হাফিজুর রহমান শিমুলঃ ১৯৫০ সালে প্রতিষ্ঠিত স্কুল। প্লাস্টার খসে পড়ছে, ফাটল ধরেছে দেয়ালেও। টিনের চালে বড় বড় ফুটো, কোন রকমে পলিথিন পেপার টানিয়ে ক্লাস করছে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। আকাশে মেঘ করলেই বেজে ওঠে ছুটির ঘণ্টা। পরিত্যাক্ত ঘোষনার কথা থাকলেও এখনও তা করেনি কর্তৃপক্ষ। সেকারনে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে যে কোন মুহুর্তে। অথচ সবাই নির্বিকার।
অন্যদিকে স্কুলের পিয়ন কাম নৈশ প্রহরী আলআামিন গাজী। যিনি মন্ত্রি পাওয়ারে চলেন। শিক্ষকদের তোয়াক্কা করেননা। ছাত্রছাত্রীর সাথে খারাব আচারণ করেন। সর্বোপরি শিক্ষকদের গায়ে হাত তোলার চেষ্টা করেন। অভিভাবক আর ছাত্রছাত্রীদের উপর চড়াও হন।
এমন দুরাবস্থা সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ থানার সন্নাসির চক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ১৯৭৩ সালে স্কুলের প্রতিষ্ঠা হলেও চরম বাজে ব্যবস্থাপনায় চলছে দিনের পর দিন। শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখতে অন্য আরেকটি ভবনে পাঠদান চললেও ছাত্র ছাত্রীদের জায়গার সংকুলান হচ্ছেনা। সে কারনে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ২০০৫ সালের দিকে এই ভবনের দেয়ালে প্লাস্টার খসতে শুরু করে। সাথে সাথে দেয়ালে ফাটল দেখা দেয় এবং টিনের চালের ছিদ্র ছোট থেকে বড় হতে থাকে। বর্তমানে ভবনের ভিতর থেকে আকাশ দেখা যায়। টিন ছিড়ে আলো আধারীর খেলা চলছে। তাতে ছাত্র ছাত্রীদের চোখের বারোটা বেজে যাচ্ছে। প্রত্যান্ত অঞ্চল হলেও বর্তমানে স্কুলটিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৩৯ জন। খেলাধুলা ও লেখাপড়ায় বিদ্যালয়টির সুনাম রয়েছে, ফলাফলের দিকেও উপজেলায় সুনাম আছে। তবে দুর্নামের কমতি নেই। শিক্ষক, অভিভাবক, ম্যানেজিং কমিটির মধ্যে এক ধরণের চাপা গুঞ্জন। কথা বলতেই যেন কেঁচো খুড়তে কেউটে বেরিয়ে এলো। বিদ্যালয়ের পিয়ন কাম নৈশ প্রহরী মোঃ আলআমীন গাজী। তার বিরুদ্ধে দুনিয়ার সব অভিযোগ। সবচেয়ে বড় অভিযোগ সে নৈশ প্রহরী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেনা। তার নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে উদাসিন, শিক্ষকদের হুমকী প্রদান, মনগড়া আইন, সর্বোপরি ছাত্র অভিভাবকদের প্রতি অশালিন আচারণ তার কাছে ডাল ভাতের মতো। শিক্ষকরা বিরক্ত তার এহেন আচারনে। ক্লাসরুম ঝাড়– দেয়না, ছাত্র ছাত্রীদের ধমক দিয়ে কাজ করে নেয়, শিক্ষকদের কাজে সহযোগিতা করেনা। এমন কোন অভিযোগ নেই যে, তার বিরুদ্ধে হয়নি। খুটির জোর কোথায় জানতে স্কুলের জমিদাতা ইলিয়াস হোসেন জানান, আল আমিনকে বলে লাভ নেই, তাকে বল্লে সে উল্টো বলে চাকুরী কি তুমি দিয়েছো? চাকুরী দিয়েছে মুন্ত্রি। উনি মুন্ত্রির পাওয়ারে চলেন একারনে কাউকে মানুষ মনে করেনা।
স্থানীয় অভিভাবক জবেদা খাতুন, জাহিদ নামে তার একটি ছেলে পড়ে ৫ম শ্রেনীতে। জবেদা খাতুনের বক্তব্য, দপ্তারীর কাজ দপ্তারী করেনা। ছেলে পুলে দিয়ে করায়। না করলে রাগ ঝাল করে। বোকাবোকী করে।
৩য় শ্রেণীর ছাত্র রাহাত, তার মা ফাতিমা খাতুন বলেন, বাচ্চাদের কাছ থেকে কাজ করে নেয়। না করলে মারধোর করে। হামিদা খাতুন ও আব্দুর রাজ্জাক নামে ২ অভিভাবক একই কথা বল্লেন যে, আলআমিনের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ট। আল আমিনকে না সরালে আমরা ছাত্র ছাত্রীদের স্কুল থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেব। অবশ্য ইতিমধ্যে রেদোয়ান ৫ম শ্রেণী, আজমির ৪র্থ শ্রেণী, আবুল হাসান বাহাদুর ৪র্থ শ্রেণী, খোবায়ের ৪র্থ শ্রেণী, সেলিম ৫ম শ্রেণী তারা স্কুল ছেড়ে ইট ভাটা, বাস এবং হোটেলে শ্রমিকের কাজ করছে।
স্কুলের পিয়ন কাম দপ্তারী আলআমিনের বক্তব্য পরিস্কার, আমি এপর্যন্ত কোনদিন নৈশ প্রহরী হিসেবে স্কুলে থাকিনি। স্কুলের শিক্ষক শহিদুল স্যারের সাথে যে গ্যানজাম হয়েছিল তা মিটে গেছে। তবে শহিদুল স্যার সহ সবার ছাপ জবাব সে সব সময় এমন আচারণ করে।
স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মুসা করিম গাজী, সহ সভাপতি আবু তালেব, স্কুলের প্রধান শিক্ষক শিবানী রানী সহ স্থানীয়দের বক্তব্য একই রকম। তারা সম্মিলিত ভাবে কালিগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল হাকিম বরাবর দরখাস্ত করেন। সে প্রেক্ষিতে তদন্ত করেন শিক্ষা অফিসার শেখ মিয়ারাজুল আরেফিন ও সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান। তারা ঘটানার সত্যতা যাচাই করেন। আল আমিন হোসেনের লিখিত বক্তব্য নেন। সাথে সাথে অভিভাবক ও শিক্ষকদের আশ্বাস দিয়ে আসেন বিষয়টি নিষ্পত্তি করার। কিন্তু কোন পদক্ষেপ নেননি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। একারনে অভিভাবদের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট অফিসাররা নাকি ঘুষ গ্রহণ করে কোমলমতি শিশুদের কষ্ট বাড়িয়ে দিয়েছেন।
উল্লেখ্য সন্নাসীর চর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পিয়ন কাম নৈশপ্রহরী নিয়োগ পরীক্ষায় আলআমিন ২০১৪ সালে অংশ নেয় এবং ৫ম স্থান অধিকার করে। যথাযথ নিয়ম মানা হয়নি সে নিয়োগদান প্রক্রিয়ায়। সেকারনে খুটির জোর আর টাকার জোরের প্রভাব এখন শিশুদের উপর পড়ছে একথা স্থানীয়রা জোর দিয়ে বলেছে। তারা একথাও বলেছে বিদ্যালয়ের বিষফোঁড়া এখন আলআমিন। অগত্য তারা ‘‘বিদ্যালয়ের নতুন ভবন দাও, আলআমিনকে হটাও” স্লোগান তুলেছে।
সন্নাসীর চর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা মানসম্মত বিদ্যালয় ভবন চায়। চায় শিক্ষার সুষ্ট পরিবেশ। সেকারনে তারা নতুন ভবনের সাথে বিদ্যালয়ের বিষফোড়া পিয়ন কাম নৈশপ্রহরী আলআমিনের দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি চায়। তাদের বক্তব্য একদিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিমানে নিরালস পরিশ্রম করবেন, অন্যদিকে কিছু স্বার্থনেষীর কারনে তা পন্ডশ্রমে পরিনত হবে, তা হবেনা। অচিরে তারা আলআমিনের বিষয়টির নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অফিসার, উপজেলা নির্বাহি অফিসার ও জেলা প্রশাসকের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সম্পাদক : মোঃ কবির নেওয়াজ রাজ, E-mail: mkprotidin@gmail.com, Contact: (+88) 01643-565087, 01922-619387; Mailing Address: House# 4/A, Main Road, Ati Model Town, Ati, Keraniganj, Dhaka-1312
© All rights reserved © MKProtidin.Com