জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস ১০ই জানুয়ারি।
১৯৭২ সালের এইদিনে স্বাধীন বাংলার আকাশে সূর্যোদয়ের মতো চির ভাস্বর-উজ্জ্বল মহান নেতা ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফিরে আসেন তাঁর প্রিয় মাতৃভুমি বাংলাদেশে। স্বদেশের মাটি ছুঁয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের নির্মাতা শিশুর মতো আবেগে আকুল হলেন। আনন্দ-বেদনার অশ্রুধারা নামলো তাঁর দু’চোখ বেয়ে। প্রিয় নেতাকে ফিরে পেয়ে সেদিন সাড়ে সাত কোটি বাঙালি আনন্দ অশ্রুতে সিক্ত হয়ে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ধ্বনিতে প্রকম্পিত করে তোলে বাংলার আকাশ-বাতাস।বঙ্গবন্ধুর এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে আখ্যায়িত করা হয়েছিল ‘‘অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা হিসেবে”। দীর্ঘ সংগ্রাম, ত্যাগ-তিতিক্ষা, আন্দোলন ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে বির্জয় অর্জনের পর বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার প্রশ্নে বাঙালি জাতি যখন কঠিন এক বাস্তবতার মুখোমুখি তখন পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ দিবাগত রাতে ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। দীর্ঘ দিন পাকিস্তানের কারাগারে প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর প্রহর গুনতে গুনতে লন্ডন-দিল্লি হয়ে মুক্ত স্বাধীন স্বদেশের মাটিতে ফিরে আসেন বাঙালির ইতিহাসের বীর শেখ মুজিবুর রহমান।বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাঙালী জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামের আরেকটি আলোকিত অধ্যায়। প্রকৃতপক্ষে ১০ জানুয়ারিতে বাংলার রাজনীতির মুকুটহীন সম্রাট সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা শেখ মুজিবকে পেয়ে বাঙালী বিজয়ের পরিপূর্ণ আনন্দ প্রাণভরে উপভোগ করেছে। এ দিনই বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রবেশ করে গণতন্ত্রের এক আলোকিত অভিযাত্রায়।বঙ্গবন্ধু একটি বিবৃতি প্রদান করেন।‘জয় বাংলা’ রণধ্বনি উচ্চারণের মধ্য দিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলার মুক্তি সংগ্রামে স্বাধীনতার অপরিসীম ও অনাবিল আনন্দ অনুভব করছি। এ মুক্তি সংগ্রামের চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ।আমার জনগণ যখন আমাকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করেছে তখন আমি রাষ্ট্রদ্রোহের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে একটি নির্জন ও পরিত্যক্ত সেলে বন্দি জীবন কাটাচ্ছি।বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে সমর্থন ও সহযোগিতা দানের জন্য ভারত, সোভিয়েত ইউনিয়ন, পোল্যান্ড, ফ্রান্স ও ব্রিটেনকে আমি ধন্যবাদ জানাই। স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ এখন একটি বাস্তব সত্য।বঙ্গবন্ধু বন্দী থাকা অবস্থায় বলেছিলেন, আমি আর এক মুহূর্ত এখানে থাকতে রাজি নই। আমি আমার জনগণের কাছে ফিরে যেতে চাই।’ বিবৃতির শেষে সাংবাদিকরা বঙ্গবন্ধুকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি যে আপনার বাংলাদেশে ফিরে যাবেন, সেই দেশ তো এখন ধ্বংসস্তূপ?’তখন জাতির জনক উত্তর দিয়েছিলেন ‘আমার বাংলার মানুষ যদি থাকে, বাংলার মাটি যদি থাকে, একদিন এই ধ্বংসস্তূপ থেকেই আমি আমার বাংলাদেশকে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত শস্য-শ্যামলা সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করব।’আমি ক্ষুদ্র কলাম লেখক কবির নেওয়াজ রাজ আমার দৃষ্টিকোণ থেকে মনে করি,আগামীর বছরগুলো আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।কারন জাতির জনকের দুটি স্বপ্ন ছিল- বাংলাদেশ স্বাধীন করা এবং দেশকে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করা। আমাদের তিনি স্বাধীনতা দিয়েছেন। তার প্রথম স্বপ্ন তিনি পূরণ করেছেন। আরেকটি স্বপ্ন যখন বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে চলেছিলেন, তখনই বুলেটের আঘাতে সপরিবারে জাতির জনককে হত্যা করা হয়।জাতির জনককে হারানোর দুঃখের মধ্যে ’৮১-এর ফেব্রুয়ারি মাসে আওয়ামী লীগের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যার হাতে আমরা রক্তেভেজা দলীয় পতাকা তুলে দিয়েছিলাম, সেই পতাকা হাতে নিয়ে নিষ্ঠা, সততা ও দক্ষতার সঙ্গে আজ তিনি বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। প্রতিপক্ষের শত ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রতিটি সূচক-অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে-সামগ্রিকতায় আজ ইতিবাচক অগ্রগতির দিকে ধাবমান।অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থান এ পাঁচটি সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার আজ মানুষের দোরগোড়ায়। এক সময়ের অন্ধকার গ্রামবাংলা আজ আলোকিত।
লেখক :কবির নেওয়াজ রাজ
এমএসএস"রাষ্ট্রবিজ্ঞান,সিসি "জার্নালিজম,এলএলবি।
সম্পাদক : মোঃ কবির নেওয়াজ রাজ, E-mail: mkprotidin@gmail.com, Contact: (+88) 01643-565087, 01922-619387; Mailing Address: House# 4/A, Main Road, Ati Model Town, Ati, Keraniganj, Dhaka-1312
© All rights reserved © MKProtidin.Com