আমার হাতে এখন শতবর্ষ পেরিয়ে আসা নলতা হাইস্কুলের 'সুপ্রভাত' নামে প্রায় শতবর্ষ পুরানো একটি স্কুল ম্যগাজিন।
১৯১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত সাতক্ষীরার ঐতিহাসিক নলতা হাইস্কুলে স্কুল ম্যাগাজিন প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯২৪ সালে। ম্যাগাজিনটির নাম ছিল 'প্রভাত'। সুন্দর হাতের লেখায় আর ক্যালিয়োগ্রাফীর কাজে চকচকে কাগজে অল্প সংখ্যক 'প্রভাত' স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সম্পাদনায় নিয়মিত প্রকাশিত হতো। দাম ছিল ২ পয়সা।
১৯২৪ সালের দিকে ভারতীয় উপমহাদেশে বিশেষত বাঙালি সমাজে স্কুল ম্যাগাজিন কনসেপ্টটি প্রায়োগিক, জনপ্রিয় সহজপ্রাপ্য হয়ে ওঠেনি। বাংলা ভূখন্ডে সম্ভবতো ১৯৩০ এর দশকে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে প্রথমবারের মতো মুদ্রিত স্কুল ম্যগাজিন প্রকাশিত হয়। অনেক বিড়ম্বনা আর ঝুট-ঝামেলা হজম করে কলকাতা থেকে ম্যাগাজিন ছাপিয়ে আনতে হতো।
এর কিছুদিন পরেই নলতা হাইস্কুল ১৯৪০ সালে বিগত ১৬ বছর ধরে চলে আসা 'প্রভাত'কে নতুন কলেবরে 'সুপ্রভাত' নামে মুদ্রিত আকারে প্রকাশ করে। ১৯৪০ সালের 'সুপ্রভাত' ছিল ষোড়শ বর্ষের ২য় সংখ্যা।
১৯৪০ সালের মার্চে প্রকাশিত এই স্কুল ম্যগাজিনটি স্কুলের সহকারি প্রধান শিক্ষক শ্রীরণপতি বন্দ্যোপাধ্যায় পুরাণরত্নের সম্পাদনায় কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের নিউ মহামায়া প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়। ম্যগাজিনটির কম্পোজ, আর গেটআপ করেছিলেন শ্রীযুক্ত গৌর চন্দ্র পাল। প্রকাশক ছিলেন স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি খানবাহাদুর মোবারক আলী।
ম্যাগাজিনটির দাম ছিল চার আনা, কিন্তু সাহিত্যের ষোলকলায় পূর্ণ ম্যাগাজিনটি সাহিত্যমানের গভীরতায় ছিল ষোলআনা।
ইংরেজি ও বাংলা দুই ভাষাতেই ম্যগাজিনের লেখাগুলো বিন্যস্ত ছিল, তবে সম্পাদকীয় ছিল ইংরেজিতে। ব্রিটিশ স্টাইলে প্রতি পৃষ্টায় দুই কলামে সাজানো পৃষ্টাগুলোয় অভিজ্ঞতার ছাপ আর নান্দনিকতা চোখে পড়ার মতো। শিক্ষক, বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী মিলে মোট ২০ টি লেখা দিয়ে সাজানো ছিল ম্যাগাজিন টি। ২০ টির মধ্যে ৮ টি কবিতা, বাকীগুলো গল্প, নাটিকা, ভ্রমন, জীবনী ও শিক্ষামূলক নিবন্ধ। ৬ টি লেখা ছিল ইংরেজি ভাষায়, বাকী ১৪ টি বাংলা ভাষায়। লেখকদের মধ্যে ১৩ জন ছিলেন হিন্দু আর ৭ জন ছিলেন মুসলিম শিক্ষক-শিক্ষার্থী। মোট ৪৫ পৃষ্টার ম্যাগাজিনের শেষের দিকে ছিল সাধারন জ্ঞান আর নিয়মিত কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন। স্কুলের বিগত দিনের কার্যক্রম, ফলাফল, সফলতার খবরাখবর ছিল সম্পাদকীয়তে। ম্যগাজিনটির কাভারে দারুণ এক নীতিবাক্য ইংরেজি অক্ষরে লেখা ছিল- "Let knowledge grow from more to more/But more of reverence in us dwell"
নলতা হাইস্কুলে 'সুপ্রভাত' কতদিন টিকে ছিল তা জানা যায়নি। তবে নিকট অতীতে নলতা হাইস্কুল প্রাক্তন ছাত্র সংসদের পৃষ্টপোষকতায় 'প্রান্তিক' নামে আলাদা কয়েকটি প্রকাশনা ছাত্রদের ব্যাগে ব্যাগে ঘুরেছে। স্কুলের শতবর্ষে প্রকাশিত 'প্রান্তিক' এর সম্পাদনা পরিষদে আমিও ছিলাম। কিন্তু অামার কাছে মনে হয়েছে শৈল্পিক রূপ, ছাপা-স্টাইল, বিষয়বস্তু ইত্যাদি দিক দিয়ে গত শতকের 'সুপ্রভাত' এই শতকের 'প্রান্তিক' এর চেয়েও মানসম্মত ছিল।
এখন তো স্কুল কলেজে আর আগের মতো ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয় না। কেউ পড়েও না। যে দু'একটি ম্যাগাজিন বের হয় তাতে লেখার থেকে লেখকের ছবি বড় করে ছাপা হয়। পাঠকরাও লেখার থেকে নিজেদের ছাপা ছবি নিয়ে মাতামাতি করে। এতদসত্ত্বেও শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশে, পরিশীলিত মনন নির্মানে স্কুল কলেজগুলোতে বার্ষিক ম্যাগাজিন প্রকাশ করা বাধ্যতামূলক করা উচিৎ।
[মনিরুল ইসলাম]
[গবেষক, খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা ইনস্টিটিউট]
সম্পাদক : মোঃ কবির নেওয়াজ রাজ, E-mail: mkprotidin@gmail.com, Contact: (+88) 01643-565087, 01922-619387; Mailing Address: House# 4/A, Main Road, Ati Model Town, Ati, Keraniganj, Dhaka-1312
© All rights reserved © MKProtidin.Com