বৃহত্তর বরিশালের ইতিহাসে আজ ২৩ নভেম্বর একটি স্মরণীয় দিন। এই দিনে বরিশাল বিভাগের ৯ নং সেক্টরের মধ্যে ঝালকাঠির রাজাপুর থানা সর্বপ্রথম পাকহানাদার মুক্ত হয়। এ বিভাগে সর্বপ্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয় রাজাপুরে। পাক বাহিনীর দোসরদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের একটানা পাঁচ ঘন্টা যুদ্ধের পর আলবদর, রাজাকার ও পুলিশ বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। শত্রুমুক্ত হয় রাজাপুর। বন্ধ হয় রাজাপুরে পাকবাহিনীর গণহত্যাজজ্ঞ।
রাজাপুরের মুক্তিযোদ্ধারা জানান, থানা শত্রু মুক্ত হওয়ার ১৫ দিন পূর্বে উপজেলার গালুয়া ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ রাজাকার বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। ওই দিন রাতে রাজাকার বাহিনী পোষাকপড়া অবস্থায় নদীর তীরে গর্ত করে তাকে জীবন্ত মাটি চাপা দেয়। হত্যাজজ্ঞের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর শপথ নেয় মুক্তিযোদ্ধারা।
তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা আবুল কালাম আজাদকে জাঙ্গালিয়া নদীর পাড়ে গর্ত করে জীবন্ত মাটি চাপা দেয় দোসর হানাদাররা। ১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা রাজাপুর থানা আক্রমণ করেন। শুরু হয় সম্মুখযুদ্ধ। এ যুদ্ধে তৎকালীন থানা কমান্ডার কেরামত আলী আজদ এর নের্তৃত্বে প্রায় তিনশত মুক্তিযোদ্ধা অংশ গ্রহন করেন। পরদিন সকাল পর্যন্ত চলে যুদ্ধ।
১৯৭১ সালের ২৩ নভেম্বর রাত ৪টায় মুক্তিযোদ্ধারা পাকহানাদার বাহিনীর আস্থানায় এক যোগে আক্রমন চালায়। সারাদেশের ন্যায় রাজাপুরে মুক্তিযুদ্ধ আরো তীব্র হয়। শুরু হয় পাল্টা গুলি বিনিময়। দেশীয় দোসরদের সহায়তায় পাকবাহিনী সাধারণ নিরীহ জনগণকে ধরে এনে বধ্যভূমি সংলগ্ন খালের ঘাটে বেঁধে গুলি করে খালে ফেলে দেয়। লাশের গন্ধে ভারী হয়ে ওঠে আকাশ বাতাস।
এদিনের যুদ্ধে দুইজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এরা হলেন, শহীদ আব্দুর রাজ্জাক ও শহীদ মো. হোসেন আলী। আহত হন কমপক্ষে ২০জন মুক্তিযোদ্ধা। এদিনের যুদ্ধে কমপক্ষে তিনশত মুক্তিযোদ্ধা অংশ নেন। এযুদ্ধের নেতৃত্ব দেন ৯ নং সেক্টরের অন্যতম সাব সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর। তিনিও এ যুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হন। পরবতীর্তে তিনি বীর-উত্তম খেতাব লাভ করেন।
রাজাপুরের গনকবর, বদ্ধভুমি এবং শহীদদের কঙ্কালগুলো সংরক্ষনে সরকারি উদ্যোগ নেয়া হবে এমনটাই প্রত্যাশা করেন এলাকার মানুষ। দিনটি উপলক্ষ্যে রাজাপুর পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালিত হবে। বর্নাঢ্য র্যালি ও আলোচনার মধ্য দিয়ে। ঝালকাঠিতে এ পর্যন্ত ২৪টি বধ্যভূমি ও ১টি গণকবর শনাক্ত করা হয়েছে। এসব স্থানে একাত্তর সালে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায় পাকিস্তনি বাহিনী ও রাজাকাররা।
দুটি বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হলেও অন্যগুলো সংরক্ষণে সরকারিভাবে কোনো উদ্যোগ নেই। স্থানীয় উদ্যোগে কয়েকটি জায়গায় নামফলক বসানো হয়েছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসেও জেলার বেশির ভাগ বধ্যভূমি অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকায় ক্ষুব্ধ শহীদ পরিবার ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
সম্পাদক : মোঃ কবির নেওয়াজ রাজ, E-mail: mkprotidin@gmail.com, Contact: (+88) 01643-565087, 01922-619387; Mailing Address: House# 4/A, Main Road, Ati Model Town, Ati, Keraniganj, Dhaka-1312
© All rights reserved © MKProtidin.Com