটির নিচে ঢুকে গেলে মাটির উর্বরতা শক্তি কমে যায়। মাটিতে অক্সিজেনের সরবরাহ কমে যায়। বাতাসের বাধাপ্রাপ্ত হয় পানি ও সূর্যের আলো ব্যাঘাত ঘটে। তাই এই বিষাক্ত পলিথিন মাটির জন্য একটি ক্ষতিকারক ।
পলিথিন মাটির মধ্যে থাকার কারণে বহুতল ভবনে নিচে বায়ু থাকার কারণে ভূমিকম্প হলে ভবনটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এককথায় বহুতল ভবনের নিচে পলিথিন একটি গ্যাসের সৃষ্টি করতে পারে যা ভবিষ্যতে ভবনটির জন্য খুবই ক্ষতিকর।
সাগরের নিচে ১২ দিনের গভীরে থাকলে মাছের প্রজনন ক্ষমতা কমে যায় এমনকি বিষ কিয়া হে মাছ মারা যেতে পারে। পলিথিনে ব্যবহৃত মাছ মাংস ফ্রিজে রাখলে এক ধরনের বিকিরণ ছাড়ায় যার কারণে মাছ-মাংস বিষাক্ত হয়ে যায়। পলিথিন নালা নর্দমায় এবং ডুবাতে মিশে জলের বাধা সৃষ্টি করে। ফলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
পলিথিন পলিথিন ক্যান্সার রোগ চর্মরোগ শ্বাসকষ্ট সহ বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করে। পলিথিন পোড়ালে যে ধোয়ার সৃষ্টি হয় সেটা ক্যান্সারের অন্যতম কারণ।
এককথায় পরিবেশবান্ধব বলেছেন হতে পারে না পলিথিন বর্জন করা উচিত। কিন্তু প্লাস্টিক ও পলিথিন পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হলেও অতীব প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। কারণ বহির্বিশ্ব করেছেন এর প্রভাবে এখনো যায়নি। চলো পলিথিন এর মধ্যে বিকল্প কিছু খুঁজে পাচ্ছেনা। আর যদি কেউ থাকে সেটা মন মত হল নয়।
পলিথিন উৎপাদন প্রস্তুতকরণ আমদানি রপ্তানি বিক্রয় মজুদ বিতরণ বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার এবং পরিবহন কারা দণ্ডনীয় অপরাধ। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ( ১৯৯৫ ) সংশোধিত (২০১২) এর ধারা ৬:(ক) এই আইন উপরের উল্লেখিত পলিথিনের জন্য প্রযোজ্য হলেও আইন আছে কিন্তু প্রয়োগ নেই।
তবে সরকারের প্রচেষ্টায় ও আইনের রক্ষক ভ্রাম্যমাণ আদালত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ,পুলিশ-সহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পলিথিন এর কারখানা জব্দ করা এবং সিলগালা করে দোষীকে আদালতে প্রেরন করলেও এখনো বন্ধ করতে পারেনি সরকার। সাধারণ মানুষও এর ক্ষতিকর দিক জেনেও পলিথিন ব্যবহার করতে বেশ আগ্রহী ।
আইনের প্রয়োগ না থাকায় সেই পলিথিনের বিক্রি ও ব্যবহার হরহামেশা চলছেই । হোটেল-রেস্তোরাঁ থেকে গরম খাবার বহন করা, ফ্রিজে পণ্য রাখতেও ব্যাপকভাবে পলিথিন ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে নিত্য পণ্যের বাজারে পলিথিনের অপরিহার্য চাহিদা দেখা যায়।
সাধারণ মানুষ এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ। ফলে পলিথিনের ব্যবহার মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে বহুদিন আগেই। বেড়েছে গেছে ক্ষতিকারক রোগ ব্যাধি যার মধ্যে অন্যতম ক্যান্সার চর্মরোগ ও শ্বাসকষ্ট।
পলিথিন এর উপর পরীক্ষামূলক এক সংস্থা বলেছে,শুধু ঢাকায় প্রতিদিন প্রায় ২.৫০ কোটি পলিথিন ব্যাগ ব্যবহৃত হচ্ছে। আর বিশ্বে প্রতিবছর সাত লাখ কোটি পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে। তাই হুমকির মুখে পড়েছে আজ পলিথিন ও প্লাস্টিকের ব্যবহার ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পলিথিন বা প্লাস্টিকের ব্যবহারের ফলের হরমন বাধাগ্রস্ত হয়। এল ফলে দেখা দিতে পারে বন্ধ্যাত্ব, নষ্ট হতে পারে গর্ভবতী মায়ের ভ্রণ, বিকল হতে পারে লিভার ও কিডনি।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি নিত্যপণ্যের বাজারে পণ্য বিক্রিতে প্রায় শতভাগ ব্যবহার হচ্ছে ক্ষতিকর পলিথিন। চাল, ডাল, তেল, সবজি বিক্রিতে ব্যবহার হচ্ছে পলিব্যাগের। এমনকি পাতলা এ পলিথিনের মাধ্যমে হোটেল-রেস্তোরাঁর গরম খাবার বহন করতেও দেখা গেছে।
পলিথিনে শুধু গরম খাবার বা গরম পানির ব্যবহারেই ক্ষতি হয় না, স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি বা হিমায়িত (ফ্রিজিং) পানির ব্যবহারেও ক্ষতি হয় সমানভাবে। পলিথিনে মুড়িয়ে ফ্রিজে রেখে সেই খাবার গ্রহণ করলেও সমান ক্ষতি হয়।
গবেষকরা বলছেন, প্লাস্টিক বা পলিথিনে গরম পানি বা গরম খাবার ঢালার সঙ্গে সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় বিসফেলন-এ তৈরি হয়। বিসফেনল-এ থাইরয়েড হরমনকে বাধা দেয়। বাধাপ্রাপ্ত হয় মস্তিষ্কের গঠনও। গর্ভবতী নারীদের রক্ত থেকে বিসফেনল-এ যায় ভ্রুণে। ফলে নষ্ট হতে পারে ভ্রুণ, দেখা দিতে পারে বন্ধ্যাত্ব। শিশুও হতে পারে বিকলাঙ্গ। তাছাড়া ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার ১০ কারণের মধ্যে অন্যতম হলো প্লাস্টিকের ব্যবহার। এছাড়া পলিতিনের বহুবিধ ব্যবহারে বিকল হতে পারে লিভার ও কিডনি।
কোপেনহেগেনভিত্তিক সংস্থা ‘দ্য ওয়ার্ল্ড কাউন্টস’-এর তথ্য মতে, প্রতিবছর বিশ্বে পাঁচ লাখ কোটি পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার হচ্ছে। এর মাত্র এক শতাংশ পুনর্ব্যবহারের জন্য রিসাইক্লিং করা হয়। আর এসব পলিথিনের ১০ ভাগ ফেলা হয় সমুদ্রে। পলিথিনের এসব ব্যাগ একশ’ বছরেও পচবে না বা মাটির সঙ্গে মিশবে না। এটা মাটির গুনাগুনকে নষ্ট করে দেয়।
পলিথিন বা প্লাস্টিকের ব্যবহার করা মানে বিপদ ডেকে আনা। প্লাস্টিক শরীরে ক্যান্সার তৈরি করার প্রথম ১০টি কারণের মধ্যে একটি। মনে রাখতে হবে, সব প্লাস্টিকই ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করে। পলিথিনে খাবার বহন কিংবা ফ্রিজে রাখা একই কথা। সবই ক্ষতিকর। প্লাস্টিক খাবারের সঙ্গে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। এতে কিডনি ড্যামেজ, লিভার অকেজো, বন্ধ্যাত্ব ও ভ্রণ নষ্ট হতে পারে। তাই আসুন আমরা সবাই সচেতন হই পলিথিন মুক্ত বাংলাদেশ গড়ি।