ঢাকা ৩১ অক্টোবর ২০১৯: গণমাধ্যমে গভীর সংকট তৈরী হচ্ছে। পাশাপাশি গণমাধ্যম কর্মীদের মাঝে চাকরি হারানোর একটা ভীতিও তৈরি হয়েছে। এই অবস্থা থেকে গণমাধ্যম কর্মীদের উত্তরণের দাবি করেছে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম বিএমএসএফ। বৃহস্পতিবার দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি শহীদুল ইসলাম পাইলট ও সাধারণ সম্পাদক আহমেদ আবু জাফর সরকারকে গণমাধ্যমের নানা সমস্যা উত্তরণে হস্তক্ষেপের দাবি করেন। দ্রুত সরকারকে সাংবাদিক নিয়োগ নীতিমালা প্রণয়ন করে এই ধরনের অচলাবস্থা থেকে গণমাধ্যমকে উত্তরণের দাবি করা হয়। সাংবাদিক নিয়োগ নীতিমালা না থাকা, সরকার ঘোষিত ওয়েজবোর্ড না মানার ফলে মালিক পক্ষ ও সাংবাদিকদের মাঝে দূরত্ব দীর্ঘদিনের। পাশাপাশি সরকারী-বেসরকারী বিজ্ঞাপন হ্রাস পাওয়ায় মালিকপক্ষ দূর্দশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে।
গণমাধ্যমে কেন এই সংকট-তা নিয়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন আজ ৩১ অক্টোবর বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত সংবাদটি দেশের গণমাধ্যম অঙ্গনের জন্য গভীর উদ্বেগের। প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে তনুশ্রী রায় একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সংবাদ বিভাগ থেকে চাকরি হারিয়েছেন ছয় মাস আগে। এখনও তিনি চাকরি পাননি।
ইলেকট্রনিক মিডিয়া, সংবাদপত্র বা অনলাইন-এসব বিভিন্ন শাখায় চাকরি খুঁজতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থনৈতিক সংকটের কথা তাকে শুনতে হচ্ছে।
মিজ রায় যে টেলিভিশনে কাজ করতেন, সেই বেসরকারি চ্যানেলের সংবাদ বিভাগেই বেশি ছাঁটাই করা হয়েছে।
গত এপ্রিল মাসে তিনি সহ ৩২ জনকে বিদায় করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
তনুশ্রী রায় জানিয়েছেন, টিভি চ্যানেলটির পক্ষ থেকে অর্থনৈতিক সমস্যার জানিয়ে তাদেরকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছিল এবং সেটা করতে তারা বাধ্য হয়েছেন।
কারণ, চ্যানেল কর্তৃপক্ষ নিজেদের ঘাড়ে দায় রাখেননি।
আরেকটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল তাদের বার্তা বিভাগই বন্ধ করে দিয়েছে কয়েকমাস আগে।
বেসরকারি রেডিওগুলোরও একই অবস্থা দাঁড়িয়েছে।
বেশ কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে সংবাদসহ বিভিন্ন বিভাগে কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে।
বিভিন্ন সংবাদপত্রেও অনেকে চাকরি হারিয়েছেন গত কয়েক মাসে।
বেশিরভাগ বেসরকারি টেলিভিশনে নিয়মিত বেতনও হচ্ছে না।
বিভিন্ন টেলিভিশনের কয়েকজন কর্মীর সাথে কথা বলে মনে হয়েছে, নিয়মিত বেতন না পাওয়া, চাকরি হারানোর ভয়সহ চরম সংকটে তারা রয়েছেন।
তারা বলছেন, শুধু সাংবাদিকরাই নন, গণমাধ্যমে কর্মরত সবার একই অবস্থা।
এদিকে দৈনিক খোলা কাগজে চলছে গত কয়েকদিন ধরে চলছে অচলাবস্থা। কর্মী ছাটাই এবং নোটিশের ছড়াছড়ি। কেউ প্রতিবাদ করলেই তাকে চাকরীচ্যুতের হুমকি। আজ বিকেলে বসবে খোলা কাগজের মালিক পক্ষের বৈঠক। বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম মনে করে দেশের প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি দৈনিকের মধ্যে খোলা কাগজও একটি। আজকের বৈঠকের মধ্য দিয়ে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ আসুক এমনটি আমরা আশা করছি।
দৈনিক খোলা কাগজের সংবাদকর্মীদের ন্যায্য দাবিদাওয়া বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে জানানোর পর বুধবার বিকালে বার্তা সম্পাদক শাহিন মানজারুল ইসলাম, যুগ্ম বার্তা সম্পাদক মনোজ কুমার দে, মফস্বল সম্পাদক আবু বকর সিদ্দীক, সহ সম্পাদক আবুল কালাম সোহাগ, সহ সম্পাদক সাইদ রহমানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। যা গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য চরম হতাশার।
এদিকে আজকে খোলা কাগজের সভাটি ডেকেছেন, মো. মাহবুবুল আজিজ, মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগ নীলসাগর গ্রুপ।
চূড়ান্ত বিভ্রান্তিকর এই নোটিশে বলা হয়েছে সভা পরিচালনা করবেন প্রতিষ্ঠানের ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ। এই সভায় প্রকাশক মো. আহসান হাবীব উপস্থিত থাকবেন কিনা তা নিয়ে স্পস্ট কোনো বক্তব্য নেই। এ ছাড়া সেখানে খোলা কাগজের কর্মীদের বাইরে পরিবর্তন ডট কম নামের অনলাইনের সংবাদকর্মী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ডাকা হয়েছে। খোলা কাগজের কর্মীদের বক্তব্য যেহেতু, খোলা কাগজের উদ্ভূত সংকটের সঙ্গে পরিবর্তন ডট কমের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তারা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন মালিকপক্ষ কূটকৌশলে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে উসকে দিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা আটছেন। তারা আরো শঙ্কা করছেন কার্যালয় দখল করে যারা সাংবাদিকতা পেশার মর্যাদা আর ন্যায্য অধিকারের পক্ষে কথা বলছেন তাদের কণ্ঠরুদ্ধ করে দিতে চায়।
এ পরিস্থিতিতে বিএফইউজে, ডিইউজে, বিএমএসএফসহ সকল সাংবাদিক সংগঠন নেতৃবৃন্দ, টেলিভিশন-পত্রিকা, অনলাইন গণমাধ্যমের সকল কর্মীসহ সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছেন।
দেশে প্রতিনিয়ত সাংবাদিকরা প্রভাবশালীদের দ্বারা নির্যাতন-হয়রাণ, মামলা-হামলার শিকার হচ্ছেন। এ সকল ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যম কর্মীদের কোনরুপ আইনী সহায়তা না দেয়া, বেতন-ভাতা, পেনশন না থাকা, কথায় কথায় চাকরীচ্যুতির ঘটনায় তারা অতিষ্ট। এই অবস্থা থেকে পরিত্রান চায় গণমাধ্যম কর্মীরা।
বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম চায় দেশের গণমাধ্যম কর্মীদের মাঝে সুন্দর সুশৃঙ্খল কাজের উপযোগি একটি পরিবেশ ফিরে আসুক। অসুস্থ গণমাধ্যমের দ্বারা ভাল কিছু আশা করা যায়না। আর সেক্ষেত্রে তথ্য মন্ত্রনালয় এবং তথ্য অধিদপ্তরও একটি গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা রাখতে পারেন।
সম্পাদক : মোঃ কবির নেওয়াজ রাজ, E-mail: mkprotidin@gmail.com, Contact: (+88) 01643-565087, 01922-619387; Mailing Address: House# 4/A, Main Road, Ati Model Town, Ati, Keraniganj, Dhaka-1312
© All rights reserved © MKProtidin.Com