বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমান উপাচার্যের চার বছর পূর্তি হওয়া, তাঁর পদত্যাগ দাবিতে টানা আন্দোলন ও নিয়োগে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ থাকায় অধ্যাপক শিরীণ আখতারকে যেকোনো সময় সরিয়ে দেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে যার প্রক্রিয়া শুরুও হয়েছে। তাই উপাচার্য পদে নিয়োগ পেতে তোড়জোড় শুরু করেছেন পদপ্রত্যাশীরা। যাদের মধ্যে অর্থনীতি বিভাগের এই বিতর্কিত অধ্যাপকও রয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, অর্থনীতি বিভাগের এই অধ্যাপককে উপাচার্য বানাতে বর্তমান প্রশাসন থেকে পদত্যাগ করা শিক্ষকেরা বেশ তৎপর। এছাড়া একই অনুষদের এক বিতর্কিত শিক্ষকও তাকে উপাচার্য বানাতে লবিং তদবির করছেন বলে জানা গেছে। যার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতিকে কটূক্তি করার অভিযোগ রয়েছে। যে অভিযোগ শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠিও দেওয়া হয়েছে।
বিতর্কিত এই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ:
দল ভেঙে নিজেই হলেন আহ্বায়ক: উপাচার্যের পদপ্রত্যাশী এই অধ্যাপক আওয়ামী ও বামপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন হলুদ দল থেকে বেরিয়ে আলাদা একটি দল গঠন করে নিজেই আহ্বায়ক বনে গেছেন। আর এই দলের সদস্যরা হলেন প্রশাসনের বিভিন্ন পদ থেকে পদত্যাগী শিক্ষকেরা।
উপাচার্য অধ্যাপক শিরীণ আখতারের মতে, পদত্যাগী শিক্ষকদের এই অংশটি প্রশাসন থেকে মধু খেয়েছে। অর্থাৎ প্রশাসনের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেছেন।
বিএনপি নেতার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপদেষ্টা: অর্থনীতি বিভাগের এই অধ্যাপক বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমানের মালিকানাধীন ইস্ট-ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন উপদেষ্টা ও খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
সহকর্মীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়ানোর অভিযোগ: একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার সময় এই অধ্যাপক তাঁর এক সহকর্মীর সাথে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পরেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পরবর্তীতে বিভাগেরই একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপকের মধ্যস্থতায় বিষয়টি ধামাচাপাও দেওয়া হয়।
বর্তমান সরকারের আমলে দলে যোগদান: বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থি শিক্ষকেরা জানান, নিজেকে আওয়ামী লীগ পরিচয় দানকারী এই শিক্ষক আওয়ামী পন্থি শিক্ষকদের দলে যোগদান করেন ২০০৯ সালে। তিনি ১৯৯০ সালের আগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করলেও তাকে বর্তমান সরকার ক্ষমতা আসার পর থেকেই আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের দলে দেখা গেছে বলেও জানান তাঁরা। তাঁর সমসাময়িক অন্যান্য শিক্ষকেরা জানান, ছাত্র থাকাবস্থায় তিনি প্রগতিশীল রাজনীতিতে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকেরা বলেন, বর্তমান উপাচার্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের খবর গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হয়েছে। যার কারণে দেশজুড়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি চরমভাবে সংকটের মুখে। খাদের মুখে থাকা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে সর্বজন গ্রহনযোগ্য ক্লিম ইমেজের একজন শিক্ষক প্রয়োজন। যিনি তাঁর যোগ্যতা, সততা, সচ্চরিত্র ও মেধার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়কে সুন্দরভাবে পরিচালনা করে সামনের দিকে নেবেন।
আওয়ামী পন্থি এই শিক্ষকেরা আরও বলেন, দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য। তাই সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ থাকবে একজন দক্ষ প্রশাসক ও একাডেমিক ব্যক্তির হাতেই যেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বভার অর্পন করা হয়।