বিশেষ প্রতিবেদন

সংখ্যায় বাড়ছে সাংবাদিক সংগঠন, কমছে সাংবাদিকের স্বার্থরক্ষা

সংখ্যায় বাড়ছে সাংবাদিক সংগঠন, কমছে সাংবাদিকের স্বার্থরক্ষা

 

শফিকুল ইসলাম শফিক।।

দেশজুড়ে নতুন নতুন সাংবাদিক সংগঠন গড়ে উঠলেও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা, ন্যায্য পারিশ্রমিক ও আইনি সহায়তা এখনো অনিশ্চিত

লেখক: মোঃ আঃ মান্নান 
বাংলাদেশে বর্তমানে সক্রিয় সাংবাদিক সংগঠনের সংখ্যা কয়েক শতাধিক। জাতীয় পর্যায় থেকে শুরু করে উপজেলা, এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়েও একাধিক সংগঠন গড়ে উঠছে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—সংখ্যা বাড়লেও সাংবাদিকদের প্রকৃত সমস্যার সমাধান কতটুকু হচ্ছে?

সাম্প্রতিক জরিপ অনুযায়ী, দেশে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৫০০-এরও বেশি সাংবাদিক সংগঠন রয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় পর্যায়ে ১০-১২টি বড় সংগঠন সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। তবে স্থানীয় পর্যায়ে অনেক সংগঠন কাগুজে বা অকার্যকর অবস্থায় আছে।
জাতীয় সংগঠন: বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ), জাতীয় প্রেসক্লাব ইত্যাদি।
স্থানীয় সংগঠন: জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে একাধিক প্রেসক্লাব ও রিপোর্টার্স ইউনিটি।
বিভাগীয় সংগঠন: বিভাগভিত্তিক আঞ্চলিক সংগঠন যেগুলো কেন্দ্র ও স্থানীয় ইউনিটের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে।

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে যেসব সমস্যা উঠে এসেছে—
নিরাপত্তাহীনতা ও হামলা: ২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, দেশে অন্তত ১৫০ জন সাংবাদিক হামলা, হুমকি বা মামলার শিকার হয়েছেন।
ন্যায্য পারিশ্রমিকের অভাব: অনেক সাংবাদিক বিনা বেতনে বা সম্মানীর বিনিময়ে কাজ করেন, যা পেশাটিকে অস্থির করে তুলছে।
আইনি সহায়তার ঘাটতি: সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সংগঠন থেকে পর্যাপ্ত আইনি সহায়তা পাওয়া যায় না।
পেশাগত প্রশিক্ষণের অভাব: ডেটা জার্নালিজম, ডিজিটাল সেফটি, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা—এসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ খুবই সীমিত।

গবেষণায় দেখা গেছে—
৬৫% সাংবাদিক মনে করেন তাদের সংগঠন কেবলমাত্র আনুষ্ঠানিকতা পালন করে (সভা, সমাবেশ, স্মারক প্রদান)।
২০% সাংবাদিক বলেন সংগঠন ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার হয়, যেমন রাজনৈতিক সংযোগ বাড়ানো বা প্রভাব বিস্তার।
মাত্র ১৫% সাংবাদিক মনে করেন তাদের সংগঠন বাস্তব সমস্যায় পাশে থাকে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
গণমাধ্যম বিশ্লেষক ড. ফরিদুজ্জামান বলেন, সংগঠনের সংখ্যা যতই বাড়ুক, যদি সেটি সাংবাদিকদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ, ন্যায্য বেতন বা আইনি সহায়তা নিশ্চিত করতে না পারে তবে এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন থাকবেই।

অন্যদিকে প্রবীণ সাংবাদিক মিজানুর রহমানের মতে, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা বিভক্তি। যদি সাংবাদিকরা এক কণ্ঠে কথা বলতে পারত, তাহলে তাদের অধিকার আদায় সহজ হতো।

গবেষকরা কিছু সুপারিশ দিয়েছেন—একীভূত প্ল্যাটফর্ম: ছোট ছোট সংগঠনকে এক ছাতার নিচে এনে শক্তিশালী কেন্দ্র গঠন করা।
আইনি তহবিল: সাংবাদিকদের মামলার জন্য আলাদা ফান্ড তৈরি করা।
প্রশিক্ষণ কর্মসূচি: ডিজিটাল সেফটি, অনুসন্ধানী রিপোর্টিং, ফ্যাক্ট-চেকিংয়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণ।
চাকরির ন্যূনতম শর্ত: সাংবাদিকদের জন্য ন্যূনতম বেতন কাঠামো ও চাকরির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
শেষ কথা 
সাংবাদিক সংগঠনগুলোর সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু তাদের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন আরও জোরালো হচ্ছে। সাংবাদিকদের প্রকৃত সমস্যা—নিরাপত্তা, বেতন, আইনি সহায়তা—সমাধান না হলে এই পেশার প্রতি নতুন প্রজন্মের আগ্রহ কমে যাবে। সময় এসেছে সংগঠনগুলোর নিজেদের ভূমিকা নতুনভাবে ভাবার, সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কার্যকর পরিকল্পনা নেয়ার।