এ,এস,এম জাফর ইকবাল (যশোর) , ঝিকরগাছা : যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা ইউনিয়নের সুরতজান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কমিটি গঠন প্রক্রিয়া এবং কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষর জাল করে রেজুলেশন করার বিষয়ে বিজ্ঞ আদালতে দুটি মামলা চলমান থাকার পরও বিদ্যালয়ের নবসৃষ্ট ৩টি পদে তড়িঘড়ি করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পায়তারা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আগামীকাল রবিবার (২৯ জানুয়ারী) যশোর জেলা স্কুলে নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বলে জানান খোদ প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা ইউনিয়নের সুরতজান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে ৩৭ বছর পূর্বে যোগদান করেন। তারপর বিদ্যালয়ের সরহারী প্রধান শিক্ষক হন এবং বর্তমানে প্রধান শিক্ষককের দায়িত্ব পালন করছেন নজরুল ইসলাম। তিনি পৌরসদরের পারবাজার শিক্ষকপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। দীর্ঘ ৩৭ বছর শিক্ষকতা জীবনের তার আর মাত্র ১মাস মেয়াদ রয়েছে। আর এই ১ মাসের মধ্যে তিনি বিদ্যালয়ের ৩টি পদে নিয়োগ দিয়ে যেতে চান তিনি। তবে বিদ্যালয়ের নামে বিজ্ঞ আদালতে দুটি মামলা চলমান রয়েছে। যার একটি মিমাংশার কথা হলেও আর একটি স্বাক্ষর জালিয়াতি মামলা চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় গ্রামবাসী।
বিজ্ঞ দায়রা জজ আদালতে চলমান দেওয়ানী ২৭/২২ নং মামলার নথি সুত্রে জানা যায়, গত ২-২-২০২২ তারিখে স্কুল কমিটি গঠন কার্যক্রমে কাউকে না জানিয়ে, ভোটার তালিকা উন্মুক্ত না করে প্রধান শিক্ষক উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার যোগসাজশে নিজেদের পছন্দের লোক দিয়ে প্রতি পদের বিপরীতে একটি করে মনোনয়ন ফরম তুলে কমিটি গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সাবেক কমিটির অভিভাবক সদস্য মনিরুল ইসলাম স্কুলের প্রধান শিক্ষক, সভাপতি, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ ৮জনকে বিবাদী করে একটি মামলা দায়ের করেন।
পরবর্তীতে কমিটির সদস্যদের না জানিয়ে, কোনো ধরনের সভা আহবান না করেই গোপনে তাদের স্বাক্ষর জালিয়াতি পূর্বক আলোচনা সভার রেজুলেশন করে সেই রেজুলেশন মোতাবেক নবসৃষ্ট অফিস সহকারী, আয়া ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালানোর প্রচেষ্টার অভিযোগে কুলিয়া গ্রামের সাবেক ইউ পি সদস্য আনারুল ইসলাম বাদী হয়ে ৫জনকে আসামি করে আদালতে আরেকটি মামলা করেন। যার নং সি আর ২৮/২০২৩ যেটির পি বি আই এর তদন্ত চলমান রয়েছে।
বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির একমাত্র নারী অভিভাবক সদস্য লাকী বেগম নিজেও জানেননা তিনি এই কমিটির সদস্য আছেন। লাকি বেগম বলেন, একদিন হেড স্যার আমাকে একটা কাগজে সই করিয়ে নিয়ে ছিলো। কিসের জন্য সেটা জানি না। তারপর আজ পর্যন্ত আর কোনো কাগজে আমি স্বাক্ষর করিনি। আমি কমিটির সদস্য আছি কিনা সেটাও আমি জানিনা। কমিটির কোনো চিঠি আমাকে দেওয়া হয়নি। স্কুলের একজন অভিভাবক মোঃ রফিউদ্দিন বলেন, আমি কমিটির মনোনয়ন ফরম কিনতে গিয়েছিলাম কিন্তু প্রধান শিক্ষক আমাকে কিনতে বাধা দিয়েছে। শিক্ষা অফিসেও গিয়ে ছিলাম কিন্তু অফিসার বলে ছিলেন ফরম দেওয়া যাবেনা।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল আলিম বলেন, আমি এখানকার ইউপি সদস্য কিন্তু আজ পর্যন্ত স্কুলের কোনো কাজে প্রধান শিক্ষক আমাকে ডাকেনি। স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও তিনি গ্রামবাসী কাওকে ডাকেন না। নিজের ইচ্ছে মত সব করেন। মনে হয় এটা উনার পৈতৃক প্রতিষ্ঠান। এজন্যই গ্রামের লোক এখন আর স্কুলে বাচ্চা ভর্তি করাচ্ছে না। শুধুমাত্র নজরুল স্যারের স্বেচ্ছাচারিতায় স্কুলটি ধ্বংস হয়ে গেছে।
এদিকে যার নামে স্কুল সেই সুরতজানের দৌহিত্র, স্কুলের জন্য জমিদাতা, বিশিষ্ট সমাজসেবক মীর বাবরজান বরুণ বলেন, আমাদের পৈত্রিক জমিতে স্কুল, প্রতি বছর স্কুলের উন্নয়নে আমরা অনেক টাকা খরচ করি, আমার ছোটভাই আমেরিকা প্রবাসী মীর মনিরুজ্জামান বাবু এই স্কুল ছাড়াও আরও ৬টি স্কুলের মানোন্নয়নে প্রতি মাসে বিপুল অঙ্কের টাকা অনুদান দেয় কিন্তু দুঃখের বিষয় এই স্কুলে আমাদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। স্কুলের দুর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষক গোপনে তার পছন্দের লোক দিয়ে কমিটি করে এখন বিপুল অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সভাপতির সহযোগিতায় নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। কমিটির মেয়াদ এক বছর পার হয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি স্কুলে প্রবেশ করতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না কারন স্থানীয় জনগণ উক্ত সভাপতিকে চায়না।
৫/৬ বছর ধরে স্কুল ঝাড়ামোছা করা মনোয়ারা বেগম বলেন, আমার শাশুড়ী এই স্কুলে কাজ করতো। তিনি মারা যাওয়ার পর চাকরিটা আমাকে দেবে এই প্রতিশ্রুতিতে বিগত ৬ বছর ধরে এখানে বেগার খাটছি। এখন যখন নিয়োগের সময় এসেছে তখন হেডস্যার আমাকে দরখাস্তই করতে দিলোনা। তিনি আমাকে বলেছেন, ঐ পদে চাকরি পেতে অনেক টাকা লাগবে, তোমারতো এত টাকা দেবার ক্ষমতা নেই তাই শুধুশুধু আবেদন করার দরকার নেই। উক্ত পদে টাকা নিয়ে প্রধান শিক্ষকের লোক ঠিক করা আছে বলে তিনি জানান।
চলমান মামলার অভিযোগ স্বীকার করে স্কুলের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, মামলা চললেও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনো আইনগত বাধা নেই। তিনি আরও বলেন, আমার চাকরি আছে আর মাত্র একমাস। তাই আমি স্কুলের ভালোর জন্যই সব কাজ গুছিয়ে রেখে যেতে চাইছি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুজ্জামান মোঃ জাহাঙ্গীর হুসাইন মিঞা বলেন, তাদের কাগজপত্র আমি দেখেছি নিয়োগে কোনো বাধা নেই। মামলা চলছিলো সেটা নিষ্পতি হয়ে গেছে। বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে দুটি আর একটি জালিয়াতির মামলা আছে সেটার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি আরো বলেন বিষয়টা আমি জানি না। যেহেতু আপনি আমাকে জানালেন সেহেতু আমি বিষয়টি দেখছি।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম গোলাম আজম বলেন, যেহেতু কমিটির কার্যক্রম চলতে কোনো বাধা নেই তাই মামলা চলমান থাকার পরও যদি নিয়োগ বোর্ড বসে সেটা হতে পারে। পরবর্তীতে কোর্টের রায় যদি বিপক্ষে যায় তবে উক্ত নিয়োগও বাতিল হয়ে যাবে।