মোঃ শামীম জেলা প্রতিনিধি পটুয়াখালী।
গত ১১-০৪-২০২২ খ্রিঃ রাত অনুমান ১২:০০ ঘটিকায় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানা যায় পটুয়াখালী সদর থানাধীন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী জনাব শিবু লাল দাস (৬০) ড্রাইভারসহ গত ১১-০৪-২০২২ তারিখ বেলা অনুমান ১১.০০ ঘটিকার সময় পুরান বাজারস্থ বাসা হতে গলাচিপা ব্যবসায়ীক কাজের জন্য রওয়ানা হয় এবং রাত্র অনুমান ০৯.০০ ঘটিকার সময় বাসায় ফিরে না আসায় তার পরিবার তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ পায়। পরবর্তীতে তারা ১২-০৪-২০২২ খ্রিঃ রাত ০০:১৫ ঘটিকায় ছেলে বুদ্ধদেব দাস (২৯) পিং- শিবু লাল দাস পটুয়াখালী এর তথ্যের ভিত্তিতে পটুয়াখালী থানার সাধারন ডাইরী নং- ৫৪২, তারিখ ১২-০৪-২০২২ খ্রিঃ মূলে ডাইরী ভুক্ত করেন।
তৎপ্রেক্ষিতে পটুয়াখালী জেলা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা শাখার বিশেষ টিম সাক্ষীদের নিয়ে তথ্য অনুসন্ধান করতে থাকে। তারা অনুসন্ধানকালে জানতে পারেন যে, ১১-০৪-২০২২ তারিখ সন্ধ্যা অনুমান ০৭.০০ ঘটিকায় গলাচিপা থানার পৌরসভাধীন আড়ৎপট্টিতে দাস এন্ড ব্রাদার্স নামক ধান চালের আড়তে ব্যবসায়িক কাজ শেষে গলাচিপা থানাধীন হরিদেবপুর খেয়াঘাটে যায়। খেয়াঘাটের কাজ শেষে রাত্র অনুমান ০৭.৩০ ঘটিকার সময় হরিদেবপুরে শোভা আবাসিক বোর্ডিং এ বিশ্রাম নিয়ে রাত্র অনুমান ০৮.১৮ ঘটিকায় তারা ঢাকা মেট্রো- ঘ- ১১-১৭৫৪ প্যারাডো জিপে করে ড্রাইভার মোঃ মিরাজ (২২) কে সাথে নিয়া পটুয়াখালী বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেন। ঐ দিন রাত্র অনুমান ০৮.৩০ ঘটিকায় গলাচিপা থানাধীন আমখোলা বাজারে জনৈক আশরাফের চায়ের দোকানের সামনে হরিদেবপুর টু শাখারিয়া পাকা রাস্তার উপর আমখোলা গজালিয়া খেয়ার কালেকশন শেষে পটুয়াখালী তার নিজ বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে।
পরবর্তীতে তার কোন খবর পাওয়া যায়নি। ১২-০৪-২০২২ খ্রিঃ রাত্র ১২:০২ ঘটিকায় এবং রাত ০১.৫৯ ঘটিকার সময় ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর থেকে তার স্ত্রীর ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর এ কল করে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি জানায় ভিকটিমকে তাদের নিকট আটক করে রেখেছে এবং একই তারিখ ১২-০৪-২০২২ খ্রিঃ দুপুর ০২.০০ ঘটিকার মধ্যে ২০ (বিশ) কোটি টাকা মুক্তিপন দিলে তারা ভিকটিমকে জীবিত অবস্থায় তাদের নিকট ফেরৎ দিবে নতুবা তাদের লাশ পাবেন। অত:পর পটুয়াখালী জেলার সুযোগ্য পুলিশ সুপার জনাব মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ পিপিএম এর নেতৃত্বে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সদর সার্কেলসহ বিভিন্ন থানার ও জেলা গোয়েন্দা শাখা(ডিবি) পটুয়াখালী সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করে ১২-০৪-২০২২ খ্রিঃ রাত ০১:৩০ ঘটিকায় আমতলি থানাধীন এ রহমানিয়া ফিলিং স্টেশন হতে পরিত্যাক্ত অবস্থায় ভিকটিমের ব্যবহৃত ঢাকা মেট্রো- ঘ- ১১-১৭৫৪ প্যারাডো জীপ উদ্ধার পূর্বক জিপের মধ্যে থাকা খেলনা পিস্তলের ভাঙ্গা অংশ ও বস্তুগত সাক্ষ্য জব্দ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১২-০৪-২০২২ তারিখ রাত্র অনুমান ১০.৩০ ঘটিকায় পটুয়াখালী থানাধীন কাজীপাড়া সাকিনস্থ এসপি কমপ্লেক্স নামক শপিং সেন্টার এর নিচে আন্ডারগ্রাউন্ডের মধ্যে দুই হাত, দুই পাঁ, মুখে, চোঁখে রশি, কাপড় ও কসটেপ দ্বারা বাধা প্লাষ্টিকের বস্তা ভর্তি অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এই সংক্রান্তে পটুয়াখালী থানার মামলা নং-১৫ তারিখ ১১-০৪-২০২২ খ্রিঃ ধারা ৩৬৪/৩৪ পিসি রুজু করা হয়েছে।
উদ্ধাকৃত ভিকটিম শিবু লাল দাসকে উদ্ধার পূর্বক ডাক্তারি চিকিৎসা প্রদান শেষে পর দিন বিজ্ঞ আদালতে কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক জবানবন্দি প্রদান করেছেন। ঘটনাস্থল এসপি কমপ্লেক্স এর নিচ হতে ভিকটিমদ্বকে অপহরণের কাজে ব্যবহৃত হাত, পা, চোখ বাঁধার জন্য কস্টেপ, গামছা, রশি, ০২টি প্লাস্টিকের বস্তা এবং সন্দিগ্ধ চুল উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও ভিকটিমদ্বয়কে অপহরণ কাজে ব্যবহৃত অটোরিক্সা এবং অটোতে থাকা অপর বস্তা ভর্তি মাতৃছায়া স্টিকার য্ক্তু শপিংব্যাগ উদ্ধার করা হয়। ড্রাইভার বিল্লাল প্যাদা জানায় যে, আমার অটোরিক্সা ভাড়া করেছিল তা এক পা ল্যাংড়া এবং অটোরিক্সায় আমিসহ চারজন ছিলাম এবং আমার অটোর পিছনের সিটে সাদা রং এর অনেকগুলো প্লাস্টিকের বস্তা তারা নিয়ে আসে। বস্তা উঠানো এবং নামানোর সময় একে অপরের সাথে সলাপরামর্শ করে আমাকে কোক ও সিগারেট আনতে দুরে পাঠায়। অপহরণ কাজের ব্যবহৃত অটোরিক্সা ও অটোরিক্সার ড্রাইভার সনাক্তের পর ড্রাইভার বিল্লাল প্যাদা এর দেয়া তথ্য ও ভিকটিম শিবু লাল দাস এর দেয়া জবানবন্দির সাথে হুবহু মিল পাওয়া যায়। ঘটনার পর পরই মামলা তদন্ত কাজে ভিকটিমদ্বয়ের দেয়া বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত, সিসিটিভির ফুটেজ, তথ্য প্রযুক্তির ও প্রচলিত নিয়মে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অত্র ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী নেতৃত্বদানকারীসহ অপহরণ কাজে বিভিন্ন পর্যায়ে অংশগ্রহণকারীদের সনাক্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থান হতে সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করে ১৬-০৪-২০২২ খ্রি. রাত ২০:৩৫ ঘটিকায় ০৬ জন আসামীদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
০১। শামিম আহম্মেদ(৩৯) পিতা-আবুল হোসেন
০২। আক্তারুজ্জামান সুমন(৩২) পিতা-আজিজুর রহমান মৃধা
০৩। মোঃ আতিকুর রহমান পারভেজ (৩২) পিতা-আজিজুর রহমান মৃধা
০৪। মোঃ মিজানুর রহমান@ সাবু গাজী(৪০) পিতা-মৃত গাজী মোখলেছুর রহমান
০৫। মোঃ বিল্লাল (৪১) পিতা-মোঃ মফিজ উদ্দিন গাজী
০৬। মোঃ সাব্বির হোসেন @ জুম্মান(২২) পিতা-মাহাবুব মাতুব্বর
গোপন তথ্যে ভিত্তিতে জানা যায় ল্যাংড়া মামুনসহ ০৩ জন অপহরণ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী। শিবু লাল ও তার ড্রাইভারকে অপহরণের পর হাত, পা, মুখ বেধে গাড়ীতে উঠিয়ে মামুনের কথিত গোপন আস্তানায় এনে শারীরিক অত্যাচার করে আটক রাখা হয়। পরদিন তাকে গুম করার উদ্দেশ্যে তার গোপন আস্তানা হতে এসপি কমপ্লেক্সে এর নীচতলার পার্কিং এর মামুনের গুদামে রাখা হয়। এ ঘটনায় বিভিন্ন স্তরে ১০ হতে ১৫ জন অপহরণকারী জড়িত রয়েছে মর্মে জানা যায় এবং অপহরণকারীরা অত্যন্ত দূর্ধষ। ভিকটিম উদ্ধারের পর পরই তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে গা ঢাকা দিয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটনের ডিবি টিম ও পটুয়াখালী জেলার একাধিক টিম দেশের বিভিন্ন জায়গায় যৌথ অভিযান পরিচালনা করে অপহরণ কাজে জড়িত মামুন @ ল্যাংড়া মামুনসহ অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারের অভিযান চলমান আছে।
সম্পাদক : মোঃ কবির নেওয়াজ রাজ, E-mail: mkprotidin@gmail.com, Contact: (+88) 01643-565087, 01922-619387; Mailing Address: House# 4/A, Main Road, Ati Model Town, Ati, Keraniganj, Dhaka-1312
© All rights reserved © MKProtidin.Com