পিতামাতার মৃত্যুর পরেই মাতৃকুলের বসতভিটা ও শ্বশুরালয় সূত্রে বিগত বছর দেড়েক আগে কুষ্টিয়া স্থায়ীভাবে বসবাস আরম্ভ। শহরের বিভিন্ন বয়সী তরূন যুবকদের সাথে ওঠাবসা নিয়মিত এবং চায়ের দোকানে অট্টহাসির পরিচিত মুখ "রবিন"।
কুষ্টিয়ার মডেল থানায় দায়েরকৃত অভিযোগসূত্রে জানা যায় লাখে বাইশ হাজার টাকার চড়া সুদের কারবারি এই রবিন বছর পুর্বে আনোগোনা শুরু করেন থানাপাড়া ক্রিসেন্ট ক্লাব সংলগ্ন একটি মার্কেটের দোতলায় অবস্থিত লিফট কোম্পানির অস্থায়ী কার্যালয়ে। থানাপাড়া নানীবাড়ি হওয়ায় স্থানীয় যুবকদের সাথে ছোটবেলা থেকে পরিচয় তার। উদ্দেশ্য নিয়ে চৌকস যুবকদের উচ্চ উপরি কামাইয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মাঠে নগদ ১৫ লক্ষ টাকা ছড়ায় চড়া সুদের কারবারে।
অভিযোগকারী থানাপাড়ার স্থায়ী বাসিন্দা ও বেষ্ট এলাভেটর লিফট কোম্পানির মার্কেটিং কর্মকর্তা এবং বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদ নকীব হাসান মান্তুর বক্তব্য সহকর্মী সাদ্দাম হোসেনের বাল্যবন্ধু হিসেবে অফিসেই পরিচিয় রবিনের সাথে, পূর্বে মুখ চিনলেও কখনো আড্ডা আলাপ হয়নি একত্রে। পিতা মাতার অকাল প্রয়াণের রাতারাতি কোটিপতি ধনাঢ্য হয়েও সুনির্দিষ্ট পেশা না শিক্ষগত যোগ্যতা না থাকায় পুঁজির টাকা ভেঙেই সংসার চলে রবিনের। আজ জমির ব্যবসা, কাল ডেভেলপার কোম্পানি, পরশু মাল্টি পারপাস সমাবায় সমিতি এসব নিয়েই অফিস শেষে আড্ডায় রবিনের সাথে ঘণিষ্ট সম্পর্ক গড়ে ওঠে নকীব হাসান মান্তু ও সাদ্দাম হোসেনের।
ঘটনার ধারাবাহিকতায় লিফট কোম্পানির পূর্ণকালীন চাকরিজীবীদের উপরি ইনকামে প্রলুব্ধ করে দেওয়া অনুমোদনহীন সমিতির বিষয়টি গোপন করে পরিচিত আত্মীয় বন্ধুদের মধ্যে ১ লক্ষ টাকা করে বিতরণের শর্তে কর্মচারী নিয়োগ করেন খন্ডকালীন নকীব হাসান মান্তুকে। রবিনের কোর্ট পাড়াস্থ বাসার ঠিকানায় ব্যবহৃত হতো অবৈধ সমিতির নামে ঋণ বিতরণে ক্ষেত্রে, বাকিটা ফেসবুক ও মোবাইলে অপারেশন চলত রবিনের।
উল্লেখ্য যে খাতা কলমে ১৪,৬০,০০০/- টাকা পুঁজি নিয়ে সুদ কারবারের ৩ মাসের মাথায় আসল তুলে নেন এই পূর্ণকালীন সুদ কারবারি। স্ট্যাম্পের উপর নিজেকে প্রথম পক্ষ রেখে ঋণ গ্রহীতাদের ২য় পক্ষ রেখে ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স, টিন সার্টিফিকেট, ব্ল্যাংক চেক নিয়ে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম চলতে থাকে এই ধনাঢ্য বেকার পেশাহীন সুদ কারবারির।
২৭ জনের স্ট্যাম্পে চুক্তিনামার কাগজ সম্বলিত দলিল দস্তাবেজ সাক্ষ্য প্রমাণ দেখিয়ে এ সংবাদ প্রতিবেদকের কাছে নকীব হাসান মান্তু জানান আসল টাকা তোলার পরেও লাখে ২২,০০০/- সুদ হিসেবে অল্প সময়ে রবিনের খাতায় দেখা দেয় সুদের অঙ্ক প্রায় ৫০,০০,০০০/- পঞ্চাল লক্ষ টাকা।
বে লীফ রেস্টুরেন্টের স্বত্তাধিকারী আসাদুল্লাহ আল গালিব লিংকন ব্যবসায়ীক সূত্রে নকীব হাসান মান্তুর মাধ্যমে ঋণের মৌখিক আবেদনের প্রেক্ষিতে কাগজপত্র যাচাই বাছাই পূর্বক পূর্ব পরিচিত হওয়ায় তাতক্ষণাত ঋণ প্রদান করেন ২ লক্ষ টাকা এ রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীকে। পরবর্তীতে লিংকনের মাধ্যমে পাঁচ রাস্তার মোড় কেন্দ্রীক ২৭ জন ব্যবসায়ীর কাগজপত্র নিয়ে ১ লক্ষ টাকা করে মাসে বাইশ হাজার টাকার চড়া সুদে বিতরণ করেন রবিন। প্রথম তিন চার মাস নিয়মিত কিস্তি পেলেও, কিস্তির পরিমাণে মূলধনের টাকার শোধের পর্যায়ে চলে গেলে লিংকন নেটওয়ার্ক এর ঋণ গ্রহীতারা কিস্তি দিয়ে অস্বীকৃতি জানায়।
এদিকে হিসাবের খাতায় টাকার অঙ্ক বেড়ে চললেও বকেয়া অনাদায়ে দিশে হারা হয়ে পড়ে রবিন মাহমুদ রনি। কর্মচারীদের উপর বল প্রয়োগ করে টাকা তোলার চাপ দিতে থাকলে নানা টালবাহানায় গড়িমসি করে ঋণ গ্রহীতারা। সরেজমিনে মাঠে পুঁজিপতি রবিন ও কর্মচারী মান্তু গেলে খোজ পাই লিংকন সুকৌশলে অন্যের দোকান দেখিয়ে, চেক আর দলিল তৈরী করে নিজেই অধিকাংশ টাকা আত্মসাৎ করে। ফোনে লিংকন একথা স্বীকার করলেও সামনে আসতে চাইনা। কর্মচারী মান্তুকে এক পর্যায়ে বাধ্য করে লিংকনের রেস্টুরেন্টে গিয়ে রবিনের ভাড়াটে বাহিনী দিয়ে তুলে ব্যাপক প্রহার করে লিংকনকে থানাপাড়াস্থ লিফট কোম্পানির অফিসের দোতলায়। স্থানীয়রা হৈ হট্টগোল দেখে এগিয়ে আসলে লিংকনকে তাতক্ষণাত সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং দুদিনের মধ্যেই অভিযোগ দায়ের হয় সুদ কারবারি রবিন ও তার ভাড়াটে বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে। এদিকে বলপ্রয়োগ করে আঘাত আক্রমণের মাধ্যমে কর্মচারী মান্তুকে লিংকনের সনাক্তকারী এবং দলিলে সাক্ষী হওয়ায় জোরপূর্বক সাক্ষর নেন রবিন গং পূর্বে সৃজনকৃত ৫০ লাখ টাকার পরিমাণ উল্লেখ করে দায়ভার সম্পূর্ণ নকীব হাসান মান্তুর উপর চাপিয়ে। এমনকি মান্তুর বাড়িতে গিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেন রবিন এবং তার ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা।
লিংকনের ব্যাপক প্রহারের ঘটনাটি ফেসবুকে প্রচার হলেও উচ্চ টাকার লেনদেনে বিষয়টি দফারফা করে রবিন। পরদিনেই কুষ্টিয়া মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন কর্মচারি নকীব হাসান মান্তু এবং আসাদুল্লাহ আল গালিব লিংকনের বিরুদ্ধে। এর পূর্বেই লিংকনে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে মারধর এবং ঋণের অতিরিক্ত পরিমাণ টাকা দাবী সম্বলিত একই কায়দায় পূর্বে সৃজনকৃত স্ট্যাম্পে জোরপূর্বক সাক্ষর নেওয়ার বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া মডেল থানায় ১ম অভিযোগটি করেন। ২য় অভিযোগের প্রেক্ষিতে কুষ্টিয়া সদর ফাড়িতে নকীব হাসান মান্তুকে প্রাথমিক তদন্তের বিরুদ্ধে ডেকে পাঠাপে তিনি সকল দলিল প্রমাণসহ হাজির হয়ে রবিন মাহমুদ রনির প্রচারণা ও জালিয়াতির ব্যাপারটি অবগত করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত তদন্ত কর্মকর্তার নিকট।
পাশাপাশি নকীব হাসান মান্তু ঋণদাতা রবিন মাহমুদ রনি এবং অস্বীকারকারী গ্রহীতা লিংকনের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া মডেল থানায় ৩য় অভিযোগটি দায়ের করেন। পাশাপাশি মিথ্যা তথ্য একটি স্বনামধন্য পত্রিকা ও ফেসবুকে ছড়ানোর বিপরীতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী মামলাত প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন বলে জানান সংবাদ প্রতিবেদককে।
বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ায় বিভিন্ন সামাজিক ও যোগাযোগ মাধ্যমে হেয় প্রতিপন্ন ও অপমানের শিকার ভুক্তভোগী ও একসময়ের কুষ্টিয়া জেলা ক্রিকেট দলের সাবেক ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া সংগঠক নকীব হাসান মান্তু বলেন, " অভিযোগের বিষয়টি সত্যতা প্রমাণের পূর্বেই আমাকে মিডিয়া ট্রায়াল ও ভাইরালের হুমকি দেওয়া হচ্ছিল, পরিকল্পিতভাবে আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাসিয়ে অর্থ আদায়ের উদ্দেশ্যেই রবিন গোপনে ধারণকৃত ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই প্রশাসন ও বিচারালয় এবং কুষ্টিয়ার সর্বস্তরের জনগণের কাছে। প্রায় অর্ধ শতাব্দী থানাপাড়ায় পৈত্রিক নিবাস আমাদের, বড় বোন কলেজের অধ্যক্ষ, ভাইয়েরা মন্ত্রণালয় ও বেসরকারি বহুজাতিক কোম্পানিতে কর্মরত হওয়ায়, বৃদ্ধ মা, স্ত্রী, মেয়েকে নিয়ে লিফট কোম্পানির মার্কেটিং করে সাধারন জীবনযাপন করছি। কখনো কোনো অপরাধ, অন্যায়ে অভিযুক্ত কিংবা দোষী সাব্যস্ত হইনি। বারংবার অনুরোধে চাকরির পাশাপাশি রবিনকে সাহায্য করতে গিয়ে এখন নিজেই হয়রানির স্বীকার হচ্ছি।
এদিকে গতকাল রাতে আনুমানিক ২ ঘটিকায়, রবিনের ফেসবুক আইডি থেকে পোষ্টে পুনরায় টাকা দাবি করা হয় ষাট লক্ষ (৬০,০০,০০০/-) টাকা। এসময় রবিন লেখেন সাদ্দামের কাছেও ৫ লক্ষ টাকা পাওনা তার, মান্তু এবং সাদ্দাম লিংকনকে দিয়ে আমার টাকা উঠিয়ে দাও। বারংবার নতুন নতুন অঙ্কের টাকার দাবি তুলে প্রকৃত বিষয়টি এখনো স্পষ্ট না থাকলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালাচ্ছে ও প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছে রবিন মাহমুদ রনি গং।