মোঃ রায়হানুল হক, রাণীনগর (নওগাঁ) উপজেলা প্রতিনিধি: নওগাঁর রানীনগরে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ত্রিমোহনী হাটে ৪ টাকার খাজনা আদায় করা হচ্ছে ৪০ টাকা করে । বিপাকে দূর-দূরান্ত থেকে আসা ক্রেতা বিক্রেতারা নওগাঁর রাণীনগরের নিকটবর্তী এলাকা ২নং কাশিমপুর ইউনিয়নে অবস্থিত শত বছরের পুরাতন এবং ঐতিহ্যবাহী হাট ত্রিমোহনী হাট।
সপ্তাহে ২দিন প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার এখানে হাট বসে। বর্তমানে এই হাটে বিভিন্ন পণ্যের খাজনা আদায়ের নামে গলাকাটা হচ্ছে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের। কিছু কিছু পুণ্যের খাজনা ৮ থেকে ১০ গুন বেশি আদায় করা হচ্ছে। এতে করে দিনের পর দিন বছরের পর বছর প্রতারণার শিকার হচ্ছে দূর-দূরান্ত থেকে আসা ক্রেতা বিক্রেতারা। তবুও নজর নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
শনিবার (০১ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে হাটে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি পণ ধানের চারার খাজনা বাবদ ক্রেতার কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে ৪০ টাকা করে। আবার একই পণ্যের খাজনা আদায় করা হচ্ছে বিক্রেতার কাছ থেকেও। অথচ সরকারের বেঁধে দেওয়া খাজনার তালিকা অনুযায়ী প্রতি পন ধানের চারার খাজনা মাত্র ৪ টাকা।
আবার প্রতি ভ্যানগাড়ি ধানের খাজনা পাঁচ টাকা ধার্য করা থাকলেও প্রতি মন ধানের জন্য খাজনা আদায় করা হচ্ছে ১০ টাকা করে। এছাড়া আলুর বীজ, পিঁয়াজের চারা সহ পুরো হাটের বিভিন্ন অংশে খাজনা আদায়ের নামে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে । হাট ইজারাদারদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন হাটে আসা দূর-দূরান্ত থেকে হাজার হাজার ক্রেতা ও বিক্রেতারা।
অপরদিকে খাজনার রশিদে কত টাকা আদায় করা হচ্ছে তা ফাঁকা রেখে ক্রেতা বিক্রেতাদের হাতে প্রদান করা হচ্ছে খাজনার রশিদ। অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের ব্যাপারে সময় সময় স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলেও কোন লাভ হয় না। প্রভাবশালী ইজারাদারদের লোকের কাছে নাজেহাল সবাই এমনটিই অভিযোগ ক্রেতা ও বিক্রেতাদের।
সরকারের বেধে দেওয়া খাজনা আদায়ের তালিকা শুধুমাত্র খাজনা আদায়ের ঘরের দেওয়ালেই শোভা পায়। হাটের কোন স্থানে খাজনা আদায়ের তালিকা ঝুলিয়ে রাখা হয় না। শুধুমাত্র ত্রিমোহনী হাটেই নয় উপজেলার বৃহত্তম ধানেরহাট আবাদ পুকুর হাটসহ উপজেলার আওতাধীন অধিকাংশ হাটেই ইজারাদারদের লোকেরা ক্রেতা ও বিক্রেতাদের উপর জুলুম করে নিজেদের ইচ্ছেমত খাজনা আদায় করলেও নীরব ভূমিকায় প্রশাসন।
কালে ভদ্রে হাটে প্রশাসনের পক্ষ থেকে লোক দেখানো ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালনা করলেও সরকারের নিয়ম-নীতিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বছরের পর বছর অনৈতিক খাজনা আদায় করে আসছে এসকল প্রভাবশালী ইজারাদাররা।
উপজেলার হরিশপুর গ্রাম থেকে ত্রিমোহনী হাটে ধানের চারা কিনতে আসা ক্রেতা আব্দুল জব্বার জানান তিনি ত্রিমোহনী হাট থেকে ৫ পন জিরাশাইল ধানের চারা কিনেছেন। ইজারাদারের লোকেরা খাজনা বাবদ তার কাছ থেকে ২০০ টাকা দাবি করলে তিনি অনেক অনুরোধের পর তার কাছ থেকে ১৫০ টাকা খাজনা আদায় করা হয়।
ত্রিমোহনী হাট ইজারা দলের অন্যতম সদস্য ও ২ নং কাশিমপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোঃ বেদারুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান হাটের বিভিন্ন পট্টি বিপন্ন ব্যক্তির কাছে সাব ইজারা প্রদান করা হয়েছে । তারা হয়তোবা অতিরিক্ত খাজনা আদায় করলেও করতে পারেন।
এছাড়া সরকারি নিয়ম অনুসারে শুধুমাত্র বিক্রেতার কাছ থেকে খাজনা আদায়ের নিয়ম থাকলেও ত্রিমোহনী হাটে আমরা ক্রেতার কাছ থেকেও খাজনা আদায় করে থাকি। তিনি প্রধান ইজারাদান নন। প্রধান ইজারাদারের সঙ্গে তিনি অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের বিষয়টি আলোচনা করবেন বলে আশ্বস্ত করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাইমেনা শারমিন মুঠোফোনে জানান বিষয়টি তার জানা ছিল না। যতো দ্রুত সম্ভব সরেজমিনে পরিদর্শন সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।