হাফিজুর রহমান শিমুলঃ সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রূপকার, সর্বজন শ্রদ্ধেয় অধ্যক্ষ তমিজউদ্দীন আহম্মদের ( বাংলা স্যার) ১৯ আগষ্ট ৫ম মুত্যু বার্ষিকী। তার মমৃত্যু বার্ষিকী ঘীরে পরিবার, কালিগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহন করেছেন। সমাজে যে সকল সমাজসেবী,রাজনৈতিক ব্যক্তি সফল ভাবে কাজ করতে পারেন তারাই কৃতিত্বের অধিকারি ও প্রশাংসার দাবিদার। জনকল্যান মূলক বিশেষ করে শিক্ষা বিস্তারের জন্য অধ্যক্ষ তমিজউদ্দীনের কাজের দীর্ঘ তালিকা দেখে স্পষ্ট যে, সাধারন মানুষের অনুভূতির প্রয়োজন উপলদ্ধি করেই তিনি শিক্ষা বিস্তারের মনোনিবেশ করেছেন। অধ্যক্ষ তমিজউদ্দীনের সৌম্যকান্তি, মার্জিত আচারন, সদা প্রফুল্ল হাস্যময় মুখশ্রী, বন্ধুসুলভ এখনও কালিগঞ্জ বাসির মনে নাড়া দেয়। ১৯৪৭ সালের ১লা জানুয়ারী শ্যামনগর উপজেলার আটুলিয়া ইউনিয়নের ইসমাইল হোসেন ও মতি বিবির ঔরসে জম্মগ্রহন করেন। ৬ ভাই ও ৩ বোনের মাঝে তিনি “ন”। গ্রামের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তালপাতায় লেখার মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষ্যা শুরু। ৬ ষ্ঠ শ্রেনিতে ন’বেঁকি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ভ্রুলিয়া হইস্কুল থেকে এস,এস,সি পাশ এবং সাতক্ষীরা কলেজ থেকে এইচ,এস,সি পাশ করে উচ্চতর শিক্ষার জন্য তিনটি চিটাগাং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যাল থেকে বাংলায় অনার্স মাষ্টার্স পাশ করে আশাশুনি কলেজে চাকুরিতে যোগদান করেণ। পরবর্তিতে ১৯৭২ সালে কালিগঞ্জ কলেজে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। সেই থেকে শুরু সমাজসেবা ও নতুন কিছু সৃষ্টির। অধ্যক্ষ তমিজউদ্দীন মনে করেন প্রাথমিক শিক্ষা সারা জীবনের শিক্ষার ভীত। শিক্ষা পারে দ্রুত সমাজকে বদলে দিতে। তাই তিনি শিশুদের জন্য তৈরি করেন কালিগঞ্জ উপজেলা ক্যাম্পাসে “লিটল ফ্লাওয়ার কিন্ডার গার্টেন” নিজে প্রিন্সিপাল হয়ে কার্য্যক্রম শুরু করেন, পরবর্তিতে স্কুলটি ল্যারেটরী স্কুল নামে পরিচিত লাভ করে। নারি শিক্ষা বিস্তারের জন্য গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক বস্ত্রমন্ত্রী, কালিগঞ্জের কৃতি সন্তান এম মনছুর আলী'র সাথে পরামর্শ করে "রোকেয়া মনছুর মহিলা কলেজ" প্রতিষ্ঠার রূপকার হয়ে অধ্যক্ষ হিসাবে ১৯৯২ সালে কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করেন। বর্তমানে রোকেয়া মনছুর মহিলা কলেজ সু-প্রতিষ্ঠিত। মনছুর আলীর সহযোগিতায় তিনি কালিগঞ্জ সদরে হাজী তফিল উদ্দীন মহিলা দাখিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর আইডিয়াল কলেজ, শ্যামনগর উপজেলার ন’বেঁকি আটুলিয়া নিম্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মুন্সিগঞ্জ কলেজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তিনি অগ্রনি ভূমিকা পালন করছেন। একাধারে কালিগঞ্জ দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি, কফিলউদ্দীন মাদ্রাসা ও এতিম খানার সাধারন সম্পাদক, সুশাসনের জন্য নাগরিক( সুজন) এর সভাপতি, মানববাধিকার সংস্থার সভাপতি সহ বহু সমাজ উন্নয়ন সংস্থার সাথে জড়িত ছিলেন তিনি। কালিগঞ্জ সাংবাদিক জগতের অহংকার সাংবাদিক অধ্যক্ষ তমিজউদ্দীন আহমেদ। সংবাদ পত্র, সাংবাদিকতা কি তিনি মানুষকে শিখিয়েছেন। তিনি শ্যামনগর, আশাশুনি, দেবহাটা ও কালিগঞ্জ থানার সাংবাদিকদের সমন্ময়ে প্রতিষ্ঠা করেন আঞ্চলিক প্রেসক্লাব। পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে কালিগঞ্জ প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন এবং তিনিই প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসাবে বলিষ্টভাবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মাসিক ফরিয়াদ ও সাপ্তাহিক মুক্ত আলাপ পত্রিকার সম্পাদক হিসাবে সততা, নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। অধ্যক্ষ তমিজউদ্দীনের জীবদ্দশায় স্বপ্ন ছিলো কালিগঞ্জে একটি বে-সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার, কিন্তুু সেটা অধোরা রয়ে গেলো।সর্বজন শ্রদ্ধেয় তমিজউদ্দীন আহম্মেদ একাধারে শিক্ষক, সাংবাদিক, কবি, কলামিষ্ট ও সমাজ সেবক ছিলেন। নিরহংকার, নির্লোভ, পরোপকারি, সৎ ও নিষ্ঠাবান ব্যাক্তি জানতেন দুনিয়া বেশিদিনের নয়। মানুষ মরনশীল,একদিন সকলকে ছেড়ে চলে যেতে হবে এ কথা মেনে নিয়েই ২০১৪ সালের ১৯ শে আগষ্ট সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে হৃদযন্ত্র বন্দ হয়ে সকাল সাড়ে ১০ টায় চিরবিদায় নেন। তিনি স্ত্রী, ১ পুত্র, দুই কন্যাসহ অসংখ্য আত্মিয় স্বজন ও গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। সাংবাদিক, লেখক, অধ্যক্ষ তমিজ উদ্দীনের কর্ম ও তৈরি প্রতিষ্ঠান পৃথিবী ধ্বংসের আগ পর্যন্ত মাথাতুলে দাঁড়িয়ে থাকবে। এ মহান ব্যক্তির স্বরনে নতুন প্রজম্ম শ্রদ্ধায় অবয়ব হবে। প্রতিবছরের ন্যায় কালিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি শেখ সাইফুল বারী সফু'র নেতৃত্বে ১৯ আগষ্ট দিনব্যাপি আয়োজন করা হয়েছে কবর যিয়ারত, কুরআন তেলাওয়াত, স্মরণ সভা, মিলাদ মাহফিল ও দোয়া মোনাজাত।
সম্পাদক : মোঃ কবির নেওয়াজ রাজ, E-mail: mkprotidin@gmail.com, Contact: (+88) 01643-565087, 01922-619387; Mailing Address: House# 4/A, Main Road, Ati Model Town, Ati, Keraniganj, Dhaka-1312
© All rights reserved © MKProtidin.Com