মোঃ রানা ইসলাম।। শেকৃবিতে প্রবাসী আয় বৃদ্ধিতে করণীয় শীর্ষক সেমিনার ও আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন ও রানারআপ দলের সংবর্ধনা
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫ প্রবাসী আয় বৃদ্ধিতে করণীয় শীর্ষক সেমিনার ও আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন ও রানারআপ দলের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। প্রবাসী আয় বৃদ্ধিতে করণীয় শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। অন্যান্যদের মধ্যে রক্তব্য রাখেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. বেলাল হোসেন, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর তামান্না বেগম, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সোসাইটির মডারেটর অধ্যাপক ড. মো. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন প্রমুখ। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন প্রথমেই বলেন, বর্তমান প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি শিক্ষার্থদেরকে বিভিন্ন এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস এর মধ্যে রাখতে হবে৷ তার মধ্যে ডিবেট অন্যতম। যার মাধ্যমে তারা যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে জাতির জন্য মঙ্গলকর বিষয় গুলো সামনে তুলে ধরতে পারে।
এরপর তিনি প্রবাসী আয় বৃদ্ধি করণ বিষয়ে বলেন, ৫ আগস্ট ঘটার মূল কারণ হচ্ছে চাকরি না থাকা।প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ তরুণ তরুণী চাকরি বাজারে প্রবেশ করছে।কিন্তু চাকরি পাচ্ছে মাত্র পাঁচ শতাংশ বা তারও কম। দেশের অর্থনীতিতে সরকারি অবদান ২০% ব্যক্তি অবদান ৮০%। একটি দেশকে উন্নত দেশ হিসাবে গড়ে তুলতে তাই প্রথমে ব্যক্তি অর্থনীতি আগে শক্ত করা লাগবে। এজন্য শ্রমবিষয়ক মন্ত্রালয় তরুণ তরুণী ওয়াকিং ল্যাংগুয়েজ, বিভিন্ন টেকনিক্যাল কাজ ও সফটস্কিলে দক্ষ করে তুলে মানব সম্পদ রপ্তানির মাধ্যমে ব্যক্তি অর্থনীতি তথা প্রবাসী আয় বৃদ্ধি করতে পারি যা একটু দেশকে উন্নত দেশে পরিনত করতে সহায়ক। এছাড়াও প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থে প্রণোদনা বাড়িয়ে তাদেরকে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য উদ্বুধ্য করতে হবে।
সেমিনারের মূল প্রবন্ধে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান জনাব হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, দেশের চারিদিকে বর্তমানে যে চাকচিক্য দেখা যাচ্ছে তা অভিবাসীদের রেমিট্যান্সের কারণেই সম্ভব হচ্ছে। তাদের প্রেরিত অর্থ বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে বিশেষভাবে কাজ করছে। এ সকল রেমিট্যান্স যোদ্ধারাই দেশের রিয়েল হিরো। অভিবাসী শ্রমিকদের প্রবল দেশাত্মবোধ রয়েছে। তারা বিগত ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে রেমিট্যান্স প্রেরণ বন্ধ করে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন নিশ্চিত করেছিল। নানা শর্তের বেড়াজালে আইএমএফ চার বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রদান করেছে। অথচ প্রবাসীরা কোন শর্ত ছাড়াই গত বছরে ২৭ বিলিয়ন ডলার দেশে প্রেরণ করছে। দেশের কর্মক্ষম ২৫ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থান হয় অভিবাসনের মাধ্যমে। বৈদেশিক কর্মসংস্থান না করা গেলে বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষের সংখ্যা আরও ১০ শতাংশ বেড়ে যেত।
অন্যদিকে পরিবার পরিজনকে ফেলে শ্রমে ঘামে উপার্জিত রেমিট্যান্স বাংলাদেশে প্রেরণ করছেন আমাদের শ্রমিক ভাইয়েরা। অথচ আমরা দেখেছি পতিত আওয়ামী সরকারের শাসন আমলে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছারে গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে মুজিব পরিবারের বিরুদ্ধে ৫৯ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। যার সাথে পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক এর যোগসূত্রতা রয়েছে। ব্রিটিশ গণমাধ্যমে টিউলিপ সিদ্দিক ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগ ওঠায় গত কয়েকদিন আগে তিনি মন্ত্রীপদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। শুধু শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক নয় মুজিব পরিবারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পের নামে অর্থ আত্মসাৎ ও অর্থ পাচারের অভিযোগ এখন সকলের মুখে মুখে। একদিকে প্রবাসী ভাই বোনেরা তাদের কষ্টার্জিত রেমিট্যান্স দেশে প্রেরণ করছে অন্যদিকে মুজিব পরিবারসহ হোয়াইট কলার মানুষেরা বিদেশে অর্থ পাচার করছে। যা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় কালো দাগ।
জনাব কিরণ আরো বলেন, বর্তমান সরকার কর্তৃক বিমানবন্দরে প্রবাসীদের জন্য লাউঞ্জ, সাবসিডাইজ মূল্যে খাবার গ্রহণের সুবিধা, রেমিট্যান্সের ঊর্ধ্বসীমা তুলে দেওয়া, অভিবাসী কর্মীদের এমআরপি পাসপোর্ট প্রদান শুরু করা, অভিবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের জন্য হাসপাতাল চালু, অভিবাসন ব্যয় নিয়ন্ত্রিত রাখার উদ্যোগ নেওয়াসহ অভিবাসী কর্মীবান্ধব বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা অভিবাসী কর্মীদের সম্মানিত করেছে। অভিবাসীদের সম্মানিত করলে, তাদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি করলে, সামাজিকভাতে তাদের স্বীকৃতি প্রদান করলে দেশের প্রতি তাদের ওনারশীপ আরো বাড়বে। ফলে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে তারা আরো বেশি উদ্বুদ্ধ হবে।
এছাড়াও তিনি বর্তমান প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থে ২.৫ শতাংশ প্রণোদনা ৪ শতাংশে বাড়ানোর প্রস্তাব করেন।
বর্তমানে যেভাবে ভ্যাট-ট্যাক্স বৃদ্ধি পাচ্ছে, গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যহত হচ্ছে তাতে ব্যবসায়ীরা বলছে অনেকের কল কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে, রপ্তানী আয় কমে যেতে পারে। তাই রেমিট্যান্সের ওপর আমাদের নির্ভরশীলতা বাড়ছে। কারণ অভিবাসী খাতের জন্য সরকারকে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি সরবরাহ করতে হয়না। সরকারের সরাসরি কোন বিনিয়োগও নেই। ফলে রপ্তানী আয় বা আরএমজি খাতের পাশাপাশি প্রবাসী আয়ের ওপর গুরুত্ব আরো বাড়াতে হবে। তার জন্য দরকার প্রবাসে অবস্থানরত সোনার মানুষগুলিকে সঠিক মূল্যায়ন করা। দক্ষ, অতিদক্ষ ও প্রফেশনালস বেশি বেশি প্রেরণ করা।
সেমিনারে আরো উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাহাবুব রহমান, প্রফেসর ড. মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম সহ বদরুন্নেসা কলেজ ও শেকৃবির বিভিন্ন বিতার্কিকবৃন্দ।
সেমিনার শেষে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস-২০২৪ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও রানারআপ বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের বিতার্কিকদের নগদ অর্থ পুরস্কারসহ ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।
সম্পাদক : মোঃ কবির নেওয়াজ রাজ, E-mail: mkprotidin@gmail.com, Contact: (+88) 01643-565087, 01922-619387; Mailing Address: House# 4/A, Main Road, Ati Model Town, Ati, Keraniganj, Dhaka-1312
© All rights reserved © MKProtidin.Com