আরিফুল ইসলাম আশাঃ
পবিত্র কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে লাগেজ বানিজ্যে কোটি টাকার অর্থ বানিজ্য মাঝপথে থমকে গেলো ভোমরা বন্দরের চিহ্নিত দালালদের। কাষ্টমসসহ স্থানীয় বিভিন্ন প্রশাসনের সাথে ভেঙে গেলো অর্থ বানিজ্যের গোপন চুক্তি। একঝাঁক সংবাদকর্মীদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এলো জাকির, মুজিবরসহ অন্যান্য কথিত দালালদের অপকর্মের চিত্র। কিন্তু সুকৌশলে ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেলো অন্য গ্রুপের রাঘব বোয়াল ও দুর্ধর্ষ হুমকিদাতা চিহ্নিত দালালরা। দুই গ্রুপ দালালদের মধ্যে স্বার্থ দ্বন্দ নিয়ে চলছিল পাল্টাপাল্টি দোষারোপ। ব্যক্তি স্বার্থ উদ্ধারে বাধা আসলেই হিং¯্র হয়ে উঠে দুটি দালাল গ্রুপের সদস্যরা। ফলে দালালদের হিং¯্রতায় বিপাকে পড়ে স্থানীয় প্রশাসন। চলতে থাকে রাজনৈতিক মহড়া আর ষড়যন্ত্রমুলক উস্কানি। দীর্ঘদিন দু’গ্রুপ দালালদের শক্তির মহড়া স্বরেজমিনে দেখতে আসে একঝাঁক সংবাদকর্মী। বাস্তব তথ্য চিত্র উদঘাটনে ভোমরা কাষ্টমসের পাবলিক দালাল জাকির, মুজিবরসহ অন্যান্য অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ছবি সংবাদকর্মীদের ক্যামেরায় বন্দী হওয়ার পর সদ্য লাগেজ অর্থ বানিজ্যে টাকার কুমির হয়ে ওঠা দুর্ধর্ষ দালালচক্র আত্মগোপন করল সংবাদকর্মীদের ক্যামেরার চোখ থেকে। ভোমরা কাষ্টমস যাত্রী ব্যাগেজ অফিসের কতিপয় অসাধু কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দু’গ্রুপের দালালদের সঙ্গে ছিল অর্থ বানিজ্যের গোপন চুক্তি। কিন্তু কাষ্টমস কর্তৃপক্ষ চিহ্নিত দালালদের লাগেজ সুবিধা কমিয়ে দেওয়ায় দু’গ্রুপের দালালরা হয়ে ওঠে বেপরোয়া। একজন আরেকজনকে করতে থাকে দোষারোপ। এক পর্যায়ে উভয় দালাল গ্রুপের দালালরা প্রতিশোধ নিতে হয়ে ওঠে প্রতিহিংসাপরায়ন। নেপথ্যে ঘটে যাওয়া অসংখ্য ঘটনা প্রকাশের পর কঠোর অবস্থানে কাষ্টমস প্রশাসন। এদিকে একঝাঁক সংবাদকর্মীদের তথ্যানুসন্ধানে বাতাসে বেজে উঠলো ধর্মের ঢাক। অন্য একটি দালাল গ্রুপের জনৈক কথিত দালাল নিজেকে স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন রাখার মুখোশ পরে পাশ কাটিয়ে গেলেন সংবাদকর্মীদের ক্যামেরার চোখ থেকে। এ বিষয়টি নিয়ে ভোমরা বন্দরের সর্বত্র চলছে গুঞ্জন। এদিকে বন্দর সংশ্লিষ্ট একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পরবর্তী স্বরেজমিন তথ্যানুসন্ধানে বেরিয়ে আসতে পারে ক্যামেরার চোখ আড়াল করা মুখোশধারী ওই দালালদের প্রকৃত চিত্র। নিজেকে আড়াল করতে যত প্রকার কৌশল অবলম্বন করা যায় সবকিছুই রয়েছে তাদের জানা। তবে পাপ কখনো বাপকে ছাড়ে না, এমনটি বললেন বন্দরের ভুক্তভোগী সংশ্লিষ্ট মহল। সংশ্লিষ্ট অভিযোগকারীরা আরো জানান, দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলে লাগেজ বানিজ্য সুবিধা না থাকায় কোটি টাকার অর্থ বানিজ্যের মিশন নিয়ে ব্যবসায়ীরা চলে আসে ভোমরা বন্দরে। স্থানীয় দালালদের যোগসূত্রে চলতে থাকে লাগেজ বানিজ্যে ট্যাক্স ফাঁকির মহোৎসব। বেনাপোল বন্দরের বিপরীতে হরিদাসপুর সীমান্তের বনগা এলাকা থেকে লাগেজ ব্যবসায়ীরা লক্ষ লক্ষ টাকার লাগেজ পন্য নিয়ে ছুটে আসে ভোমরা বন্দরে। এখানে দালালদের সহায়তায় নামমাত্র সীমিত ট্যাক্স পরিশোধের পর গ্রহন করে ট্যাক্সের রশিদ। একটি ট্যাক্সের রশিদ দেখিয়ে বহন করে নিয়ে যায় অন্যান্য দামী লাগেজ পন্য সামগ্রী। ফলে সরকার চার মাসে প্রায় অর্থ কোটি টাকার ট্যাক্স থেকে বঞ্চিত হয়। এভাবেই চলতে থাকে একের পর এক লাগেজ বানিজ্যে ট্যাক্স ফাঁকির অর্থ বানিজ্য। আর এই অর্থ বানিজ্যে ফুলে ফেঁপে ওঠে দালাল গ্রুপের লিডাররা। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কাষ্টমসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে দু’গ্রুপের দালালচক্রদের সঙ্গে গড়ে ওঠে অর্থ বানিজ্যের গোপন চুক্তি। আসন্ন কুরবানি ঈদ বাজারকে গরম করতে লাগেজ ব্যবসায়ীরা নেমেছিল কোটি টাকার অর্থ বানিজ্য নিয়ে। কিন্তু তাদের সে আশায় গুড়ে বালি। স্থানীয় দালালদের দলাদলিতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ে ভারত থেকে আসা লাগেজ ব্যবসায়ীরা। দু’গ্রুপ দালাল চক্রের থলে থেকে বেরিয়ে আসে ট্যাক্স ফাঁকির কালো বিড়াল। নড়ে চড়ে বসে স্থানীয় প্রশাসনসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা। ফলে বন্দরে দায়িত্বশীল প্রশাসনের নজরদারীতে থেমে গেলো দালালচক্রদের কোটি টাকার অর্থ বানিজ্য। একটি গোপন সূত্র জানায়, দীর্ঘ চার মাসে উভয় দালাল গ্রুপের কথিত দালাল লিডাররা লাগেজ বানিজ্যে কমপক্ষে ১০-১৫ লক্ষ টাকা উপার্জন করে। আর এই অবৈধ অর্থে তারা হাতির পাঁচ পা দেখছে। লাগেজ বানিজ্যে ট্যাক্স ফাঁকির ঘটনাটি বিভিন্ন পত্র পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত হওয়ার পর দালালরা এখন দিশেহারা। স্থল বন্দরে এসব চাঁদাবাজি, ট্যাক্স ফাঁকি ও হয়রানীর বিষয়ে কাস্টমস অফিসের সহকারী কমিশনার আমীর মামুন সাংবাদিকদের বলেন, কালো জাকির, মুজিবর ও অন্যান্য দালালদের বিরুদ্ধে একাধিকবার অভিযোগ পেয়েছি। ইতোমধ্যেই এবিষয়ে অভিযুক্তদের সতর্ক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের প্রক্রিয়া চলছে। হয়রানী ও ট্যাক্স ফাঁকি রোধে সকলের সহযোগী কামনাসহ এসব প্রতারক বা চাঁদাবাজদের খপ্পরে না পড়ার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। ইমিগ্রেশন পুলিশের নবনিযুক্ত আই.সি মাজরিহা হুসাইন বলেন, চাঁদাবাজ চক্রের দৌরাত্মে পাসপোর্ট যাত্রী ও ল্যাগেজ ব্যবসায়ীরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। শীঘ্রই তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সম্পাদক : মোঃ কবির নেওয়াজ রাজ, E-mail: mkprotidin@gmail.com, Contact: (+88) 01643-565087, 01922-619387; Mailing Address: House# 4/A, Main Road, Ati Model Town, Ati, Keraniganj, Dhaka-1312
© All rights reserved © MKProtidin.Com