আনোয়ার হোসেনঃ
প্রায় ২শ সন্ত্রাসী দিয়ে বৌদ্ধদের চলাচলের ২শ বছরের পুরানো রাস্তাসহ পাশের খালি জায়গাটি দখল করে নেয় ভূমিদস্যুরা।
নোয়াখালীর সেনবাগের সংখ্যালঘু বৌদ্ধ গ্রামের প্রায় ২শ বছরের মানুষের চলাচলের একমাত্র রাস্তা বন্ধ করে দোকান ঘর নির্মান করে প্রবাসী লোকমান হোসেন নেতৃত্বে কতিপয় সন্ত্রাসীরা। পরে স্থানীয় বৌদ্ধরা মানবন্ধন করে ইউএনও কে অবহিত করলে তিনি এসে রাস্তা খুলে দেন। এবং উভয়পক্ষের সাথে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য ইউএনও এর অফিসে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
কিন্তু গতকাল দিবাগত রাতে স্বসস্ত্র মহড়া দিয়ে প্রায় ২শ সন্ত্রাসীদের দিয়ে দখল করার জন্য টিনের বাড়িটিকে পিছনের একটি অসহায় বড়ুয়া পরিবারের জায়গা থেকে বর্ধিত করে নেয় পাশাপাশি পিছনের পুরো খালি জায়গাটিও দখল করে নেয়। এবং প্রকাশ্যে চীৎকার দিয়ে সবাইকে হুমকি দেয়, যে এই জায়গায় নামবে তার লাশ পড়বে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, প্রধান রাস্তার সম্মূখভাগের এক টুকরো জায়গা কিনে প্রায় ২৫০ বছরের পথ বন্ধ করে দিয়েছিল পরে রাস্তার জায়গা খুলে দেন এসি ল্যান্ড ও ভারপ্রাপ্ত ইউএনও তানজিম আলম তুলি। তিনি উভয়পক্ষকে আলোচনায় বসার জন্য অফিসে আহবান জানান।
গ্রামবাসীর দাবী, পূর্বে ঐ জমি বৌদ্ধদের ছিল, তাই পথের জন্য কখনও ঝামেলা হয়নি। কালক্রমে হাত বদল হয়ে মুসলিমদের কাছে বিক্রি হয়। আগের মালিকও বাঁধা দেননি। কিন্তু বিগত ৩/৪ মাস আগে গোপনে লোকমান হোসেন কিনে নিয়ে খতিয়ান করেই রাস্তাটি বন্ধ করে দেন।
অভিযুক্ত প্রবাসী লোকমান হোসেনের সাথে ফোনে কথা বলে জানা যায়, তিনি টাকা দিয়ে জমি কিনে তা খতিয়ান করেছেন। সরকারী নিয়মকানুন মেনেই সব কিছুই করেছেন। তিনি রাস্তার জায়গা দিবেন না। তার জায়গার সাথের জায়গা দিলেই সে রাস্তা দিবে। অন্যথা সে অন্য কোন শর্ত মানবেন না।
স্থানীয় গ্রামের নেতা বিপ্রসেন বড়ুয়া মাস্টার বলেন, এখানের বৌদ্ধরা খেটে খাওয়া মানুষ। অনেকের মাথার ঠাই টুকুও নেই। গ্রামের চলাচলের কথা ভেবে যার যার জায়গা পড়ে তা ছেড়ে দিয়েছে। জনগোষ্ঠীর এই টাকা দিয়ে পথটুকু কেনার সামর্থ্য নেই।
তারপর সাংবাদিক প্রদীপ জয় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। লোকমান হোসেনকে উক্ত চলাচলের রাস্তার জায়গার জন্য মূল্য দিতে চাইলে তিনি টাকা নিতে অস্বীকার করেন। তিনি জায়গার পরিবর্তে জায়গা দাবী করেন। পরে ইউএনও অফিসে আলোচনায় বসার আহবান করেন। তিনি ইউএনও এবং ইউএনও কে উপেক্ষা করে রাতের অন্ধকারে সন্ত্রাসীদের দিয়ে রাস্তার পরিবর্তে জায়গা দখল করে ঘর নির্মানের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী জায়গাটিও দখল করে নেন। ভুক্তভোগী পরিবার থানায় অভিযোগ করছেন বলেও জানা যায়।
সেনবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে ফোনে কথা বলে জানা যায়, তিনি এই ব্যাপারে অবগত নন। তবে এই ধরনের ঘটনা ঘটলে, ইউএনও এর নির্দেশ পেলেই অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করার ব্যবস্থা করবেন।
গতকাল দখলের ব্যাপারে এসি ল্যান্ড তানজিম আলম তুলি কে জানানো হলে, তিনি বলেন, তাদেরকে আলোচনায় বসার জন্য আহ্বান করেছিলাম তবে তারা কেন দখল করে নিল, তা তারা অবগত নয়। তবে ইউএনও ছুটি শেষে অফিসে যোগদান করেছেন। তাই তিনিই এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবেন। অন্যদিকে সকাল থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
উল্লেখ্য, ১৯১০ সালে উক্ত বৌদ্ধ গ্রামে মতইন বৌদ্ধ বিহারটি নির্মিত হয়েছিল। কিন্তু ভারতের বাবরী মসজিদ ভাঙ্গার ইস্যুতে উক্ত বড়ুয়া পাড়াসহ বৌদ্ধ বিহারটিতে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেন উগ্রবাদীরা। তাই ১৯৯২ সালে নিরাপত্তার খাতিরে তৎকালীন ১০ম সঙ্ঘরাজ জ্যোতিপাল ভিক্ষুর তত্ত্বাবধানে গ্রামের অভ্যান্তরে পুনঃনির্মিত হয়। তখন থেকে এখনও ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে জীবন যাপন করে আসছে অন্যদিকে সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর র্যা ব ও পুলিশের কড়া নিরাপত্তায় বৌদ্ধরা ধর্মীয় অনুষ্ঠান সম্পাদন করে আসছে।
সম্পাদক : মোঃ কবির নেওয়াজ রাজ, E-mail: mkprotidin@gmail.com, Contact: (+88) 01643-565087, 01922-619387; Mailing Address: House# 4/A, Main Road, Ati Model Town, Ati, Keraniganj, Dhaka-1312
© All rights reserved © MKProtidin.Com