ফরিদুল কবির কালিগঞ্জ(সাতক্ষীরা)থেকে।। “বই বিক্রির মধ্যে শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়ানোর আলাদা একটি আনন্দ আছে। এটা বলে বোঝানো যাবে না। আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তারা একদিন লেখাপড়া শিখে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বাবা-মায়ের মুখ উজ্জ্বল করবে।” এভাবে কথাগুলো বলছিলেন বইপ্রেমিক ফেরিওয়ালা মুনসুর আলী মল্লিক। হাতে একপ্রস্থ বাচ্চাদের বই। রংবেরঙের বর্ণের, ছড়ার, ছবির বই। দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে ছড়িয়ে দিচ্ছেন শিক্ষার আলো তিনি। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে কালিগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী নাজিমগঞ্জ বাজারে কথা হয় ৭৫ বছরের বৃদ্ধ মুনসুর আলী মল্লিকের সাথে। তিনি উপজেলার রতনপুর ইউনিয়নের নাটুয়ারবেড় এলাকার মৃত খতিব মল্লিকের ছেলে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি বাবার অভাবের সংসারে মাত্র ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। তখন সংসারের হাল ধরতে বিভিন্ন কাজকাম শুরু করেন। একপর্যায়ে নামমাত্র পুঁজি নিয়ে বইয়ের ব্যবসা শুরু করেন তিনি। প্রতিদিন প্রায় ৫০ টি বই নিয়ে কালিগঞ্জ সদর, নাজিমগঞ্জ বাজার, রতনপুর বাজার, শ্যামনগর উপজেলার নওয়াবেকী, ভেটখালী সহ বিভিন্ন হাট-বাজার ও গুরুত্বপূর্ণ স্হানে গিয়ে হেঁটে ফেরি করে বিক্রি করতে লাগলেন। এভাবে পুরোদস্তুর বইয়ের ফেরিওয়ালা হয়ে উঠলেন তিনি। ১২/১৩ বছর আগে হঠাৎ করে প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হন। পরে চিকিৎসায় সুস্থ হলে পুনরায় এ পেশার পাশাপাশি এখনও শিশুদের ভালোবেসে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন বইপ্রেমীক মুনসুর মল্লিক। এখন প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার টাকার মূল্যের ৫০টি বই নিয়ে হাট বাজারে বিক্রয় করেন। এতে তার ৩০০-৩৫০ টাকা লাভ থাকে। বর্তমানে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মোটামুটি ভাবে দিন কাটছে তার। তার বড় ছেলে ফেরিওয়ালা ও ছোট ছেলে শ্রমিক। আর একটিমাত্র মেয়ে অষ্টম শ্রেণীর মেধাবী শিক্ষার্থী। বই ফেরিওয়ালা হিসেবে পরিচিত মুনসুর আলী মল্লিক এ প্রতিবেদককে বলেন, “সংসার চালানোর পাশাপাশি শিশুদের ভালোবেসে পথে পথে ঘুরি শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে। আমার বইয়ে মানুষের পাঠাভ্যাস গড়ে উঠে”। দীর্ঘ ৩৫ বছর যাবৎ ফেরি করে বই বিক্রি পেশার সাথে সম্পৃক্ত বলে জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, শিশুদের যেসব বইয়ের চাহিদা থাকে, সেসব বই সংগ্রহ করেন তিনি। সেগুলো নিয়ে ছুটে চলেন গ্রামগঞ্জ ও হাটবাজারে। বেশি বিক্রি হয় শিশুের বই তুলির আদর্শ লিপি, মন্টু পাতলুর আদর্শলিপি, পূর্ণিমার প্রথম পড়া, মিনা রাজুর ১০০ রকম ছড়া, তুলির একের ভিতরে সব, সোনামণিদের প্রথম পড়া, ফতেমার আদর্শলিপি, তুলির আদর্শলিপি, ডোরেমনের হরেক রকম পড়া, ইনানের আদর্শলিপি, রুদ্রার আদর্শলিপি ইত্যাদি বই। এসব বই তিনি সংগ্রহ করেন ঢাকা, খুলনা থেকে। বই ক্রেতা মেহেদি হাসান বলেন, চাচার নিকট শিশুদের বই গুলো দেখে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। আমার সন্তানের জন্য একটি পছন্দের বই ক্রয় করেছি। নাজিমগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী রফিকুজ্জামান রুমি বলেন, বইয়ের ফেরিওয়ালা মুরব্বী মুনসুর আলী মল্লিক অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা। বই বিক্রির পাশাপাশি নিঃসন্দেহে শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন তিনি।