বসুন্ধরা সিনেপ্লেক্সের আধুনিক লিফট! ছুটির দিন না,কোন উৎসব পরব না অথচ লিফটে ঠাসাঠাসি ভীড়! পারফিউম, ঘাম, সিগারেটের গন্ধ মিলেমিশে এক বিদঘুটে গন্ধ! একেকজন এর হাতের শপিং ব্যাগের ধাক্কায় সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মুশকিল!!
লিফটের দেয়ালে মনিটর সেট করা ।
সেখানে একজন জ্যোতিষি ও হস্তরেখা বিশারদের কেরামতির এ্যাডভারটাইজ চলছে ! একজন সুন্দরী সুদেহী ভারতীয় মডেল জানাচ্ছেন, কিভাবে এই হস্তরেখা বিশারদের দেয়া পাথর ধারন করায় তাঁর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ হীরের চেয়েও চকচকে হয়ে গেছে!
আমি জীবনে যতবার এই লিফটে উঠেছি ততবারই এই এ্যাডটা দেখেছি । ভারতীয় মডেল বাংলাদেশে এসে হাত দেখিয়ে ভাগ্য ফিরিয়েছেন ! বাংলাদেশের পদ্মার ইলিশ , বাংলাদেশের জয়া আহসান এর পর এই জ্যোতিষিই মনে হয় তৃতীয় যার প্রতি ভারতীয়দের উথালপাতাল আকর্ষণ! একারনেই,প্রতিবার খানিকটা কৌতূহল বোধ করেছি কিন্তু লিফট থেকে বের হবার পরই ব্যপারটা মাথা থেকে চলে গেছে !
এইবার এই কৌতূহলটা মাসুমা আপাকে কথাচছলে জানাতেই সে আমাকে একরকম জোর করেই ভদ্রলোকের চেম্বারে নিয়ে গেল! এই লোক নাকি মাসুমা আপার অতি পরিচিত! আমি যতই ছুটতে চাই - মাসুমা আপা নাছোড়বান্দা!
জানতাম, ডাক্তার এবং উকিলের চেম্বার হয় - আজ জানলাম হস্তরেখা বিশারদেরও চেম্বার হয় !
চেম্বারের সামনে রোগীর সিরিয়াল দেবার মতো দর্শন প্রার্থীদের সিরিয়াল দেয়া হচ্ছে!
কক্ষে ধূপ বা আগরবাতি আর আতরের অচেনা ঘ্রাণ! বিশাল এক কারুকাজ করা পাথর খচিত সিংহাসন ! সেখানে জ্যোতিষি ভদ্রলোক বসে আছেন !
আমার একটা অকারন আবাল টাইপ ধারনা ছিলো তারা বুঝি আলখেললা বা জোব্বা জাতীয় পোশাক পরেন, রবীন্দ্রনাথের মতো আবক্ষ দাড়ি থাকে !
কিন্তু উনি দেখলাম প্রেসিডেন্ট এরশাদের মতো সাফারি স্যুট পরে আছেন ! অর্থ নিমীলিত চোখ! ক্লিন শেভ! দাড়ি তো দূর- গোফও নেই! মুখের চামড়া দেখে মনে হয ভদ্রলোক দামী কোন বিউটি সেলুন থেকে নিয়মিত ফেসিয়াল করান।
নিজেও পাথরের আংটি ও ব্রেসলেট পরে আছেন ! চারপাশের দেয়ালে বাংলাদেশের বিখ্যাত ব্যক্তিদের ছবি যারা দুহাত মেলে ধরে উনার সামনে বসে আছেন !
তাদের মধ্যে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, চলচ্চিত্র অভিনেতা অভিনেত্রীর ছবিই বেশি ! সকল মানুষের মধ্যে এই দুই ধরনের মানুষের ভাগ্যই বোধহয় সর্বাপেক্ষা অনিশ্চিত!!!
তারচেয়েও বড় কথা, তাদের পাথর কেনার সামর্থ্যও আছে! ধনীরা পাথর কিনে ভাগ্য বদলায়, দরিদ্ররা পাথর কেটে!
বড় বড় ট্রফি আর মেডেলও রয়েছে - বুঝলাম না , জ্যোতিষিদের মধ্যে কি কোন প্রতিযোগিতা চালু আছে ????কারও ভাগ্য সবচেয়ে সঠিক বলতে পারলে মেডেল পরিয়ে দেয়া হয় ?
সকল দর্শনার্থী তেলতেলে মুখে আবিষ্ট চোখে বসে আছেন! আমি যথেষ্ট অস্বস্তি বোধ করছি- জীবনে অনেক ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়েছি কিন্তু কখনও ভবিষ্যত জানার আগ্রহ বোধ করিনি!
হস্তরেখা বিষারদের নাম লিটন দেওয়ান
(চলবে)
লেখক : ডাঃ সাবরিনা মিষ্টি।