মেহেদী হাসান, শরণখোলা (বাগেরহাট) থেকেঃ
বাগেরহাটের শরণখোলায় বিশুদ্ধ খাবার পানির সরকারী ট্যাংকি বিতরন প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম, দূর্নীতি ও ঘুষ গ্রহনের অভিযোগ উঠেছে। সারা দেশে যখন দূর্নীতি বিরোধী অভিযানে সরকার কঠোর অবস্থানে ঠিক তখনই উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরের কতিপয় দূর্নীতিবাজ কর্মচারীরা কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই অর্থ বানিজ্য করে দরিদ্রদের বঞ্চিত করে প্রভাবশালী ধনীদেন মাঝে বিভিন্ন নামে বে-নামে ওই ট্যাংকি বিতরন কার্যক্রম চালাচ্ছেন। সম্প্রতি এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এক ভূক্তোভোগী। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় এই সকল অনিয়ম চলছে ও তাদের দায়সারা তদারকিতে কাজের প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মানের উপকরন ব্যাবহার করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, উপকুলীয় জনগোষ্ঠীর বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট নিরসনে সরকার ২০১৪ সাল থেকে এই দপ্তরের মাধ্যমে ট্যাংকি বিতরন কার্যক্রম চলমান রেখেছেন। এতে প্রত্যেক সুবিধা ভোগীর ১৫০০ টাকা করে সরকারী কোষাগারে জমা রাখার বিধান রাখা হলেও সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় তার উল্টো চিত্র। সরকারের নাম ভাঙ্গিয়ে সংশ্লিষ্টরা তাদের কাছ থেকে ৩ হাজার থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করেছেন বলে জানা যায়। অন্যদিকে উপজেলার যে সকল স্থানে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বসবাস এবং খাবার পানির তীব্র সংকট রয়েছে সেখানে এই ট্যাংকি বিতরন না করে তাদের ইচ্ছেমত স্থানে টাকা'র বিনিময়ে বিতরন করেছেন বলে এলাকাবাসী'র অভিযোগ। আবার সংশ্লিষ্টদের চাহিদামত টাকা দিতে ব্যার্থ হওয়ায় এই দরিদ্র জনগোষ্ঠী ট্যাংকি থেকে বঞ্চিত হয়ে পান করতেছেন পুকুরের পানি। এই সকল অনিয়ম দূর্নীতি'র সাথে জড়িত থেকে সরকার নির্ধারিত ফি উপেক্ষা করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করার অভিযোগ উঠেছে এই দপ্তরের মেকানিক রাজীব হোসেন ও ম্যাসন জয়নাল আবেদীন এর বিরুদ্ধে। তারা এলাকায় ঘুরে ঘুরে অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে এ সকল অনৈতিক কার্যক্রম চালাচ্ছেন। এ ছাড়াও রাজীবের বিরুদ্ধে মানুষের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করা এক গৃহ কর্মীর নামে বরাদ্ধ কৃত টিউবয়েল জোর করে ছিনিয়ে নেয়া ও জেলা পরিষদের পুকুর খনন তালিকায় অর্রভূক্ত করার জন্য ঘুষ বানিজ্যের প্রমান মিলেছে। এদিকে প্রতিবাদী ব্যক্তিদের মুখ বন্ধ করার জন্য সমাজের বিভিন্ন মহলের প্রভাবশালী কর্তা-ব্যাক্তি সহ সাংবাদিকদেরও এই ট্যাংকি বিতরনের আওতায় এনেছেন। তবে অভিযুক্তরা এই বিষয়গুলো কাল্পনিক দাবি করেছেন। দীর্ঘ সরোজমিন তথ্যানুসন্ধানে, উপজেলার গাবতলা এলাকার রুহুল চাপ্রাশী, বি-ধানসাগর এলাকার আনোয়ার শরীফ, উত্তর তাফালবাড়ী এলাকার ফারুক শরীফ, নজির ঘরামী, শাহাবুদ্দিন এর কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা করে আদায় করেছেন তারা। এই ট্যাংকি বিতরনের আওতায় আসা কোন সুবিধাভোগী সরকার নির্ধারিত ফি দিয়ে নিতে পারেনি। প্রত্যেককে অতিরিক্ত ঘুষ দিয়ে এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে হয়েছে বলে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। তাছাড়া সোনাতলা এলাকার লিলি বেগম এর কাছ থেকে ১০ হাজার মৌজালি হাওলাদার এর কাছ থেকে ৭ হাজার, সাউথখালী এলাকার সান্টু মিয়া ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে এই ট্যাংকি পেয়েছেন। এদিকে গাবতলা এলাকার ' সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, তার কাছে ১০ হাজার টাকা দাবি করায় সে কিছু কম দিতে চাইলে তাকে আর ট্যাংকি দেয়নি রাজিব। উপজেলা জুড়ে এই সকল অনৈতিক কর্মকান্ড অব্যহত রাখতে ওই দপ্তরের দূর্নীতিবাজরা কিছু দালালকেও ব্যাবহার করেছেন এবং দপ্তরে এই সংক্রান্ত বাজেট-বরাদ্ধ আসার অনেক আগেই এলাকাবাসীর কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়েছেন বলে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে। চালিতাবুনিয়া এলাকার চাম্বা রানী আক্ষেপ করে সাংবাদিকদের বলেন, সরকারের সাহায্য য্য (যা) আয় (আসে) হ্যা (সেগুলো) মোরা (আমরা) গরীবরা পাইনা। হক্কল (সকল) লইয়া (নিয়া) যায় ধনীরা। মেম্বার, চেহারমান (চেয়ারম্যান) আর উপজেলাইদ্দা (উপজেলা থেকে) য্যারা (যারা) আয় (আসে) যে বেশী টাহা (টাকা) দেয় হ্যাগো (তাদের) নাম নেয়। আর হ্যারা (তারা) সব পায়। হুনছি (শুনছি) পানির টেঙ্কি (ট্যাংকি) আইছে (আসছে) য্যারা (যারা) বেশী টাহা (টাকা) দেছে হ্যারা (তারা) পাইছে। মোরা (আমরা) কত চেষ্টা হরছি (করছি) টাহা (টাকা) বেশী দেতে (দিতে) পারিনায় আর পাইওনায় (পাইনায়)। এহন (এখন) খাই নুন (লবন) পানি। ইউপি চেয়ারম্যান মাইনুল ইসলাম টিপু ও মোজাম্মেল হোসেন জানান, সরকারী পানির ট্যাংকি বিতরনে সরকারী নীতিমালা মানা হয়নি। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তর ১৫০০ টাকায় ২৫০০ টাকা আদায় করার কথা জানিয়েছেন চেয়ারম্যানরা। কথা হলে শরণখোলা উপজেলা শ্রমিকলীগে'র সভাপতি ও বিপ্লবী নন্দিত জননেতা মেজবাহ উদ্দিন খোকন তালুকদার বলেন, সরকারী নিয়মনীতি অমান্য করে ট্যাংকি গ্রহনকারী প্রত্যেক ব্যক্তির কাছ থেকে ওই দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অতিরিক্ত টাকা গ্রহন করেছেন। এতে সরকারের নানামুখী উন্নয়ন ব্যাহত ও সুনাম চরম ভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে। এই সকল দূর্নীতি বাজদের সমুলে মুলোৎপাটন করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন শরণখোলা উপজেলা শাখার সভাপতি মুতাচ্চিম বিল্লাহ মাশুক জানান, বর্তমান সরকারের আমলে ঘটনাটি অত্যান্ত দুঃখ জনক। সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের তদারকির অভাবে এই সকল অনিয়ম হচ্ছে। তবে সকল ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির ব্যাবস্থা করা হলে কোন অনিয়মেরই পুনরাবৃত্তি ঘটবেনা বলে তিনি মনে করেন। এ ব্যাপারে শরণখোলা উপজেলা দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি'র সভাপতি ও বাগেরহাট জেলা সরকারী পিসি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ্য আব্দুস সাত্তার দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি'র সভাপতি হয়েও রাখেননা কোন দূর্নীতির খবর। বিষয়টিকে তিনি মরার উপরে খাঁড়ার ঘাঁ মন্তব্য করে প্রসাশনের ক্ষতিয়ে দেখে ব্যাবস্থা নেয়া উচিৎ বলে মনে করেন। শরণখোলা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরে এত কিছু ঘটতেছে কিন্তু সেই দপ্তর প্রধান প্রকৌশলী মেহেদী হাসান কিছুই জানেননা বলে জানান। বাগেরহাট জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী
সম্পাদক : মোঃ কবির নেওয়াজ রাজ, E-mail: mkprotidin@gmail.com, Contact: (+88) 01643-565087, 01922-619387; Mailing Address: House# 4/A, Main Road, Ati Model Town, Ati, Keraniganj, Dhaka-1312
© All rights reserved © MKProtidin.Com