১৩ সেপ্টেম্বর ১৯৪৪, ঊষালগ্ন, ডাচাউ (Dachau) কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প, বাভারিয়া, নাৎসি জার্মানি;
প্রস্তত ফায়ারিং স্কোয়াড, হুকুম দেবার অপেক্ষায় জল্লাদ-রুপি মৃত্যু বাস্তবায়ন ইনচার্জ সিক্রেট সার্ভিস [১] লেঃ কর্ণেল (ওবেরষ্টার্ম ফুহরার) ফ্রেডরিক উইলহেলম্ রুপার্ট…
অভিযোগ গুরুতর, নাৎসির বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি; মৃত্যুদন্ডের জন্য দাঁড় করানো হয়েছে ব্রিটিশ গুপ্তচর মেডেলিন ড্যামেরমেন্ট, ইলিয়েন প্লিউম্যান, ইউল্যান্ডি বিকম্যান এবং নোরা বাকের' দের।এরা সবাই অত্যন্ত বিপদজনক বন্দী, ওদের চোখ বাঁধা, দুহাত হাত পিছনে মুড়ে বাঁধা হয়েছে। হাতে সময় কম, ইতিমধ্যেই আমেরিকান ফোর্থ ইনফ্যান্ট্রি ফ্রান্স দখল মুক্ত করেছে আর সোভিয়েত লাল ফৌজ ওয়ারস্ শহরের উপকণ্ঠে ভিস্তুলা নদী পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। চারিদিকে কোনঠাসা হয়ে ক্রমশঃ পিছু হটছে নাৎসি বাহিনী, এসময় “এনিমি অফ রাইখ”দের তো আর নেক্সট সানসাইন দেখার চান্স দেয়া যায় না।
মাথা নিচু করে হাঁটু গেড়ে বসতে বলা হলো, ঘাড়ের ঠিক উপরে নল ছোঁয়া, ইশারায় গর্জে উঠলো রাইফেল, একের পর এক মাটিতে লুটিয়ে পড়লো মেডেলিন, ইলিয়েন আর ইউল্যান্ডির মৃতদেহ…
এবার নোরা বাকের এর সিরিয়াল এলো, শ্যামলা এই তরুনীর উপর প্রচন্ড ক্ষোভ গেস্টাপো অফিসার উইলহেলম রুপার্টের। মেয়েটি ইংরেজি, ফ্রেন্চ, ডাচ ভাষায় পটু, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, পার্টিতে জার্মান’দের সাথে খুব সহজে মিশে যেতে পারতো, হতো নিয়মিত সাক্ষাৎ। অথচ তাকে ধরার জন্যি হন্যে হয়ে খুঁজেছে গেস্টাপো চরেরা, ঘোষনা করতে হয়েছে এক লক্ষ ফ্রাঁ পুরষ্কার। ব্লক রেইডের সময়ও দিব্বি স্যুটকেস হাতে ঘুরে বেড়িয়েছে, কেউ ঘূর্ণাক্ষরেও টের পায়নি এই ললনাই ব্রিটিশ গুপ্তচর! কাপড় চোপড় নয় ওর স্যুটকেসের গোপন চোম্বারে সাঁজানো থাকতো রেডিও (ওয়ারলেস সেট)। অক্ষশক্তির অবস্থান, পরবর্তি পদক্ষেপ এবং যুদ্ধ সংক্রান্তে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ব্রিটিশরা আগেই জেনে যেতো…
অভিযোগ গুরুতর, নাৎসি বাহিনীর উপর গুপ্তচরবৃত্তি করতো সে, এত সহজে মরতে দেয়া যাবে না ওকে।তীব্র ক্ষোভ আর ঘৃণায় অফিসার রুপার্ট দুজন সঙ্গীসহ রাইফেলের বাঁট দিয়ে বেধঢ়ক পেটাতে শুরু করলো, লাথি মেরে মেরে রক্তাক্ত করে ফেলা হলো ওকে…
গেস্টাপোর ঘুম হারাম করা এই ব্রিটিশ স্পাইয়ের নাম নূর-উন-নিসা ইনায়েত খান, যাকে নিয়ে হলিউডে তৈরী হয়েছে শ্বাসরুদ্ধকর মুভি (A Call to Spy), এস্পাওনাজ জগতের প্রিন্সেস নুর ইনায়াত খান, নোরা ইনায়াত খান এবং নোরা বাকের নামেও পরিচিত। বাবা ইনায়েত খান বরোদা (মহিশূর) রাজ্যের প্রখ্যাত সুফি এবং সঙ্গীতজ্ঞ। যিনি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত গেয়ে হায়দরাবাদের নিজামের কাছ থেকে ‘তানসেন’ উপাধি পান, তাঁর দাদি কাসিম বিবি ছিলেন “শের ই মহীশূর” টিপু সুলতানের নাতনি। ধমনীতে বীরের রক্ত….
চলবে...
লেখক ঃ বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির আইন প্রশিক্ষক হাসান হাফিজুর রহমান।
সম্পাদক : মোঃ কবির নেওয়াজ রাজ, E-mail: mkprotidin@gmail.com, Contact: (+88) 01643-565087, 01922-619387; Mailing Address: House# 4/A, Main Road, Ati Model Town, Ati, Keraniganj, Dhaka-1312
© All rights reserved © MKProtidin.Com