মানুষ হতে হলে সবার আগে চাই মনুষ্যত্ব। যে মনুষ্যত্বকে প্রতি মুহূর্তে কর্ষণ করতে হয়। কেউ হয়তো একটু কম ভালো মানুষ কেউ বেশি ভালো। যদিও এই শ্রেণির সবাই মানুষ। অমানুষ তারা যাদের মনুষ্যত্বই নেই। প্রশ্ন জাগে, মানুষের প্রধান সম্পদ যে মনুষ্যত্ব সেই মনুষ্যত্বকে নিজের মধ্যে ফিরিয়ে আনতে সবার আগে কোন্ কাজটি করা জরুরি? এক কথায় উত্তর দিলে উত্তর হবে পারিবারিক পরিমণ্ডল থেকেই শুদ্ধি অভিযান চালানো। ভারী ভারী পাঠ্যপুস্তক পড়ে কাঁড়ি কাঁড়ি জিপিএ ফাইভ পেয়ে কি লাভ যদি মানুষই না হলাম।তবে সবচেয়ে বড় কথা আমাদের হাত-পা ওয়ালাদের মধ্যেই আমরা কেউ মানুষ আবার কেউ অমানুষ।
মানুষের প্রতি মানুষের সহমর্মিতা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। প্রেম-ভালোবাসা ও দয়া-মায়া, শ্রদ্ধাবোধ ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের মধ্যে থেকে। আমরা কিন্তু মানবীয় গুণাবলি হারিয়ে ক্রমেই মানুষ হিসেবে নয়, ক্রমেই অমানুষ হয়ে হিংস্র প্রাণীর মতো নিষ্ঠুর আচরণ করছি। এমন কেন হচ্ছে? আমরা যত শিক্ষিত হচ্ছি আমাদের মধ্যে মানবতাবোধ যেখানে বৃদ্ধি পাওয়ার কথা সেখানে মানবতাবোধ প্রতিনিয়ত কমে যাচ্ছে। কিন্তু কেন? শিক্ষিত মানুষের মধ্যে মানবীয় গুণাবলি আরও বেশি থাকার কথা, তা কিন্তু এখন আর দেখা তেমন দেখা যাচ্ছে না।
নিজেদের প্রাপ্তির জন্য আমরা সবাই আত্মকেন্দ্রিক হয়ে কাজ করছি। সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত আছি। দেশ, সমাজ, পরিবার, সন্তানকে নিয়ে ভাবছি আমরা? আর কত সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয় প্রয়োজন আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য? আর কতদিন অপেক্ষা প্রয়োজন হবে নিজেদের একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য? সন্তানদের আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য? এ প্রশ্ন কার কাছে রাখব? সমাজের কাছে রাখব? রাষ্ট্রের কাছে চাইব? সমাজের অধিবাসীদের কাছে চাইব? সরকারের কাছে চাইব? সবাই নিজেকে নিয়েই শুধু ব্যস্ত রয়েছি, শুধু ভাবছি নিজেকে নিয়ে। সুন্দর একটি দেশ, সমাজ বিনির্মাণের কথা কখনো ভাবি না আমরা।
আমরা আমাদের অর্জনকে ধরে রাখতে পারি না। শিক্ষক ক্লাসে পড়ানোর চেয়ে ব্যস্ত থাকেন তার কোচিং সেন্টার নিয়ে, এই ছাত্ররা যে আমাদের ভবিষ্যতের হাল ধরবে তাদের সেভাবে তৈরি করতে হবে, তা নিয়ে ভাবার সময় কি আছে?
ভালো-মন্দের বিচার ক্ষমতা দ্বারা যে বিবেক নির্ধারিত হয় সে ব্যাপারে সবাই একই বিন্দুতে থাকবেন নিঃসন্দেহে তা বলা সম্ভব। ভিন্ন বিন্দুতে থাকবেন ভালো-মন্দ আলাদা করা নিয়ে অর্থাৎ কোনোটা ভালো ও কোনোটা মন্দ সেটি নির্ধারণে ভিন্ন ভিন্ন মত থাকবে। এ ভিন্নতা হতে পারে ব্যক্তি, সমাজ, এলাকা, সময়, ঘটনা ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে। বিবেকের কাজ হলো কোনো কিছুর ভালো-মন্দ, সুবিধা-অসুবিধা, সক্ষমতা-অক্ষমতা, নীতির কাছে সঁপে দিয়ে বর্তমানকে ভিত্তি ধরে ভবিষ্যৎ ভাবনাকে বিচার করে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে মানবসত্তাকে সহযোগিতা করা, কিন্তু আসল সিদ্ধান্তে আসতে হবে সত্তা নিজেকেই।আমি বিখ্যাত হতে চাইনা,আমি মানুষ হতে চাই ।
লেখকঃ কবির নেওয়াজ রাজ।
এমএসএস"রাষ্ট্রবিজ্ঞান,সিসি"জার্নালিজম,এলএলবি।
ই-মেইলঃ kabirnewazraz@gmail.com