মোতালেব বিশ্বাস, ইবি প্রতিনিধি।।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) এর ফার্মেসি বিভাগে ভর্তিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ফার্মেসি কাউন্সিল অব বাংলাদেশ। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরেজমিন পরিদর্শন করে চলতি মাসে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, ফার্মেসি কাউন্সিল অব বাংলাদেশের নির্ধারিত শর্ত না মানায় ফার্মেসি বিভাগের অনার্স কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তিতে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।সেই সঙ্গে ফার্মেসি শিক্ষার মানোন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয়কে সময় বেঁধে দিয়ে চূড়ান্ত নোটিশ দিয়েছে কাউন্সিল। যা আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে কার্যকর করতে হবে।
ফার্মেসি কাউন্সিল অব বাংলাদেশে দেওয়া শর্তগুলো হলো - আটটি ল্যাব স্থাপন, শিক্ষক সংকট কাটানো, প্রয়োজনীয় রাসায়নকি সামগ্রী পর্যাপ্ত পরিমাণে রাখা রাখা, সমৃদ্ধ লাইব্রেরি তৈরি, প্রতিটি পরীক্ষাগারে কমপক্ষে ২৫ শিক্ষার্থী একত্রে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার উপযোগী ন্যূনতম ৫০০ বর্গফুট আয়তন বিশিষ্ট কক্ষ, পরীক্ষাগারের যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করা। আর এ সময়সীমার পর ফার্মাসি বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়কে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ফার্মেসি কাউন্সিল সূত্রে জানা গেছে, কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এসব নির্দেশ অমান্যকারী কোনো বিশ্ববিদ্যালয় যদি ফার্মেসি অনার্স কোর্সে (বি.ফার্স) শিক্ষার্থী ভর্তি করে তাহলে সেসব শিক্ষার্থীর রেজিষ্ট্রেশন দেবে না কাউন্সিল। এমনকি শিক্ষার্থী পাস করার পর পেশাগত সনদ দেওয়া হবে না বলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে সংস্থাটি।।
এছাড়াও সারাদেশে ৪৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল। এই সংস্থাটির প্রতিনিধিরা চলিতি বছর ২৮টি বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করে ল্যাব সংকট, ল্যাবের যন্ত্রপাতি অকেজো, শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষ সংকটসহ নানা কারণে সরকারি-বেসরকারি ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের বি.ফার্স কোর্সের অ্যাক্রেডিটেশন নবায়ন স্থগিত করেছে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি শিক্ষার মান উন্নয়নে বেশ কিছু সুপারিশ ও নির্দেশনা দিয়েছে এই সংস্থাটি। আগামী ৩১ ডিসেম্বর মাসের মধ্যে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন না হলে আগামী ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে বি.ফার্ম কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখতে হবে। তবে মানবিক দিক বিবেচনা করে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি শিক্ষার্থীদের রেজিষ্ট্রেশন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটি।
বাংলাদেশ ফার্মাসি কাউন্সিলের সচিব মোহাম্মদ মাহবুবুল হক জানিয়েছেন, এসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সতর্কমূলক চিঠি দেওয়া হয়েছিল কিন্তু তারা কর্ণপাত করেনি। এবার চূড়ান্ত নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এর আগে গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থীরা শিক্ষক সংকট, শ্রেণীকক্ষ, ল্যাব, ল্যাব সহকারী, অফিস কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ নানা সংকটের কারণে বিভাগে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ছিলো, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগে ২৫০ শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক রয়েছেন মাত্র দু'জন এবং বিভাগটিতে ল্যাব থাকলেও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যন্ত্রাংশ এনে গবেষণা কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের সে দিনের মানববন্ধনের এক পর্যায়ে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য সেখানে গিয়ে সমস্যা সমাধানে আবারও আশ্বাস দেন। তবে এ আশ্বাস গত ১১ মাসেও কার্যকর হয়নি। এখনও শিক্ষক পাননি বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আব্দুস সালামের সাথে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।