মাজহারুল রাসেল : নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলায় একটি মাত্র পৌরসভা আর এই পৌরসভায় ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় মাদক ব্যবসা চলে বলে জানা যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তির সাথে আলাপ করে জানা যায় যে স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলীয় নেতাদের সহযোগিতায় সোনারগাঁও পৌরসভা এলাকায় মাদক ব্যবসা চলে।এতে করে ধ্বংস হচ্ছে যুব সমাজ আর মাদকের টাকা যোগান দিতে উঠতি বয়সের যুবকেরা জড়িয়ে পড়ছে নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে।
সোনারগাঁও পৌরসভা এলাকার আদমপুর বাজারের এক দোকানদার নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন,এই পৌরসভা এলাকায় গুটি কয়েকজন আওয়ামীলীগের নামধারী নেতাদের ছত্রছায়ায় এইখানে মাদক ব্যবসা করে থাকে মাদক ব্যবসায়ীরা। তার জন্য মাদক ব্যবসায়ীদের প্রতিদিন বা সপ্তাহে মোটা অংকের মাসোহারা দিতে হয় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের।
সোনারগাঁও পৌরসভা এলাকার ইয়াবা ব্যবসায়ী মিণ্টু মিয়া বলেন,আমাকে প্রশাসন ও স্থানীয় ব্যক্তিদের কাছ থেকে রক্ষা করেন আমার বড় ভাই ছাত্রলীগের এক নেতা। এই জন্য অবশ্য তাকে প্রতিমাসে মোটা অঙ্কের মাসোহারা দিয়ে থাকি।
সোনারগাঁও পৌরসভা এলাকায় সরেজমিনে দীর্ঘদিন অনুসন্ধানে জানা যায়,হাতেগোনা কয়েকজন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নামধারী সন্ত্রাসীরা এই মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
দীর্ঘ সময় ধরে অনুসন্ধান কাজে সহযোগিতা করেন পৌরসভা এলাকার সচেতন জনগণ,যারা এই প্রতিবেদককে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।
এই প্রতিবেদক সঠিক তথ্যের মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করার জন্য বেশির ভাগ মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে ক্রেতা সেজে মাদক ক্রয় করে গোপন ক্যামেরায় ভিডিও ধারণ করেন।যাতে সংবাদ প্রকাশের পর কোনো হয়রানির শিকার হতে না হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়,সোনারগাঁয়ে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে অনলাইন মিডিয়ায় সাংবাদিকতার নামে মাদক ব্যবসা করে যাচ্ছে উদ্ধবগঞ্জ এলাকার মিষ্টির দোকানের আশরাফুল আলম সৌরভ।কতিপয় ভূঁইফোড় অনলাইন নিউজ পোর্টাল কিংবা টিভি তৈরি করে সাংবাদিকতার কার্ড বানিয়ে মাদক বহন করার বিষয়টি যেন একটা অন্যতম বাহন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অপরদিকে গাড়িতে প্রেস লেখা লাগিয়ে মাদক পরিবহন করাও যেন সহজ উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মাদক ব্যবসায়ী আশরাফুল আলম সৌরভ মাসখানেক আগে ৫ পিছ ফেনসিডিল সহ সোনারগাঁও থানা পুলিশের হাতে আটক হন। মাদক মামলায় জেল থেকে বাহির হয়ে আবার সে মাদক ব্যবসা শুরু করেছেন। তার মাদক বিক্রির স্পট হচ্ছে সোনারগাঁও পৌরসভা এলাকায়। সোনারগাঁও লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন এর আশেপাশে,আমিন পুর মাঠে ও পুরাতন বিল্ডিং গুলি আশেপাশে।তারা প্রধান ক্রেতারা হচ্ছেন উঠতি বয়সের যুব সমাজ।
সোনারগাঁও পৌরসভায় সরেজমিনে ঘুরে এলাকার লোকজনের কাছ থেকে জানা যায়,আশরাফুল আলম সৌরভ প্রতিদিন পৌরসভা এলাকায় পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে অবাধে মরণনেশা মাদক ফেনসিডিল বিক্রি করে থাকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান,সৌরভের সঙ্গে পৌরসভা এলাকার স্থানীয় সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সক্ষ্যতার ধরুন ভয়ে সাধারণ মানুষেরা তাকে কিছু বলে না।
টিপুর্দী এলাকার চৈতি গার্মেন্টস সংলগ্ন মল্লিকের পাড়া গ্রামে মাদক সম্রাট জসিম ফেনসিডিল বিক্রি করে থাকেন।এক সময়কার জসিমের সহযোগি মনসুর এখন নিজেই একা চৈতি গার্মেন্টসের পিছনের বালুর মাঠে ফেনসিডিল বিক্রি করে থাকেন।
পৌরসভার গোয়ালদী গনির মোড় এলাকার আশেপাশে ফেনসিডিল ও ইয়াবা বিক্রি করে থাকে কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী।তাদের মধ্যে অন্যতম দীঘির পাড় এলাকার এক আওয়ামী লীগ নেতার ছোট ভাই।
সোনারগাঁও রয়েল রিসোর্ট ও দীঘির পাড় মসজিদ সংলগ্ন গ্যারেজে দীর্ঘদিন যাবৎ মাদক ব্যবসায়ী মনির ফেনসিডিল,ইয়াবা ও গাজা বিক্রি করে যাচ্ছেন।
এই পৌরসভা এলাকার সাধারণ জনগণ স্থানীয় সন্ত্রাসীদের ভয়ে মুখ বুজে সব অত্যাচার সহ্য করেই যাচ্ছে।তাই স্থানীয় জনগণের দাবি, যুবসমাজকে মাদকের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে। তাহলেই পৌরসভার মাদক মুক্ত হবে।
সোনারগাঁও পৌরসভার মাদকের বিষয়ে সোনারগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি হাফিজুর রহমান বলেন, আমরা প্রতিদিনই মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছি এবং খুব শীঘ্রই পৌরসভা এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় এনে পৌরসভা এলাকাকে মাদক মুক্ত করবো।