প্রকাশের সময়: ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ০৫:৩৭ অপরাহ্ণ
মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগের খেরোখাতা একজন পিআরও-এর দায়িত্ব ও অভিজ্ঞতার আখ্যান | MkProtidin
Logo
/ সাহিত্য ও সংস্কৃতি
অনির্দিষ্ট
আপডেটঃ ১৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১১:২৬ অপরাহ্ণ
অনলাইন সংস্করণ

মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগের খেরোখাতা একজন পিআরও-এর দায়িত্ব ও অভিজ্ঞতার আখ্যান

মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগের খেরোখাতা  একজন পিআরও-এর দায়িত্ব ও অভিজ্ঞতার আখ্যান
ছবি : সংগৃহীত

শেফায়েত এইচ মেক্সিম।। 

মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বের মঞ্চে একজন পিআরও-এর দিনগুলো কেমন কাটে?

এই খেরোখাতায় সেই প্রশ্নের জবাব নিহিত আছে। এখানে আছে অফিসের গল্প, জনসংযোগের জটিল মুহূর্ত, সাংবাদিকদের সঙ্গে বিশ্বাস ও সম্পর্ক গড়ার প্রয়োজনীয়তা, এবং তথ্যসেবার প্রতিটি চ্যালেঞ্জ।

পাঠক দেখবেন একজন জনসংযোগ কর্মকর্তার দায়িত্ব, অভিজ্ঞতা এবং মানবিক সংযোগের গল্প, যেখানে প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্ত এবং প্রতিটি পদক্ষেপই তুলে ধরে সততা, ধৈর্য ও প্রজ্ঞার মহত্ত্ব। এই বই কেবল তথ্য ও অভিজ্ঞতার দলিল নয়; এটি একজন পিআরও-এর মানবিক সংযোগ, শেখার মুহূর্ত এবং কর্মকৌশলের গল্প, যা মন্ত্রণালয় জীবন ও জনসংযোগের বাস্তব অভিজ্ঞতাকে পাঠকের কাছে উজ্জ্বলভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

একজন পিআরও-এর ভূমিকা ও দায়িত্ব
মন্ত্রণালয়ের একজন পিআরও (পাবলিক রিলেশনস অফিসার) হলেন মন্ত্রণালয়ের তথ্য-প্রচার ও জনসংযোগ ব্যবস্থাপনার প্রধান দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তিনি সরকারের প্রধান তথ্য অফিসারের অধীনে, মিনিস্টারিয়েল পাবলিসিটি শাখার সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে কাজ করেন।

তার দায়িত্ব শুধুমাত্র তথ্য প্রকাশ বা মিডিয়া হ্যান্ডলিং পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়। তিনি মন্ত্রণালয়ের ভাবমূর্তি রক্ষা, জনমত আকর্ষণ, নীতি ও পরিকল্পনার সঠিক উপস্থাপন এবং কার্যক্রমের স্বচ্ছ ও নির্ভুল প্রচারের দায়িত্বে নিয়োজিত। একজন পিআরও হলেন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র, যিনি প্রতিটি তথ্য ও বার্তাকে জনগণ এবং মিডিয়ার কাছে সঠিক ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে পৌঁছে দিতে কাজ করেন।

সংক্ষেপে, পিআরও কেবল তথ্য সম্প্রচারের দায়িত্বশীলই নয়; তিনি মন্ত্রণালয়ের ভাবমূর্তির রক্ষক, জনমত গঠনের পরিচালক এবং তথ্য-প্রচার কার্যক্রমের মূল সুরক্ষাকারী।

১. মন্ত্রণালয়ে পিআরও-এর ভূমিকা
পিআরও মাননীয় উপদেষ্টা, মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে মন্ত্রণালয়ের নীতি, সিদ্ধান্ত ও কার্যক্রম সঠিকভাবে জনগণ ও মিডিয়ার কাছে উপস্থাপন নিশ্চিত করেন। যে মন্ত্রণালয়ে জনসংযোগ যত কার্যকর ও শক্তিশালী, সে মন্ত্রণালয়ের ভাবমূর্তি তত উজ্জ্বল, স্বচ্ছ এবং জনগণের কাছে আরও বিশ্বাসযোগ্য ও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। 

মন্ত্রণালয়ের পিআরও-এর মুখ্য দায়িত্বসমূহ:
• মিডিয়া এবং জনগণের কাছে মন্ত্রণালয়ের অবস্থান, বক্তব্য ও সিদ্ধান্ত পরিষ্কারভাবে উপস্থাপন করা।
• জরুরি বা সংবেদনশীল পরিস্থিতিতে দ্রুত প্রতিক্রিয়া প্রদান করে মন্ত্রণালয়ের ভাবমূর্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
• মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম, নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশের ক্ষেত্রে স্পষ্টতা, নির্ভুলতা ও প্রামাণ্যতা বজায় রাখা।

২. তথ্য যাচাই ও বিশ্লেষণ
• পিআরও মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সব সংবাদ, প্রতিবেদন, প্রকাশনা ও তথ্য সংগ্রহ, যাচাই ও বিশ্লেষণের দায়িত্ব পালন করেন।সংবাদ, প্রতিবেদন ও অন্যান্য তথ্য যাচাই করে ভুল বা অপ্রমাণিত তথ্য চিহ্নিত করা।
• প্রাপ্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে যথাযথ ব্যাখ্যা, সংশোধনী বা তথ্যবিবরণী  তৈরি ও গণমাধ্যমে প্রকাশ করা।
• মন্ত্রণালয়ের  তথ্য সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও প্রকাশের জন্য প্রস্তুত রাখা।
• তথ্যের বিশ্লেষণ করে মন্ত্রণালয়কে কৌশলগত পরামর্শ প্রদান করা।

৩. মিডিয়া সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা
পিআরও-এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো মন্ত্রণালয়ের  মাননীয় উপদেষ্টা/ মন্ত্রী মহোদয়ের মিডিয়া কার্যক্রম পরিচালনা করা। তথ্যবিবরণী তৈরি, সংবাদ বিবৃতি প্রকাশ এবং মিডিয়ার সাথে সমন্বয়, বক্তৃতা ও রিজয়েন্ডার তৈরি।
• মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, প্রকল্প ও নীতি সম্পর্কে মিডিয়ার মাধ্যমে জনগণকে তথ্য সরবরাহ করা।
• মিডিয়া কভারেজের পরিকল্পনা ও সমন্বয় করা এবং সাংবাদিক সম্মেল আয়োজন ও সংবাদ সম্মেলনের টকিং পয়েন্টস তৈরি করা।

৪. জনমত ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়
পিআরও মন্ত্রণালয়ের জনমত ও সামাজিক প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে সমন্বয়কারী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
• সামাজিক প্রতিক্রিয়া, জনমত এবং মিডিয়ায় প্রকাশিত মতামলের বিশ্লেষণ করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণে মন্ত্রণালয়কে সহায়তা করা।
• মন্ত্রণালয়ের নীতি, সিদ্ধান্ত এবং কর্মকাণ্ড জনগণ ও মিডিয়ার কাছে সঠিক ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে পৌঁছে দিতে সমন্বয় করা।
• জনমত ব্যবস্থাপনায় ক্রমাগত নজরদারি করে পরিস্থিতি অনুযায়ী মিডিয়া কৌশল উন্নয়ন করা।

৫. কৌশলগত দায়িত্ব
পিআরও কেবল মিডিয়া পরিচালনায় সীমাবদ্ধ থাকেন না; তিনি মন্ত্রণালয়ের কৌশলগত যোগাযোগ পরিকল্পনা দায়িত্বেও যুক্ত থাকেন।
• সরকারের তথ্যপ্রচার ও মিডিয়া নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণ নিশ্চিত করা।
• গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট বা অনুষ্ঠানের মিডিয়া কভারেজ এবং প্রচারণার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে অংশগ্রহণ করা।
• উচ্চতর কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত আপডেট, বিশ্লেষণ ও রিপোর্ট প্রদান করা।
• মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও প্রকাশনার রেকর্ড সংরক্ষণ করা এবং প্রয়োজন অনুসারে তা ব্যবস্থাপনা করা।
• তথ্য ও জনসংযোগ কৌশল সমন্বয় করে মন্ত্রণালয়ের ভাবমূর্তিকে দৃঢ় এবং বিশ্বাসযোগ্য রাখা।

সুতরাং, একজন পিআরও কেবল একটি পদ নয়—তিনি মন্ত্রণালয়ের চোখ, কান ও কন্ঠ, যার মাধ্যমে সরকারের নীতি ও সেবা জনগণের কাছে পরিষ্কার, গ্রহণযোগ্য ও মানবিকভাবে সংযুক্ত হয়।
মন্ত্রণালয়ের ভেতরে প্রতিদিন চলতে থাকে নানা রকম কার্যক্রম। নতুন নীতি গৃহীত হয়, সেবা পৌঁছানোর পরিকল্পনা তৈরি হয় এবং কখনও কখনও জনমত তৈরির প্রয়োজন হয়। এই পুরো মঞ্চের নেপথ্যে দাঁড়িয়ে থাকেন একজন মানুষ—যাকে কেউ হয়তো পিআরও বলে জানে।
সকালে,  উপদেষ্টা/ মন্ত্রীর কক্ষে ঢুকতে ঢুকতেই তার হাতে থাকে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি রিপোর্ট, যা সরকারের ভাবমূতি প্রভাবিত করবে। চোখে চোখ রেখে তিনি বললেন, "সার, এই তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছালে আমরা ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে পারি।" এখানেই তিনি চোখের মতো, যা সব দেখেন, সব পর্যবেক্ষণ করেন।

পরবর্তী মুহূর্তে মনোযোগ দিলেন দরজার বাইরে—সেখানে সাংবাদিকদের অপেক্ষা, জটিল  প্রশ্ন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কমেন্ট। একজন পিআরও-এর কান সব শোনে, প্রাসঙ্গিক তথ্য বাছাই করে এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সরাসরি মন্ত্রীর নজরে আনে।
তারপর আসে কন্ঠের পালা। মন্ত্রীর বক্তব্যের খসড়া তৈরি করা, সংবাদ বিজ্ঞপ্তি লেখা, মিডিয়া ব্রিফিং সাজানো—এগুলো তার কাজ। তার ভাষায় থাকে স্পষ্টতা, মানবিকতা এবং গ্রহণযোগ্যতা, যা মন্ত্রণালয়ের ভাবনা, নীতি ও লক্ষ্যকে জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়।

কিন্তু এটুকুই যথেষ্ট নয়। তিনি চেষ্টা করেন মন্ত্রণালয় ও জনগণের মধ্যে একটি উত্তম সংযোগের সেতু তৈরি করতে। নাগরিকের অভিযোগ, অনুরোধ বা প্রশংসা—সবকিছুর মূল্য তিনি জানেন। নিশ্চিত করেন, সরকারি সিদ্ধান্ত শুধু কার্যকর নয়, মানুষের জীবন ও অনুভূতির সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে সংযুক্ত।

একজন পিআরও-এর কাজ কল্পনাপ্রবণ নয়। তিনি মন্ত্রণালয়ের চোখ, যা সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে; কান, যা মানুষের কণ্ঠ শোনে; এবং কন্ঠ, যা বার্তা পৌঁছে দেয়। তার ধৈর্য, তীক্ষ্ণ নজর এবং মানবিক বোধ মন্ত্রণালয়কে সচল রাখে, সঙ্গে মানুষের হৃদয়ে একটি দৃঢ় সেতুবন্ধন গড়ে তোলে।

-চলবে-

সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ কবির নেওয়াজ রাজ | ভারপ্রাপ্ত প্রধান (অনলাইন) : মোঃ কবির নেওয়াজ রাজ
অফিস : ৪/এ, আটি মডেল সোসাইটি, আটি, কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১২
ইমেইল: mkprotidin@gmail.com | ফোন : (+880) 1643-565087 , (+880) 1922-619387