মাজহারুল রাসেল : সোনারগাঁ উপজেলার পাড়া-মহল্লায় কিশোর গ্যাং কালচার দিন দিন ভয়ংকর হয়ে উঠছে। মাদক নেশায় জড়িয়ে পড়া থেকে শুরু করে চুরি, ছিনতাই, ইভটিজিং, মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা। এমনকি অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব কিংবা অন্য গ্যাংয়ের সঙ্গে তু”ছ বিরোধকে কেন্দ্র করে খুন-খারাবি থেকেও পিছপা হচ্ছে না কিশোর অপরাধীরা। উদ্বেগের বিষয় হলো, মাদক নেশার টাকা জোগাতে ছোটখাটো অপরাধে জড়ানো কিশোর অপরাধীরা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হয়ে উঠছে ভয়ংকর অপরাধী, এলাকার ত্রাস। আরও উদ্বেগের বিষয়, ভাড়াটে হিসাবে তারা এখন মানুষ হত্যার মতো অপরাধে যুক্ত হচ্ছে।
উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ভাড়ায় খাটছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। গ্যাং কালচারের পেছনে স্থানীয় রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ও পেশাদার সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষকতাকেও দায়ী করছে সংশ্লিষ্টরা। বিশ্লেষকরা বলছেন, অবস্থা এখন এমন জায়গায় চলে গেছে যে, কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে সামাজিক আন্দোলন জরুরি হয়ে পড়েছে। তারা বলছেন, পরবর্তী প্রজন্মকে অপরাধমুক্ত রাখতে হলে কিশোর অপরাধের লাগাম এখনই টেনে ধরতে হবে। তা না হলে দিন দিন পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। তারা আরও বলছেন-আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সমাজ ও পরিবারের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া কিশোর গ্যাং কালচার থেকে রক্ষা পাওয়ার কোনো উপায় নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন,কিশোররা শাস্তিযোগ্য অপরাধ করলেও বয়সের কারণে তাদের শাস্তির আওতায় আনা যায় না। তাদের পাঠানো হয় কিশোর সংশোধন কেন্দ্রে। সেখানে গিয়ে সংশোধিত হওয়া দূরের কথা, তারা আরও ভয়ংকর হয়ে বেরিয়ে আসে। সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তার এ কথা গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে অবশ্যই। কিশোর সংশোধন কেন্দ্রগুলো কেন কিশোর অপরাধীদের অপরাধপ্রবণ চরিত্র পালটাতে পারছে না, সে বিষয়টি গভীরভাবে ভাবতে হবে। বস্তুত, কিশোর গ্যাং কালচারের পেছনে নানা কারণ কাজ করছে। দেখা গেছে, গ্যাং সদস্যদের অধিকাংশই দরিদ্র ও স্কুল থেকে ঝরে পড়া ছাত্র। এসব কিশোর পরিবারসহ বিভিন্ন কারণে হতাশাগ্রস্ত হয়ে প্রথমে মাদকের নেশায় জড়ায়। পরে এরা সমবয়সি অন্য কিশোরদের সঙ্গে মিলে অন্য একটি জগৎ তৈরি করে। এরপর কয়েকজন মিলে তৈরি করে একটা গ্যাং। কিশোর বয়সের এসব অপরাধীর মধ্যে এক ধরনের হিরোইজমও কাজ করে থাকে। কার্যকরণ যা-ই হোক, পরিবার ও সমাজের ইতিবাচক পদক্ষেপ এবং প্রশাসনের কঠোর অবস্থান ছাড়া কিশোর গ্যাং কালচার রোধ করা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই এগিয়ে আসতে হবে পিতামাতা তথা অভিভাবকদের।
অভিভাবকদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিই তাদের সন্তানদের বিপথগামীতা থেকে রক্ষা করতে পারে। সন্তান কী করে, কার সঙ্গে মেশে, কোথায় সময় কাটায়-এসব বিষয় পর্যাপ্ত মনিটর করতে পারলে তাতে সুফল পাওয়া যাবে অবশ্যই। এ ছাড়া কিশোরদের ধর্মীয় ও নৈতিক মূলবোধের শিক্ষা দেওয়াটাও জরুরি। তবে কিশোর অপরাধ দমনে সবচেয়ে বড় দায়িত্বটা পালন করতে হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেই। দ্রুত কিশোর গ্যাং কালচার রোধ করা না গেলে ভবিষ্যতে এটি বড় ধরণের সমস্যা হিসেবে দেখা দেবে। এজন্য পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে জোরালো পদক্ষেপ জরুরি।
উপজেলার কিশোর গ্যাং কালচার সম্পর্কে জানতে চাইলে, সোনারগাঁ থানার অফিসার ইনচার্জ হাফিজুর রহমান বলেন,আমরা সমগ্র থানার কিশোর গ্যাং বা কিশোর অপরাধীদের তালিকা তৈরি করেছি।খুব শীঘ্রই কিশোর গ্যাং বা কিশোর অপরাধীদের ধরতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হবে। এবং তিনি এই কিশোর গ্যাং কালচার থেকে বেরিয়ে আসতে জনগনের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।