উজ্জ্বল রায় জেলা প্রতিনিধিঃ নড়াইলের পল্লীতে সাবেক চেয়ারম্যান বদর খন্দকারকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, হত্যাকান্ডে জড়িত ও পরিকল্পনাকারীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশ শতভাগ নিশ্চিত। তবে মামলায় এজাহারভূক্ত প্রধান আসামীসহ অন্যরা পলাতক থাকায় তথ্য-প্রযুক্তির সর্বচ্চো ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে উজ্জ্বল রায় নড়াইল জেলা প্রতিনিধি জানান, হামলায় ব্যবহৃত তিনটি মটরসাইকেল ইতোমধ্যে উদ্ধার করেছে পুলিশ। হামলায় পাঁচজন সরাসরি জড়িত থাকার তথ্য প্রমান পাওয়া গেছে। হামলাকারী সকলেই নিহত বদর খন্দকারের নিকট আত্মীয় ও কাছের লোক বলে এলাকায় ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। আটক মতিউর রহমান মুন্না বদর খন্দকারকে আব্বা বলে ডাকতেন। ঘটনার সময় মুন্না নিহত বদরের মোটর সাইকেলের পিছনে বসে ছিলেন। হামলার পরিকল্পনা বেশ আগেই তারা ঠিক করেছিল। হামলাকারীদের উদ্দেশ্য ছিল বদরকে হত্যা নয়,পঙ্গু করা। ধারালো অস্ত্রের কোপে তার দুই পায়ের হাটুর নিচে এবং দুই হাতের কব্জি প্রায় বিচ্ছিন্ন করে দেয়। শরীরের অন্য কোথায়ও নেই কোন আঘাতের চিহ্ন। স্থানীয়দের অভিযোগ লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত নবীণ ডাক্তারের সিদ্ধান্তহীনতা এবং বিলম্বে চিকিৎসায় অধিক রক্তক্ষরণে তিনি মারা যায় । পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে হত্যাকান্ডের ২৫ ফেব্রুয়ারী মতিউর রহমান ওরফে মুন্না (৩৫) নামে কালনা গ্রামের এক যুবককে গোপালগঞ্জ শহর থেকে গ্রেফতার করা হয়। সে ওই মামলার এজাহারভুক্ত আসামী। ২৬ ফেব্রুয়ারী চরকালনা গ্রামের রুহল আমিনকে (৫০) গ্রেফতার করা হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি নড়াইলের গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সদস্যরা গ্রেফতার করে চরবগজুড়ি গ্রামের রফিককে (৫০)। গত ৩ মার্চ সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে চরকালনা গ্রামের আলী মিয়া মোল্লাকে (৪৫)। চরবগজুড়ি গ্রামের বাবু মোল্লা (৪৫) কে গত ৪ মার্চ সন্ধ্যায় গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ধানকোড়া গ্রামে তার আত্মীয়র বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরের ৪জন এজাহারভুক্ত আসামী নয়।
আলী মিয়া কালনাঘাটে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল স্ট্যাটার। বদরকে কোপানোর পর হামলাকারীদের পালিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি তিনটি মোটরসাইকেল দিয়ে হামলাকারীদের পালাতে সহযোগিতা করেন। হামলার পরপরই লোহাগড়া ইউনিয়নের সন্ধ্যা বাজার হয়ে মধুমতি নদীর তেতুলিয়া ঘাট পার হয়ে গোপালগঞ্জের ভাটিয়াপাড়া ও ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা হয়ে পালিয়ে যায় তারা। গত ৩ মার্চ রাতে ওই তিনটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, বদর খন্দকার তার ইটভাটা থেকে লোহাগড়া উপজেলা সদরের দিকে রওনা হওয়ার সময়ে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মতিউর রহমান মুন্না বদরের মোটরসাইকেলে ওঠে। হামলার স্থলে মুন্না নেমে যাবেন বলে বদরকে মোটরসাইকেল থামাতে বলেন। মুন্না নেমে যাওয়ার সময়ে মোটরসাইকেল ধাক্কা দিয়ে বদরকে মাটিতে ফেলে দেয়। এরপরই এজাহারভূক্ত অপর আসামীদ্বয়ের দুই থেকে তিনজন তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপায়। ঘটনাস্থল ও আশপাশে ১২-১৩ জন উপস্থিত থেকে এ হামলায় নানাভাবে সহযোগিতা করেন। তিনটি স্তর সাজিয়ে হামলা চালানো হয়। ৪/৫ জন ছিল মূল হামলাকারী। প্রতিপক্ষকে প্রতিহত করতে প্রস্তুত ছিল একটি দল। সড়কে হামলার সময়ে কিছুক্ষণের জন্য যানবাহন ও পথচারীদের চলাচল বন্ধ করে রাখে অপর দলটি। মামলায় ১৬ জন আসামীর মধ্যে সরাসরি হামলায় জড়িত এমন অন্তত ৩/৪ জনকে এজাহারভুক্ত আসামী করা হয়নি। আবার ওই ১৬ জন আসামীর মধ্যে অন্তত ৬/৭ জন হামলায় নূন্যতম জড়িত নয়। হামলায় জড়িত সবাই স্থানীয় ও তার নিকট আত্মীয়। পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে এসেছে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য।
উল্লেখ্য: গত ২৪ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যা ৬টার দিকে ওই ইউনিয়নের টি-চরকালনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে লোহাগড়া-নড়াইল সড়কে বদর খন্দকারকে একদল দুর্বৃত্ত নৃশংসভাবে কুপিয়ে জখম করে পালিয়ে যায়। ওই দিন রাত ৯টার দিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানের চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত বদর খন্দকার লোহাগড়া উপজেলা আ’লীগের সাবেক সদস্য। এ হত্যার ঘটনায় ১৬ জনের নাম উল্লেখসহ আরও অজ্ঞাত ৩-৪ জনকে আসামী করে নিহতের স্ত্রী নাজনীন বেগম গত ২৫ ফেব্রুয়ারী লোহাগড়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার তদন্তকরী কর্মকর্তা লোহাগড়া থানার এসআই মিলটন কুমার দেবদাস বলেন, ‘হামলাকারীদের সম্পর্কে পরিষ্কার হওয়া গেছে। তারা এলাকার বাইরে চলে গেছে। তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। পুলিশের কয়েকটি দল তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছে। গ্রেফতার হওয়া রুহল আমিনকে দু’দিনের পুলিশ রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বাবু মোল্লাকে রিমান্ডে আনতে আদালতে আবেদন দেওয়া হয়েছে।’
নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন পিপিএম (বার) বলেন,‘প্রকৃত অপরাধীদের দ্রুতই গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তবে হত্যার সাথে যারা নূন্যতম জড়িত নয়, তারা হয়রানীর শিকার না হয়, সেদিকেও পুলিশ লক্ষ্য রাখছে।
সম্পাদক : মোঃ কবির নেওয়াজ রাজ, E-mail: mkprotidin@gmail.com, Contact: (+88) 01643-565087, 01922-619387; Mailing Address: House# 4/A, Main Road, Ati Model Town, Ati, Keraniganj, Dhaka-1312
© All rights reserved © MKProtidin.Com