পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ও হাজার হাজার শিক্ষার্থীর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। জমকালো আয়োজনে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে এই বিদ্যাপীঠের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠান। এর মাধ্যমে নতুন জাগরণ সৃষ্টি হলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক এবং সাবেক ও বর্তমান হাজারো শিক্ষার্থীর মাঝে।
প্রথম সমাবর্তন উপলক্ষে গ্র্যাজুয়েটদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও সমাবর্তন অনুষ্ঠানের স্থান খেলার মাঠ (ধূপখোলা)। কালো গাউন ও টুপি পরিহিত হাজার হাজার শিক্ষার্থীর দিনভর গর্বিত পদচারণ আর আনন্দ-কোলাহলে ক্যাম্পাস ও ধূপখোলার মাঠ নতুন ইতিহাস গড়েছে। সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করেন নতুন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরাও।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আয়োজন এই সমাবর্তনে ১৮ হাজার ৩১৭ জন শিক্ষার্থীকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি দেয়া হয়।
পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ার ধূপখোলা মাঠে আয়োজিত সমাবর্তন অনুষ্ঠান আলোকিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। আজ দুপুর ১২টায় তার সভাপতিত্বে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা ছিলেন প্রখ্যাত পদার্থবিদ অধ্যাপক ড. অরুণ কুমার বসাক।
প্রথম সমাবর্তনের উৎসব-আনন্দ মূলত শুরু হয়ে যায় গত ৭ জানুয়ারি। ওই দিন শিক্ষার্থীদের গাউন ও উপহারসামগ্রী বিতরণ শুরু হয়। অধীর অপেক্ষায় থাকা হাজার হাজার শিক্ষার্থী প্রথম দিনই ক্যাম্পাসে এসে যান। অধিকাংশ শিক্ষার্থী নিজ নিজ বিভাগ থেকে তাদের উপহারসামগ্রী সংগ্রহ করেন। গাউন পরে শিক্ষার্থীরা তাদের বন্ধু-বান্ধুবদের সঙ্গে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
সিনিয়রদের এমন আনন্দ-উল্লাস দেখে বর্তমান শিক্ষার্থীরাও তাদের সঙ্গে আনন্দে মেতে ওঠেন। এর পূর্ণ রূপ পায় আজ শনিবার আনুষ্ঠানিক সমাবর্তন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। তবে এর রেশ শেষ হয়ে যায়নি। ক্যাম্পাসে এখনো চলছে গাউন পরিহিত শিক্ষার্থীদের দল বেঁধে আড্ডা, ঘোরাঘুরি আর ছবি তোলা।
এর আগে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান আকর্ষণ ছিলেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, তিনি জীবনে অনেক পরীক্ষায় ফেল করেছেন, তবে কখনো পাস করার জন্য নকলের মতো অনৈতিক পথ অবলম্বন করেননি। এমনকি পরীক্ষার হলে পাশের কাউকে জিজ্ঞেসও করেননি। এই বিষয়টা তার জীবনের অহংকার এবং এটা নিয়ে তিনি গর্ববোধ করেন।
বর্তমান পরীক্ষা পরিবেশের দুরবস্থায় আক্ষেপ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এখন মাঝেমধ্যেই শুনি শিক্ষকরা ছাত্রদের কাছে নকল সাপ্লাই করে। অনেক জায়গায় শোনা যায় অভিভাবকরা নকল সাপ্লাই করে। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে! এদের কী শাস্তি হতে পারে? মনটা চায়... আর কইলাম না... বুইঝ্যা নিয়েন... ।’
পরীক্ষায় নকলপ্রবণতা ও অনৈতিক পন্থা অবলম্বনের কারণে দেশ ও জাতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে মন্তভ্য করে রাষ্ট্রপতি এর বিরুদ্ধে সবাইকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
শিক্ষকদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘অনেক শিক্ষক আছেন যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষাকে অবহেলা করে অন্য জায়গার কাজকে গুরুত্ব দেন। অনেক সময় দেখা যায় বন্ধের দিন শিক্ষার্থীদের ডেকে একসাথে চার-পাঁচ ঘণ্টা ক্লাস নেন। শিক্ষার্থীরা বুঝুক আর না বুঝুক সেটা পর্যালোচনা করেন না। শুধু রুটিন শেষ করতে পারলেই নিজেকে দায়িত্বশীল মনে করেন।’ এসব কাজ থেকে শিক্ষকদের বিরত থাকার আহ্বান জানান তিনি।
সমাবর্তনে অংশ নেওয়া দ্বিতীয় ব্যাচের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসা করলে, তাদের প্রথম সমাবর্তনে অংশগ্রহণ যেন ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে রইল। তাদের বন্ধুদের মাঝে আনন্দের কমতি ছিলনা। দেশ-বিদেশ থেকে ছুটে এসেছে শুধু সমাবর্তন ও বন্ধুদের সাথে মিলিত হওয়ার জন্য। সুদর লন্ডন থেকে ছুটে এসেছেন ঊষা, ইটালী থেকে ছুটে এসেছেন টিপু, তাদের একটাই উদ্দেশ্য ছিল বন্ধুদের সাথে মিলনমেলায় অংশগ্রহণ ও ইতিহাসের স্বাক্ষী হওয়া। দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বলেন, সমাবর্তন প্রতিটি শিক্ষার্থীর মনের আবেগ ও অধিকার। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের মনের আবেগ ও অধিকারকে পূরণ করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, এ জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তৃতা করেন বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের এমিরিটাস প্রফেসর ড. অরুণ কুমার বসাক। ১৯৭৫ সালে লন্ডনের বার্মিংহাম ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের কেন্ট ইউনিভার্সিটিতে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং একাধিকবার যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন ইলিনয়স ইউনিভার্সিটিতে রিসার্চ প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সমাবর্তনে বিশেষ অতিথি হিসেবে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং উপাচার্য অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। এ সময় মন্ত্রিসভার সদস্য, উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রাষ্ট্রপতির সংশ্লিষ্ট সচিবরা, বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা সমাবর্তনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
সম্পাদক : মোঃ কবির নেওয়াজ রাজ, E-mail: mkprotidin@gmail.com, Contact: (+88) 01643-565087, 01922-619387; Mailing Address: House# 4/A, Main Road, Ati Model Town, Ati, Keraniganj, Dhaka-1312
© All rights reserved © MKProtidin.Com