প্রিন্ট এর তারিখঃ ডিসেম্বর ২৮, ২০২৪, ৪:২৪ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ নভেম্বর ২১, ২০১৯, ৩:৪৯ পি.এম
লিয়াকত হোসেন, রাজশাহী: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার দুপুরে নগর ভবনের সিটি হল রুমে আয়োজিত সভার সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ও রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন।
সভায় মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর জন্মশতবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে উদযাপন এর লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে কমিটি গঠিত হয়েছে। বিভাগীয় পর্যায়ে এটি সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য করণীয় বিষয়ে আজকের এই আয়োজন। এটাকে বিভাগীয় পর্যায়ের সমন্বয় সভাও বলা যেতে পারে।
মেয়র আরো বলেন, বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যা রেখে গেছেন, যার উপর ভিত্তি করে তাঁরই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরপর দুইবার এবং ধারাবাহিকভাবে ১১ বছর দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছেন। এজন্য দেশে দৃশ্যমান উন্নয়ন আমরা দেখতে পাচ্ছি। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এমন একটি জায়গায় পৌঁছে যেতে পারবো, যে স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু দেখে দেশের মানুষকে একত্রিত করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু বিদেশি সাংবাদিকের এক প্রশ্ন উত্তর পর্বে বলেছিলেন, আমার সবচেয়ে বড় পজেটিভ সাইড হলো আমি দেশের মানুষকে ভালবাসি, আর সবচেয়ে ক্ষতিকর দিক হলো বড্ড বেশি ভালবাসি।
মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি মেয়র লিটন বলেন, যে মহান মানুষের কারণে আজকে আমরা দেশটাকে স্বাধীন করতে পেরেছি। তাঁরই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশটি পরিপূর্ণভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন বিভাগের লাইট হাউজ বা বাতিঘর হিসেবে কাজ করে। প্রতিটি বিভাগে তাই, সিটি কর্পোরেশন অগ্রবর্তি বাহিনী হিসেবে কাজ করে, তাই আজকের এই আয়োজন করেছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন।
মেয়র বলেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির আলোকে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এলাকায় আমরা কী কী প্রোগ্রাম পালন করতে চাই, সেটা লিখিতভাবে আমরা আপনাদের সকল দপ্তরে প্রেরণ করবো। আপনাদের কোন প্রস্তুাব থাকলে আপনারা জানাবেন। মুজিব বর্ষ যথাযথভাবে উদযাপনে আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করবো।
সভায় বিভাগীয় কমিশনার মোঃ হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বলেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির আলোকে সারাদেশে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালিত হবে। যে উদ্যোগগুলো গ্রহণ করা হবে, সেগুলোর শতভাগ বাস্তবায়ন করতে হবে। আমাদের সকলের মধ্যে দেশপ্রেম থাকতে হবে। দেশপ্রেম নিয়ে কাজ করলেই সফলতা আসবে।
তিনি আরো বলেন, জাতির পিতা স্বপ্ন দেখেছিলেন সোনার বাংলা গড়ার, তাঁরই কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। ভিশন-২০২১ এবং ভিশন-২০৪১ অর্জনে আমাদের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। তাহলে আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌছে যাব।
পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের জিআইজি একেএম হাফিজ আকতার বলেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির আলোকে সমন্বিতভাবে প্রোগ্রাম আয়োজন করতে হবে। গত কয়েক মাস ধরে আমরা কিছু সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, এগুলো হচ্ছে চ্যালেঞ্জ। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী পালন করবো। এক্ষেত্রে উদ্যাপনের শুরু এবং পরের আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীর সময় যাতে কিছু না ঘটে সে ব্যাপারে সর্তক থাকতে হবে। পেয়াজের দাম বৃদ্ধি, লবণ ঘাটতির গুজব, পরিবহন ধর্মঘটসহ প্রতি মাসে এখন একটার পর একটা চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে আসছে। বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপনের সময় এবং পরবর্তীতে সকলের সহযোগিতায় সুষ্ঠভাবে নিরাপত্তা প্রদান করবো।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর বলেন, মুজিব বর্ষে সারাদেশের প্রোগ্রামগুলো যাতে সুষ্ঠ-শান্তিপূর্ণ এবং নিরাপদভাবে উদ্যাপিত হয়, সেটি নিশ্চিত করার দায়িত্ব বাংলাদেশ পুলিশের। সেই দায়িত্বটুকু সুষ্ঠভাবে এবং পেশাদারিত্বের সাথে পালন করার জন্য বাংলাদেশ পুলিশ ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। রাজশাহী মহানগরীর ভেতর সেসব অনুষ্ঠান হবে, সেগুলো যাতে সুষ্ঠভাবে নিরাপদে পালিত হয়, সেজন্য রাজশাহী মহানগর পুলিশ প্রস্তুতি নিচ্ছে। আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই যত ষড়যন্ত্রই হোক, অপচেষ্টায় হোক, মুজিব বর্ষ ব্যাপক উৎসাহ উদ্বীপনার সাথেই পালিত হবে।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক মোঃ হামিদুল হক বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ভালোভাবে উদযাপিত হবে এবং সেজন্য আমরা প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। এখানে দুইটি বিষয় আছে। এগুলো হচ্ছে আমাদের মহানগরীর মধ্যের অনুষ্ঠান এবং মহানগরীর বাইরে জেলায় অনুষ্ঠান। মেয়র মহোদয়ের নেতৃত্বে মহানগরীর কর্মসূচিগুলো পালিত হবে। আমরা দুই ধরনের প্রোগ্রাম নিতে পারি। একটি হচ্ছে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খেলাধূলা ইত্যাদি হতে পারে। আরেকটি হচ্ছে আমাদের জাতির পিতার কিছু ইথিকস আছে, নীতি-নৈতিকতা আছে, তাঁর কিছু স্বপ্ন আছে, সেগুলোকে বাস্তবায়নে আমাদের ডিপার্টমেন্টগুলো কী ধরনের প্রোগ্রাম নিব, মহানগরীকে গরিবমুক্ত ঘোষণা করতে পারি কিনা এটির একটি পরিকল্পনা করতে পারি, অথবা আমাদের অন্য ডিপার্টমেন্টগুলোর সার্ভিস সিস্টেম টি কীভাবে আপগ্রেড করতে পারি, আরো বেটার সার্ভিস দিতে পারি সেটি আমাদের চিন্তার বিষয়। শুধু রচনা প্রতিযোগিতা, গান-সহ বিভিন্ন সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠানে সীমাবদ্ধ থাকব না, জাতির পিতার স্বপ্নকে অর্জন করতে আমাদের নিবেদিত হতে হবে। আমরা যেই প্রোগ্রামটা নিব, বাস্তবায়ন করবো, জাতির পিতাকে উৎসর্গ করবো।
রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ চেয়ারম্যান মোঃ আনওয়ার হোসেন বলেন, আগামী বছরটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বছর। মুজিব বর্ষে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সাথে সমন্বয় রেখে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে। আমাদের অফিস ভবন সৌন্দর্য্যবর্ধন করতে হবে। সকল ভবন রঙ এবং পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। সরকারি দপ্তরগুলোর সেবা ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড প্রদর্শন করা যায়। আরডিএ তে বঙ্গবন্ধু কর্ণার স্থাপন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। রাজশাহী শহরকে ভিক্ষুক মুক্ত করা যায় কিনা সেটার পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারি।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিলুর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু শিশুদের অনেক ভালোবাসতেন। সেজন্য বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী রামেক হাসপাতালে শিশুদের জন্য অত্যাধুনিক একটি ওয়ার্ড চালু করা হবে। এছাড়া হাসপাতালের জরুরি বিভাগের উন্নয়ন করাসহ অন্যান্য কর্মসুচি পালিত হবে।
মতবিনিময় সভায় আরো বক্তব্য দেন কর্ণেল জিএস আবুল হাসনাত মোঃ কামরুজ্জামান, পরিচালক (স্বাস্থ্য) রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ডা. গোপেন্দ্র নাথ আচার্য্য প্রমুখ। সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শাওগাতুল আলম। অনুষ্ঠানের শুরুতে বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতাসহ সকল শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর জীবনীর উপর ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়। মুজিব বর্ষ পালন উপলক্ষে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন গৃহিত বিভিন্ন কর্মসূচি উপস্থাপন করা হয়। নগরীতে বঙ্গবন্ধুর মূর্যাল স্থাপনের ভিডিও চিত্র উপস্থাপন করেন রাসিকের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আশরাফুল হক। সভায় রাসিকের কাউন্সিলর-কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ অংশ নেন। সভায় রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এলাকায় দুইটি গণ গণনা যন্ত্র স্থাপন করার স্থান নির্ধারণ নিয়েও আলোচনা হয়।