শেখর মজুমদার স্বরূপকাঠি প্রতিনিধি।
সরকারি স্বরূপকাঠি পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক শ্রেনীর শিক্ষকরা
কোচিং ও গাইড বানিজ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বানিজ্যিক মনোভাবাপন্ন এ ধরনের শিক্ষকরা বাড়িতে অথবা বিল্ডিং ভাড়া নিয়ে
কোচিং সেন্টার খুলে বসেছেন। স্কুলের মতো গণহারে পড়ানো কোচিং করা
শিক্ষার্থীদের প্রতি রয়েছে তাদের আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি। নতুন শিক্ষার্থী আকর্ষণ
করতে মাঝে মাঝে পিকনিকে নিয়ে যাওয়ার নামে ছাত্রী উধাও হওয়ার মতো
অনাকাঙ্খিত ঘটনাও ঘটছে। পিকনিকে যেতে দরিদ্র অভিভাবকদের ওপর চঁাদার চাপ
বেড়ে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে। এদের মধ্যে আমিনুল ইসলাম নামে রাজনীতি
সংশ্লিষ্ট এক প্রভাবশালী শিক্ষক নিজের লাইব্রেরীর মাধ্যমে অবাধে গাইড বই
বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন । একই শিক্ষার্থীকে একাধিক প্রকাশনীর গাইড
কেনার পরামর্শ দেয় এসব শিক্ষকরা। এ ছাড়াও এক বিষয়ে পারদর্শী একজন শিক্ষক তার
কোচিংয়ের শিক্ষার্থীকে সকল সাবজেক্ট পড়ানো হয়। স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী এ
শিক্ষকদের কাছে না পড়লে নম্বর কম পাওয়ার ভয় থেকে শিক্ষার্থীরা অনেকটা বাধ্য হয়ে
তাদের কোচিংয়ে পড়তে যান।
অভিভাবকদের অভিযোগের সুত্রে অনুসন্ধানে জানাগেছে স্বরূপকাঠি পাইলট মডেল
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রায় এক ডজন শিক্ষক কোচিং বানিজ্যের সাথে জড়িত।
এদের মধ্যে আমিনুল ইসলাম,জিয়াউল ইসলাম,আতাউর রহমান নিজ বাড়িতে এবং
ভাড়া বিল্ডিংয়ের বিশাল স্পেস নিয়ে কোচিং সেন্টার খুলে বসেছেন। বিদ্যালয়ের
পাঠ দানের মতো সারি সারি শিক্ষার্থী বসে একসাথে ক্লাশ করছে সেখানে।
শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় মাঝে মাঝে ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে
পিকনিকেও য়ায় তারা। গত ১৮ অগষ্ট বৃহসপতিবার ওই তিন শিক্ষক মিলে তাদের
শিক্ষার্থীদের নিয়ে উজিরপুরের সাতলা বিলে পিকনিকে যায়। সেখান থেকে অষ্টম
শ্রেনীর এক ছাত্রী উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর
পরিবার থানায় অভিযোগ করেন। তার দুইদিন পরে ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করা হয়। এক
সময় ছাত্রদলের সক্রিয় ক্যাডার সহকারী শিক্ষক আমিনুল ইসলাম এখন আওয়ামীলীগের
কিছু নেতার ছত্র ছায়ায় লাইব্রেরী ব্যবসার নামে বিভিন্ন প্রকাশনী সংস্থার
গাইড বিক্রি করছেন। আমিনুল এসব গাইডের একটি অংশ পাইলট বিদ্যালয়ের
শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দেন বলে অভিযোগ আছে। মাইদুল হাসান মাহিন নামের
এক ছাত্রের অভিভাবক মিজানুর রহমান চান্দু বলেন,পিকনিকে যাওয়ার জন্য
শিক্ষার্থীদের (বিশেষ করে ছাত্রীদের) ভোর পঁাচটায় ট্রলার ঘাটে আসতে বলা
দায়িত্বজ্ঞান সম্পন্ন শিক্ষকদের কাজ হওয়া উচিৎ ছিল না। সাংবাদিক আনোয়ার
হোসেন বলেন পিকনিকে যাওয়ার জন্য তার ভাতিজিকে ভোর পঁাচটায় মধ্যে ট্রলার
ঘাটে আসতে নির্দেশ দেন শিক্ষকরা। আনোয়ার বলেন শিক্ষার্থীরা এক কোম্পানীর
গাইড কিনে পড়ার মধ্যেই ৫/৬ মাস পরে কিছু শিক্ষক অন্য একটি প্রকাশনীর বই
ভালো এবং সেটি কিনতে পরামর্শ দেয়। এসব শিক্ষকরা গাইড বিক্রেতাদের কাছ
থেকে সুবিধা পান বলে অভিভাবকদের অভিযোগ। এসব অভিযোগের বিষয় জিয়াউল
ইসলাম ও আতাউর রহমান বলেন,সরকারি আইনে কোচিং বন্ধ করা হয়নি। তাছাড়া
অভিভাবকরা তাদের সন্তানকে আমাদের কাছে পড়তে পাঠান। শিক্ষক আমিনুল ইসলাম
আরো একধাপ এগিয়ে বলেন, সরকার গাইড বই বিক্রি নিষিদ্ধ করেনি। তার অনেক
ক্লাশমেট প্রশাসনের উঁচুস্তরে চাকুরী করেন বলেও তিনি জাহির করেন। ওই
বিদ্যালয়ের একজন সাবেক প্রধান শিক্ষক বলেন,বিদ্যালয়টি বেসরকারি থেকে
সরকারি হওয়ার পরে কিছু শিক্ষক খেয়াল খুশী মতো চলেন। তিনি
বলেন,রাজনৈতিকভাবে নিয়োগ পাওয়া কিছু শিক্ষক সহকর্মি মনে করে ভারপ্রাপ্ত
প্রধান শিক্ষককেও গুরুত্ব দেন না।
শিক্ষকদের এসব অনিয়মের বিষয় জানতে চাইলে সরকারি স্বরূপকাঠি পাইলট মডেল
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মো. কামাল হোসেন বলেন,বিদ্যালয়ে
নামে তারা পিকনিকে যায়নি। তবে এভাবে শিক্ষার্থীদের নিয়ে পিকনিকে যাওয়া
ঠিক হয়নি বলেও তিনি স্বীকার করেন। এসব বিষয় নিয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি ও
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.মোশারেফ হোসেন বলেন, তিনি শিঘ্রই প্রধান
শিক্ষকসহ অন্যান্যদের সাথে বসবেন এবং অনিয়ম থাকলে ব্যবস্থা নিবেন।
সম্পাদক : মোঃ কবির নেওয়াজ রাজ, E-mail: mkprotidin@gmail.com, Contact: (+88) 01643-565087, 01922-619387; Mailing Address: House# 4/A, Main Road, Ati Model Town, Ati, Keraniganj, Dhaka-1312
© All rights reserved © MKProtidin.Com